Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
State

বাজি ফাটানোর সময় কী কী অতি অবশ্যই মনে রাখবেন

আলোর উৎসব দীপাবলিতে বাতাসে দূষণের মাত্রা প্রচণ্ড বেড়ে যায়। চকোলেট বোমার সঙ্গে সঙ্গে হাওয়াই, চরকি, তুবড়ি, রং মশালের মতো আলোর বাজি থেকেও শ্বাসকষ্ট আর চোখের সমস্যা হতে পারে।পাশাপাশি ব্লাড প্রেশার বেড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই বাজি পোড়ানোর সময় কিছু সাবধানতা নিতে বললেন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ নন্দিনী রায় ও চেষ্ট ফিজিশিয়ান সুস্মিতা রায়চৌধুরী।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৬ ২০:৪৭
Share: Save:

শব্দবাজির বিরুদ্ধে অনেক শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এখন সরব। তাই আশা করা যায় এ বারের কালীপুজোয় শব্দ দানবের দাপট কিছুটা কমবে। কিন্তু আলোর বাজিও মোটেই নিরাপদ নয়। বিশেষ করে, যাদের বারে বারে সর্দিকাশি হয় বা অ্যালার্জির প্রবণতা আছে তাদের জন্যে আলোর বাজির ধোঁয়া অত্যন্ত ক্ষতিকর। বাজির ধোঁয়ায় থাকা বিভিন্ন রাসায়ানিক থেকে চোখের সমস্যা হওয়ার প্রবণতা খুব বেশি। শিশু থেকে বয়স্ক সকলের চোখেই ধোঁয়ার সংস্পর্শে অল্প বিস্তর অ্যালার্জি হয়। শব্দ বাজিই হোক বা আলোর বাজি, এদের উপাদান মোটেই পরিবেশের জন্যে ভাল নয়। আর আমাদের জন্যে তো নয়ই। এর ধোঁয়ায় থাকে সালফার ডাই- অক্সাইড, বেরিয়ামের অক্সাইড, নাইট্রেট, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যাডমিয়াম সহ বিভিন্ন ভারী বিষাক্ত যৌগ, যা মানুষ সহ সমস্ত প্রাণীদেহের ওপর বিষক্রিয়া করে। আমাদের চোখ অত্যন্ত সংবেদনশীল তাই সহজেই তার ওপর এর প্রভাব পড়ে। এমনিতেই কালীপুজোর রাতে বাতাসে দূষণের মাত্রা বহু গুণ বেড়ে যায়। এর ওপর নিজেরা বাজি ফাটাতে গেলে বিশেষ কিছু সাবধানতা অবলম্বন না করলে সমস্যা বাড়বে। বাজি পোড়ানোর সময় কম-বেশি প্রায় সকলেরই চোখ জ্বালা করে। বাতাসে ভেসে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক চোখের জলের লিপিড লেয়ারকে নষ্ট করে দেয় বলে চোখ জ্বালা করে ও চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়ে। আসলে লিপিড লেয়ার নষ্ট হয়ে গেলে চোখের জল দ্রুত শুকিয়ে যায়। এই সময়ে ড্রাই আইয়ের জন্যে যে কৃত্রিম চোখের জল ব্যবহার করতে হয় তাই লাগানো উচিত। কালীপুজোর সময় কয়েক দিন এই আই ড্রপ লাগালে চোখের সমস্যা কিছুটা কমে। এ ছাড়াও তুবড়ি, চরকি, বা হাওয়াই জ্বালানোর সময় সরাসরি বাজির ওপরে না থেকে একটু তেরছা ভাবে থাকলে ভাল হয়। আচমকা বার্ষ্ট করলে চোখে বা মুখে আগুনের হলকা লাগবে না। কোনও ভাবে আগুনের ফুলকি বা বাজির টুকরো চোখে ঢুকে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা দিতে হবে। জোরে চাপ দিয়ে চোখ রগড়াবেন না। একান্ত দরকার হলে ‘সিপ্রোফ্লক্সাসিন’ বা ‘ক্লোরাম্ফেনিকল’ জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ বা মলম লাগিয়ে ডাক্তার দেখানো উচিত।

শুধু চোখই নয়, বাজির ধোঁয়া শ্বাসনালী সহ ফুসফুসের অত্যন্ত ক্ষতি করে। বিশেষ করে, যাঁরা ক্রনিক শ্বাসনালীর অসুখে ভুগছেন (যেমন হাঁপানি, সিওপিডি, ব্রঙ্কাইটিস, আইএলডি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি) তাঁদের বাজি না জ্বালালেই ভাল হয়। কালীপুজোর কয়েকটা দিন রাত্তির ন’টা থেকে এগারোটা পর্যন্ত সব বাতাসে ‘স্মগ’ মানে ধোঁয়াশা থাকে। এই সময়টা বাড়ির বাইরে না যাওয়াই ভাল। এ ছাড়াও এই সময়টায় এয়ার কন্ডিশনে থাকলে দূষণের হাত থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যায়। বাজি পোড়ানোর সময় কয়েকটা ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত। যেমন সুতির পোশাক পরে খোলা বারান্দা, উঠোন বা ছাদে বাজি জ্বালানো উচিত। বদ্ধ জায়গায় বাজি ফাটাতে গেলে ভযঙ্কর বিপদের আশঙ্কা থাকে।

আর একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে, যেখানে বাজি ফাটাবেন সেখানে যেন অবশ্যই এক বালতি জল থাকে, যাতে আচমকা বিপদে দিশেহারা হয়ে না পড়তে হয়। চোখে চশমা থাকলে ধোঁয়ার হাত থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যায়। অসুবিধে হলে মাঝে মাঝে চোখে মুখে জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। খুব দরকার মনে করলে পাতলা রুমাল ভিজিয়ে মুখ ঢেকে নিতে পারেন। যাঁদের শ্বাস কষ্টের কারণে অক্সিজেন নিতে হয় তাঁরা যেন ভুলেও অক্সিজেন সিলিন্ডার সহ বাজি ফাটাতে যাবেন না। ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের সম্ভাবনা থাকে। রং মশাল, তুবড়ি, হাওয়াই বা ফুলঝুরির লাল, নীল, সবুজ আলোয় সালফার, নাইট্রোজেন, কপার, বেরিয়াম, ক্যাডমিয়াম সহ বিভিন্ন বিষাক্ত যৌগ থাকে যা শ্বাসনালীর প্রদাহ সৃষ্টি করে। তাই শুধু যে শব্দ বাজিই খারাপ আর আলোর বাজি ভাল তা কিন্তু নয়। বাজির ধোঁয়া থেকে সর্দি, হাঁচি, শ্বাস কষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, সাইনাস, ল্যারিঞ্জাইটিস, হাঁপানির পাশাপাশি ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাওয়া, হঠাৎ রেগে ওঠা, ঘুম কমে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা যায়। এ ছাড়াও শব্দ বাজির তান্ডবে সাময়িক বা স্থায়ী ভাবে শ্রবণ শক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো অসুবিধের সঙ্গে সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের চান্স বাড়ে। তাই বাজি পোড়াতেই পারেন, কিন্তু বুঝে শুনে। আগুন লেগে দুর্ঘটনার ভয় তো থাকেই।পুড়ে গেলে অবশ্যই ঠান্ডা জলে পোড়া অংশ ডুবিয়ে রাখুন। এর পর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করান। নিজেদের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি পরিবেশ, পশু-পাখি সকলের কথা ভাবুন। কালীপুজোর পরের দিন ভোরবেলা রাস্তায় বেরোলে দেখতে পাবেন, কত নিরীহ পশু-পাখি মরে পড়ে আছে। নিজেদের আনন্দ যেন অবলা প্রাণীদের মৃত্যুর কারণ না হয়। একটু ভেবে দেখুন প্লিজ। আলোর উৎসবে আলোর মালায় সাজিয়ে তুলুন নিজের বাড়ি, পাড়া আর শহরকে। বাজি ফাটানোর দরকারই বা কী!

আরও পড়ুন- দীপাবলিতে মেয়েদের সাজে থাকুক আলোর রোশনাই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE