Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Anubrata Mondal

Saigal Hossain: মুর্শিদাবাদে ‘প্রাসাদ’, নিউ টাউনে তিনটি ফ্ল্যাট! কোটি কোটির সম্পত্তি অনুব্রতের দেহরক্ষীর

অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষীর পেশাগত পদের সম্ভাব্য উপার্জন আর ব্যক্তিগত সম্পত্তির ‘অসামঞ্জস্য’ নিয়েই মূল প্রশ্ন ও সন্দেহ সিবিআইয়ের।

অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সেহগাল হোসেন ।

অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সেহগাল হোসেন । ফাইল ছবি

শুভাশিস ঘটক ও সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২২ ০৬:৫৭
Share: Save:

কাজ করেন রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল পদে। মুর্শিদাবাদের ডোমকলে তাঁর প্রাসাদোপম বাড়িএবং কলকাতার নিউ টাউনে তিন-তিনটি ঝাঁ-চকচকে ফ্ল্যাট। তাঁর পেশাগত পদের সম্ভাব্য উপার্জন আর ব্যক্তিগত সম্পত্তির ‘অসামঞ্জস্য’ নিয়েই মূল প্রশ্ন ও সন্দেহ সিবিআইয়ের। সেই কনস্টেবল, তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সেহগাল হোসেন আপাতত সিবিআইয়ের হেফাজতে। তদন্ত সংস্থার দাবি, নথিপত্র যাচাই করে জানা গিয়েছে, প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পত্তির কোনওটাই পৈতৃক সূত্রে পাননি সেহগাল। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরে সব তৈরি করেছেন।

শুধু ওই বাড়ি-ফ্ল্যাট নয়। সিবিআই ধৃত সেহগালের আরও যে-জমি, অন্যান্য সম্পত্তি, নগদ টাকা, গয়নার হদিস পেয়েছে, তার অনেকটাই গরু পাচারের লভ্যাংশের টাকায় কেনা বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ। তবে সিবিআই জানাচ্ছে, সেহগাল বেশির ভাগ সম্পত্তিই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নামে লিখিয়ে রেখেছেন। নিউ টাউনের তিনটি ফ্ল্যাটের মধ্যে দু’টি আছে স্ত্রীর এবং একটি পরিচারিকার নামে। সেই তিনটি ফ্ল্যাটে পাওয়া নগদ ও গয়নার অর্থমূল্য প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। গয়না শিশুকন্যার জন্মদিনে পেয়েছেন বলে দাবি করলেও নগদ টাকার উৎস সম্পর্কে সেহগাল সদুত্তর দিতে পারেননি বলেই সিবিআইয়ের দাবি।

সিবিআই জানিয়েছে, সেহগালের ডোমকলের বাড়ি থেকেও নগদ, কয়েক লক্ষ টাকার গয়না এবং প্রচুর সম্পত্তির দলিল উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সব নথি যাচাই করে দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ সম্পত্তি মা ও স্ত্রীর নামে কিনেছিলেন সেহগাল।

তদন্তকারীদের কথায়, গরু পাচারে অন্যতম মূল অভিযুক্ত এনামুল হককে গ্রেফতারের পরেই জানা যায় সেহগালের কথা। কল-লিস্ট ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, সেহগালের একটি বিশেষ মোবাইল থেকে এনামুলের সঙ্গে তাঁর কথা হত। ওই বিশেষ ফোন থেকে শুধু সেহগাল কথা বলতেন, না, আরও কেউ কেউ সেটি ব্যবহার করতেন— সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এক সিবিআই-কর্তা বলেন, ‘‘চাকরির প্রায় শুরু থেকেই ওই কনস্টেবল তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতির দেহরক্ষী।অনুব্রতের সম্পত্তিরও হিসেব চলছে। সিবিআই ছাড়াও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, আয়কর দফতরও তদন্ত করছে।’’

তদন্তকারীদের দাবি, সেহগালের বাবা ছিলেন রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল। ২০০০ সাল নাগাদ তাঁর মৃত্যুর পরে সেই চাকরি পান সেহগাল। ডোমকলে প্রতিবেশীরা জানান, চাকরি পাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই ফুলেফেঁপে ওঠে সেহগালের সম্পত্তি। ডোমকল বাজারের কাছে পৈতৃক রংচটা একতলা বাড়ি বাঁশবাগানের মাথা ডিঙিয়ে দোতলা হয়ে যায়। হঠাৎই বাড়ির সামনে তৈরি হয় বড় গেট। অনুব্রতের দেহরক্ষী হিসেবে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পান সেহগালের স্ত্রী।

ডোমকলের একাধিক বাসিন্দা বলেন, ‘‘চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরে সেহগাল নামে-বেনামে পরপর জমি কেনে। আড়ালে-আবডালে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও শাসক দল এবং সেহগালের অনুগামীদের ভয়ে সরাসরি কেউ মুখ খোলেননি এত দিন।’’ ডোমকলের সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘ডোমকল শহরে জমি বিক্রির কথা শুনলেই হায়নার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ত সেহগাল। এক জন তৃণমূল নেতার দেহরক্ষীর যদি এমন হাল হয়, তা হলে সেই নেতা দুর্নীতির কোন পাহাড়ে আছেন, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।’’

সেহগালের আদি বাড়ি ডোমকল থানার মাঝপাড়া গ্রামে। সেখানকার বাসিন্দারা জানান, কনস্টেবলের চাকরি ছাড়া সেহগালের বাবার আর তেমন কোনও আয়ের উৎস ছিল না। জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান, মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, ‘‘বিজেপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাদের তাবড় তাবড় নেতাকে অপদস্থ করতে সিবিআই এবং ইডি-কে কাজে লাগাচ্ছে।’’ সেহগালের স্ত্রী সোমাইয়া খন্দকার ফোনে বলেন, ‘‘আমি মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। সিবিআই তদন্তের প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে পারব না।’’

অনুব্রত ও সেহগালের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, ‘‘অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় আদালতগ্রাহ্য প্রমাণের ভিত্তিতে। আমরা আইনের পথে লড়াই করব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Anubrata Mondal CBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE