Advertisement
E-Paper

বাবুলের প্রশস্তি নিয়ে রূপার কটাক্ষ

ভেতরের দ্বন্দ্বটা আর চেপে রাখা গেল না। বাইরে এনে ফেললেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভাই বাবুল সুপ্রিয়র যুগলবন্দির মাঝে হঠাৎই বেসুরো বাজলেন বিজেপির এই অভিনেত্রী-নেত্রী। বাবুলের মমতা-স্তূতিকে তাঁর ‘ব্যক্তিগত মত’ বলে মন্তব্য করে কার্যত রূপার পাশেই দাঁড়ালেন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৫ ০৩:৩২
বাগুইআটির দলীয় সভায় রূপা। শনিবার। ছবি: দেবাশিস রায়।

বাগুইআটির দলীয় সভায় রূপা। শনিবার। ছবি: দেবাশিস রায়।

ভেতরের দ্বন্দ্বটা আর চেপে রাখা গেল না। বাইরে এনে ফেললেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভাই বাবুল সুপ্রিয়র যুগলবন্দির মাঝে হঠাৎই বেসুরো বাজলেন বিজেপির এই অভিনেত্রী-নেত্রী। বাবুলের মমতা-স্তূতিকে তাঁর ‘ব্যক্তিগত মত’ বলে মন্তব্য করে কার্যত রূপার পাশেই দাঁড়ালেন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। যার নিট ফল, দিল্লিতে দোস্তি আর রাজ্যে কুস্তি— তৃণমূল ও বিজেপির এই নয়া সমীকরণ ঘিরে রাজ্য বিজেপির অন্দরের অস্বস্তিটা পরিণত হল প্রকাশ্য তরজায়।

জমি তৈরি হয়েছিল ভিক্টোরিয়ার সামনে। সপ্তাহখানেক আগে। গত শনিবার নজরুল মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সভা সেরে রাজভবন যাওয়ার সময় বাবুলকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়েছিলেন মমতা। পথে ভেলপুরিও খাইয়েছিলেন। এর পরে শুক্রবার রাজারহাটে কোল ইন্ডিয়ার এক অনুষ্ঠানে মমতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বাবুল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক মঞ্চে থেকে তিনি আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্বের নয়া ব্যাখ্যা দেন। বলেন, ‘‘এক দিকে ই যদি এনার্জি হয় এবং অন্য দিকে সি আলোর গতিবেগের বদলে কোল বা কয়লা (বা জ্বালানি), তা হলে মাঝে হলেন মমতা দিদি।’’ বাবুল বোঝাতে চান, কেন্দ্রের প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্যের সাহায্য লাগে। কিন্তু লোকসভা ভোটের সময় থেকে যিনি বার বার তৃণমূল নেতৃত্ব ও রাজ্য সরকারের নানা আক্রমণ হজম করেছেন, এমনকী অস্ত্র আইনে মামলাও হয়েছে যাঁর বিরুদ্ধে— সেই বাবুলের সঙ্গেই তৃণমূল নেত্রীর এই সাম্প্রতিক সৌহার্দ্যে রাজ্য বিজেপির অস্বস্তি হওয়া স্বাভাবিক। বামেরা এতে তৃণমূল-বিজেপি গোপন আঁতাঁতের অভিযোগ তুলতে শুরু করার পরেও রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ চেপেচুপেই ছিলেন। কিন্তু হাড়ি ভাঙলেন রূপা। শনিবার বাগুইআটির সাহা পাড়ায় দলীয় সভায় তিনি বললেন, ‘‘বাবুল আমার বন্ধু হলেও তাঁর সব কথার সঙ্গে আমি সহমত নই।’’ রূপা মানছেন, মন্ত্রী হলে ভাল ভাল কথা বলতে হয়। কিন্তু রাজ্য বিজেপি-র কর্মীরা যে তৃণমূলের হাতে মার খাচ্ছেন, বাবুলের তা অজানা নয়। রূপার তাই অভিযোগ, ‘‘আমরা সত্যিই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে বড় দুঃখে এবং বড় অসম্মানের সঙ্গে বেঁচে আছি। বাবুল আমার বন্ধু। তাঁকে আমি বলতে পারি, তিনি যখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক গাড়িতে যান এবং ঝালমুড়ি খান, তখন তো একটু বলতে পারেন, উনি আমাদের কেন এত মারছেন?’’

রূপার কটাক্ষের জবাবে বাবুল অবশ্য বলেছেন, ‘‘মাঠের লড়াই আমি মাঠে লড়েছি। কিন্তু আমাদের কর্মীরা এত ঠুনকো নন যে, তাঁদের জন্য আমাকে দয়া ভিক্ষা করতে হবে।’’

বাবুলের ব্যাখ্যা, রাজনীতির ময়দান ও সরকারি মঞ্চকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে উন্নয়ন করা তাঁর দায়িত্ব। সেই কাজে তিনি রাজনৈতিক শত্রুতার প্রভাব পড়তে দেন না সচেতন ভাবেই। এবং সে কারণেই তিনি আসানসোলের ইএসআই হাসপাতাল সম্প্রসারণ, কুলটির জলপ্রকল্প, মেট্রো রেল এবং বিধাননগরের দত্তাবাদ এলাকার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে বহু বার মুখ্যমন্ত্রীর ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ চেয়েছিলেন। কিন্তু পাননি। তাই এ বার সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের সুযোগটাকে তিনি ওই বহু প্রতীক্ষিত ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ হিসেবে দেখেছিলেন এবং সেই মতোই কথাবার্তা বলেছিলেন। বাবুলের কথায়, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্য সরকারের সাহায্য ছাড়া কোনও উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। রূপা আমার বন্ধু। তিনি আমাকেও ফোন করেছিলেন। আমার বক্তব্য তাঁকে জানিয়েছি।’’

রূপা তাতে সন্তুষ্ট হয়েছেন কি না স্পষ্ট না হলেও ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের আগে বাবুলের এমন মমতা-প্রশস্তি তাদের অসুবিধায় ফেলবে বলেই মনে করছে রাজ্য বিজেপির একাংশ। তাঁদের সেই মনোভাবই প্রকাশ্যে এসেছে এই তরজায়। বিতর্কে ঘি ঢালার কাজটি করেছেন দলের রাজ্য সভাপতি। রূপার মন্তব্য প্রসঙ্গে রাহুলবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি এ নিয়ে কিছু বলব না। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে বাবুল সুপ্রিয় যা বলেছেন, সেটা ওঁর মত। দলের বক্তব্য নয়।’’ বাবুলের অবশ্য দাবি, ‘‘আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই, এটাই দলের বক্তব্য। রাহুল সিংহ ‘ই ইক্যুয়ালস টু এম সি স্কোয়ার’টা বুঝতে পারেননি। আমি ফোনে তাঁকে আলাদা করে বুঝিয়ে দেব।’’

গোষ্ঠী রাজনীতিতে রাহুলবাবু বাবুল-বিরোধী হিসেবেই পরিচিত। বিজেপি সূত্রের খবর, রাহুলবাবুর পরামর্শেই রূপা এ দিন প্রকাশ্যে বাবুলকে কটাক্ষ করেছেন। গোটা পর্বে স্বস্তিতে নেই বাবুল। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বাবুল সতর্কবার্তা, ‘‘অন্তর্দ্বন্দ্বই যে কোনও দলকে শেষ করে। আমি বিজেপিকে তা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করব। যদিও আমি বিশ্বাস করি না, রাহুলদা এটা করেছেন।’’

সংসদে বিশেষ করে রাজ্যসভায় তৃণমূলের সমর্থন পেতে মরিয়া নরেন্দ্র মোদীরা। যে কারণে সারদা-তদন্তেও ঢিলে পড়ছে বলে অভিযোগ বাম-কংগ্রেসের। ভোটের মুখে তৃণমূলকে এ ভাবে জমি ছাড়া নিয়ে রাজ্য বিজেপির অস্বস্তির কথা দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও মোদী কিন্তু জানিয়ে দিয়েছেন সরকারি স্তরে সৌজন্য থাকলেও জমির লড়াইয়ে ঢিলে দেবে না দল। কংগ্রেস ও বাম নেতাদের একাংশ মনে করছেন, বাবুলের মমতা-স্তূতি আর রূপার কটাক্ষে বিজেপির দ্বিচারিতা তথা দুমুখো রণকৌশলেরই অঙ্গ। সবটাই ‘গট-আপ’ ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন বাম নেতারা।

abpnewsletters Roopa Gangopadhyay Babul Supriyo Mamata bandopadhyay trinamool tmc bjp piyush goyal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy