Advertisement
০৫ মে ২০২৪

রাজ্যসভায় শপথ, লকেটের অপমানে ক্রুদ্ধ রূপা

রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদ হিসাবে শুক্রবার শপথ নিলেন বিজেপি নেত্রী তথা অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। নেওয়ার কথাই ছিল। ফলে এই তথ্যটুকুতে কোনও বিস্ময়ের অবকাশ নেই। কিন্তু রাজ্য বিজেপি-র দফতরে অনেকেই অবাক, কারণ, এই সুসময়েও বিষম রেগে রয়েছেন রূপা! কীসের রাগ?

শপথ নিচ্ছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

শপথ নিচ্ছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

রোশনী মুখোপাধ্যায় ও দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৬
Share: Save:

রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদ হিসাবে শুক্রবার শপথ নিলেন বিজেপি নেত্রী তথা অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। নেওয়ার কথাই ছিল। ফলে এই তথ্যটুকুতে কোনও বিস্ময়ের অবকাশ নেই। কিন্তু রাজ্য বিজেপি-র দফতরে অনেকেই অবাক, কারণ, এই সুসময়েও বিষম রেগে রয়েছেন রূপা! কীসের রাগ?

বর্তমানে রাজ্য বিজেপি-র মহিলা মোর্চার সভানেত্রী রূপা। কিন্তু তিনি রাজ্যসভায় মনোনীত হতেই দলের মধ্যেই ছোট-বড় বহু নেতা ঘরোয়া আলোচনায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন, মোর্চার পরবর্তী সভানেত্রী হবেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। রূপা রেগেছেন তাতেই! এমন জল্পনা উস্কে দিয়ে কেন ‘অপমান’ করা হবে লকেটকে! মনে মনে সেই রাগ পুষে না রেখে তিনি তা প্রকাশও করেছেন মহিলা মোর্চার নিজস্ব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে!

মুরলীধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপি দফতরে রূপার এই রাগই গত দু’দিন ধরে অন্যতম চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। ওই রাগের কথা তুলে রাজ্য বিজেপি-র কেউ মুচকি হাসছেন। কেউ কেউ আবার ওই রাগের প্রতি অনুরাগ ব্যক্ত করছেন।

ঘটনার সূত্রপাত সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্ট থেকে। রূপা রাজ্যসভার সাংসদ হয়ে যাওয়ার পর তিনি আর মহিলা মোর্চার সভানেত্রী থাকবেন কি না, তা নিয়ে দলে জল্পনা শুরু হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে অরুণ দেবনাথ নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন, ‘রাজ্য মহিলা মোর্চার নতুন সভানেত্রী হলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়’। ওই পোস্টটি কপি করে মোর্চার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পোস্ট করেন ববিতা জৈন নামে মোর্চার এক সদস্য। এমন ভিত্তিহীন খবর রটানো নিয়ে গ্রুপে তর্কাতর্কিও হয় বিস্তর। এর পরই রঙ্গভূমে অবতীর্ণ হন স্বয়ং রূপা। তিনি ওই গ্রুপে লেখেন, ‘এই অরুণ দেবনাথ কে, খুঁজে বের করুন। এটা কি সত্যি নাকি জাল অ্যাকাউন্ট’?

তিনি আরও লেখেন, ‘‘এটা কিন্তু আমাদের দুর্বলতাকেই প্রকট করল যে, বঙ্গ বিজেপি একটা পদ নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু ভুলে যাবেন না, আমি বঙ্গ বিজেপি-র কোর টিমের সদস্যদের এক জন। আমি সব জানতে পেরে যাব।’’

এখানেই না থেমে রূপা লেখেন, ‘‘আমাদের ওই রাজ্য সম্পাদকের নাম এর মধ্যে টেনে এনে কেউ কেউ তাঁকে অপমান করার চেষ্টা করছে। চিন্তা করবেন না, যে সম্মান আমাকে দেওয়া হয়েছে, তা কেবল আমার লাভের জন্যই নয়। মহিলা মোর্চার প্রতিটি সদস্যের ক্ষমতা বাড়ানোও এর উদ্দেশ্য।’’ নাম না করে ‘রাজ্য সম্পাদক’ বলে রূপা যে লকেটের কথাই বোঝাতে চেয়েছেন, তা নিয়ে বিজেপি-তে কারও সংশয় নেই।

রাজ্য বিজেপি-র একাংশের বক্তব্য, রূপা বেশ কিছু দিন আগেই আঁচ করেছিলেন, দল তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠাতে পারে। তখন থেকেই তিনি মহিলা মোর্চার সভানেত্রীর পদ ছাড়ার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত হচ্ছিলেন। সে কারণেই পরবর্তী সভানেত্রী হিসাবে মোর্চার সদস্যদের পছন্দের নাম বন্ধ খামে জমা দিতে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু রাজ্যসভার সাংসদ হয়ে যাওয়ার পর রূপা বার বারই দলের অন্দরে বার্তা দিচ্ছেন, তিনি মহিলা মোর্চার পদ ছাড়তে চান না। বিজেপি সূত্রের খবর, দলের অনেককে তিনি এ-ও বলেছেন, মহিলা মোর্চার পদে থেকে যাওয়ার শর্তেই তিনি রাজ্যসভার সাংসদ পদ গ্রহণে রাজি হয়েছেন। রাজ্য বিজেপি-র এক নেতার মন্তব্য, ‘‘এই পরিস্থিতিতে মহিলা মোর্চার পরবর্তী সভানেত্রী হিসাবে লকেটের নাম নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে বলেই কারও কারও ইদানীং গুস্সা হচ্ছে।’’

রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদ হওয়ার পরেও দলের পদে থাকার দৃষ্টান্ত অবশ্য বিজেপি-র ইতিহাসে আছে। হেমা মালিনী রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদ হয়েও বিজেপি-র সহ সভাপতি ছিলেন। চন্দন মিত্র রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদ হয়েও দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য ছিলেন। রূপার ক্ষেত্রে সেই দৃষ্টান্তই মানা হবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য বিজেপি-তে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, রূপা মহিলা মোর্চার সভানেত্রী থাকতেও পারেন, না-ও পারেন।

কিন্তু যাঁর অসম্মানের কথা ভেবে রূপার এই রাগ, তিনি এই বিষয়ের মধ্যে ঢুকতেই চাননি। লকেটেকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি এই বিতর্কটা নিয়ে ভাবছিই না।’’ আর রূপা এ দিন দিল্লিতে সাফ ঘোষণা করেন, ‘‘মহিলা মোর্চার দায়িত্ব খোয়ানোর প্রশ্নই উঠছে না। সেটাকে আরও শক্তিশালী করতেই রাজ্যসভার সাংসদ পদ একটা বাড়তি দায়িত্ব।’’

রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে নভজ্যোৎ সিংহ সিধুর ইস্তফার পর ওই পদ পাওয়ার জন্য আবেদনের ভিড় কম ছিল না। সকলকে টপকে সেখানে পৌঁছে যাওয়ার রসায়নটা কী?

রূপার কথায়, ‘‘আমার গুণ কী, জানেন? আমি অনুগত। আজ পর্যন্ত কেন্দ্র বা রাজ্য নেতাদের থেকে নিজের জন্য কিছু চাইনি। অনেকে ঈর্ষা করেন, শুনেছি। কিন্তু যৌথ পরিবারে বড় হওয়ার সুবাদে আমার অভিধানে ঈর্ষা শব্দটা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Roopa Ganguly BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE