শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হচ্ছে মনোজ নাগেলকে। বৃহস্পতিবার প্রকাশ পালের তোলা ছবি।
তাঁর পরিবারের মাসিক আয় সাকুল্যে আড়াই হাজার টাকা।
কলেজে পড়া ভাই ভাত জোটাতে মুখের রক্ত তুলে খাটছে।
অথচ খাতায়-কলমে তিনি সারদা গোষ্ঠীর অন্যতম ডিরেক্টর। কোটি-কোটি টাকার সারদা মামলায় প্রথম ধৃত। দু’বছর ঘুরতে চললেও আজও যাঁর জামিন হয়নি।
শুক্রবার শ্রীরামপুর আদালতে প্রিজন ভ্যানে বসে সেই মনোজ নাগেল দাবি করলেন, টাকা নেই বলেই তিনি জামিন পাচ্ছেন না। বললেন “টাকা থাকলেই সব হয়। যাঁদের টাকা আছে, জামিন পাচ্ছেন। আমাদের টাকা নেই, তাই জেল থেকে বেরোতে পারছি না।”
সারদা কাণ্ডে গ্রেফতার হয়েও সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন সৃঞ্জয় বসু ও রজত মজুমদার। মনোজ অবশ্য তাঁদের নাম করেননি। আদালতে তোলার আগে প্রিজন ভ্যানে বসে আনন্দবাজারকে তিনি বলতে থাকেন, “আমি কোনও দোষ করিনি। বিনা দোষে আটকে রাখা হয়েছে। আমার বাড়িতে গিয়ে দেখুন কী অবস্থা। বাড়ির লোক খেতে-পরতে পারছে না। ভিক্ষে করছে।”
সারদা কাণ্ডে ২০১৩-র ১৯ এপ্রিল মনোজ নাগেল গ্রেফতার হন। পরে গ্রেফতার হন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়। শুরুতে ৪৪টি মামলায় তাঁর নাম ছিল। বাকিগুলিতে জামিন পেলেও শুধু শ্রীরামপুর থানার একটি মামলাতেই (নম্বর ১৫২/১৩) তাঁর জামিন হয়নি।
এ দিন সেই মামলাতেই আদালতে তোলা হয়েছিল মনোজকে। তাঁর দাবি, “চার্জশিটে আমার নাম নেই। সিবিআই ছেড়ে দিচ্ছে। তা হলে এরা কেন ধরে রেখেছে? ৪০৯ ধারা অন্য মামলাতেও রয়েছে। সেগুলোতে জামিন হল কী করে?” মনোজ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন বুঝতে পেরেই পুলিশ ভ্যানের কাচ তুলে দেয়। তাঁকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, সত্যিই কি এমন দুরবস্থা মনোজের পরিবারের?
বিকেলে দুর্গাপুর ‘এ’ জোনে মনোজদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মা সবিতাদেবী রেশনে পাওয়া গম কুলোয় ফেলে বাছছেন। ঘরে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। ছাদ খসে পড়ছে। দরজা ভেঙে গিয়েছে। বাবা উপানন্দ নাগেল দুর্গাপুর ইস্পাত সমবায় সংস্থায় চাকরি করতে-করতেই মারা যান। সবিতাদেবী মাসে ৯৫৪ টাকা পেনশন পান। মনোজের ভাই, দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের বি কম তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বনজ বাবার অফিসেই দৈনিক ৭০ টাকা মজুরিতে রেশনের হিসেব রাখার কাজ পেয়েছেন। মাসে সর্বোচ্চ ১৭১০ টাকা রোজগার। মা-ছেলে মিলে মাসে সর্বোচ্চ ২৬৬৪ টাকা রোজগার।
“খুব কষ্টে চলছে, জানেন! এখনও সব বই কিনতে পারিনি” বলে ফেলেন বনজ। জানান, সংসার আর মামলার খরচ চালাতে গিয়ে তাঁরা কার্যত সর্বস্বান্ত। ধারদেনাও করতে হয়েছে। রায়নার কুঁয়ারায় বিঘে আড়াই ধানি জমি। জামিনের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে তা-ও বন্ধক দিতে হয়েছে। “আমাদের আর সম্বল বলতে কিছু নেই” বলে বনজ চুপ করে যান।
পুলিশের দাবি, মনোজ সারদার হয়ে বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও বীরভূমের দায়িত্বে ছিলেন। দুর্গাপুর ও কলকাতায় তাঁর যাতায়াত ছিল। যদিও পরিবারের দাবি, তিনি আদতে সারদার সাধারণ কর্মী ছিলেন মাত্র। পড়শিরাও জানান, মনোজ নিতান্ত ছাপোষা মানুষ। মনোজের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতার বক্তব্য, “সারদা কাণ্ডে সিবিআই মনোজের বিরুদ্ধে যে চারটি মামলা দিয়েছে, তার মধ্যে এই মামলা নেই। তাই নিম্ন আদালতে জামিন মঞ্জুর হচ্ছে না।” মনোজ বলেন, “মানছি, অনেক গরিবের টাকা গিয়েছে। কিন্তু আমি আদপেই জড়িত নই। মাইনে ছাড়া বাড়তি কোনও সুবিধা নিয়ে থাকলে আমায় শাস্তি দিক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy