Advertisement
E-Paper

সাত পুরভোট স্থগিতের রায়ে স্বস্তি রাজ্যের

দু’বছর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টে বিড়ম্বনায় পড়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সে বার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মাথায় ছিলেন মীরা পাণ্ডের মতো কড়া আধিকারিক। মঙ্গলবার ঠিক তার উল্টো ছবি। সাত পুরসভার ভোট নিয়ে সওয়াল করতে সুপ্রিম কোর্টে হাজিরই থাকলেন না রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের আইনজীবী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৫ ০৩:৪৬

দু’বছর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টে বিড়ম্বনায় পড়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সে বার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মাথায় ছিলেন মীরা পাণ্ডের মতো কড়া আধিকারিক।

মঙ্গলবার ঠিক তার উল্টো ছবি। সাত পুরসভার ভোট নিয়ে সওয়াল করতে সুপ্রিম কোর্টে হাজিরই থাকলেন না রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের আইনজীবী। ফলে সোমবার নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় যতই বড় গলা করে ভোটের দিন ঘোষণা করে দিন না কেন, আজ সুপ্রিম কোর্টে স্থিতাবস্থার নির্দেশ জারি হয়ে গেল। রাজ্য সরকার ঠিক যেটা চেয়েছিল।

কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ১৬ জুনের মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করতে। সেই মতো গত কাল ১৪ জুন পুরভোটের দিন ঘোষণা করেছিলেন সুশান্তবাবু। রাজ্য সরকারকে ২০ মে-র মধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে বলেছিলেন তিনি। কারণ, রাজ্যের পুর আইন অনুসারে বিজ্ঞপ্তি জারির দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু আজ সুপ্রিম কোর্ট স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেছে, মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২৫ মে। সে দিনই কমিশনের বক্তব্য শুনবে আদালত। কিন্তু তার পর যে নির্দেশই আসুক না কেন, ১৬ জুনের মধ্যে ভোট গণনা করে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করা কিছুতেই সম্ভব হবে না। কারণ, আইন মোতাবেক নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি জারি করার অন্তত ২৪ দিন পরে ভোট গ্রহণ করতে হবে।


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে আজ সুপ্রিম কোর্টে এই রহস্যজনক অনুপস্থিতির কারণ কী? বিশেষ করে আগের দিন সুশান্তবাবু যে ভাবে সর্বদল বৈঠকের পরে ১৪ জুন ভোট হবে বলে ঘোষণা করে দিলেন, তার পরেই আদালতে রাজ্য সরকারকে এই ভাবে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দেওয়ার কী কারণ থাকতে পারে? তবে কি গোটাটাই সাজানো ঘটনা?

বিরোধীরা অন্তত এমন সন্দেহ উড়িয়ে দিতে পারছেন না। হাইকোর্টে এই মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীরাও জানাচ্ছেন, শীর্ষ আদালতে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী উপস্থিত থাকলে এ দিনই সব পক্ষের বক্তব্য শুনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারত সুপ্রিম কোর্ট। সে ক্ষেত্রে ২৫ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো না।

এর আগে এপ্রিল মাসেই হাইকোর্ট বলে দিয়েছিল, দু’মাসের মধ্যে রাজ্যের সাতটি পুরসভার বকেয়া নির্বাচন সেরে ফেলতে হবে। সেই নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। তাদের যুক্তি ছিল, উত্তর ২৪ পরগনার বিধাননগর ও রাজারহাট-গোপালপুর, হাওড়ার বালি, বর্ধমানের কুলটি, রানিগঞ্জ, আসানসোল এবং জামুড়িয়ায় পুরসভাগুলির সংযুক্তিকরণের কাজ এখনও শেষ হয়নি। তাই ভোট পিছিয়ে দেওয়া হোক। উত্তরে গত শুক্রবারই হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, নির্দেশ পুনর্বিবেচনার প্রশ্নই নেই। রাজ্য সরকার হয় পূর্বনির্ধারিত তারিখের মধ্যে ভোট করুক, নয় সুপ্রিম কোর্টে যাক। রাজ্য সরকার দ্বিতীয় পথটিই বেছে নিয়েছে।

অন্য দিকে হাইকোর্ট রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে বলেছিল তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে। সেই অনুযায়ী সোমবার রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে গেলেও তড়িঘড়ি সর্বদল বৈঠক ডেকে ভোটের দিন ঘোষণা করে দিয়েছিল কমিশন। কিন্তু আজ কমিশন সুপ্রিম কোর্টে তাদের আইনজীবী না-পাঠানোয় সবটাই নিষ্ফল হয়ে গেল। আগের দিনই কমিশন খানিকটা দৃপ্ত ভূমিকা নিচ্ছে বলে যাঁরা মনে করেছিলেন, এ দিন তাঁদের অনেকেরই মনে হয়েছে, গোটা ব্যাপারটার মধ্যে রহস্য রয়েছে। রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর বক্রোক্তি, ‘‘আইনজীবী না থাকা রহস্যজনক। এই ঘটনা রাজ্য সরকারের সঙ্গে কমিশনের গট-আপও হতে পারে।’’ আর কং‌গ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার প্রতিক্রিয়া, ‘‘নির্বাচন কমিশন তার কর্তব্যে চূড়ান্ত অবহেলা করেছে। এ ভাবে সংবিধানকে অসম্মান করার পরে কমিশনারের আর ওই পদে থাকা সমীচীন নয়।’’

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ জানার পরে আজ উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া ও বর্ধমানের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে পুর নির্বাচন নিয়ে বৈঠক বাতিল করে দেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সেই খবর জানানো হলেও কেন সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী পাঠানো হল না, তার ব্যাখ্যা কমিশনের তরফে মেলেনি। সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় নিজে এ দিন ফোন ধরেননি, দেখাও করতে চাননি। এক প্রতিনিধি পাঠিয়ে তিনি জানিয়ে দেন, সাংবাদিকদের কিছু বলার থাকলে তিনি নিজেই ডেকে জানিয়ে দেবেন। কমিশনের সচিবও ফোন ধরেননি, দেখা করেননি। তবে হাইকোর্টে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী নয়নচাঁদ বিহানী দাবি করেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে মামলা নিয়ে কোনও নোটিস আমরা রাজ্যের তরফ থেকে পাইনি। সুপ্রিম কোর্ট এ দিন নোটিস পাঠিয়েছে বলে শুনেছি। সেই মতো পরের দিন কমিশনের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাবেন।’’

নোটিস না পাওয়ার এই যুক্তি অবশ্য মানতে চাননি রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘সোমবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে আমরা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে আমরা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছি। সেখানে বলা ছিল যে, এ দিন মামলাটি উঠবে।’’ বিরোধীদের এই ‘গট আপ তত্ত্ব’ খারিজ করে পুরমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘যে চোর সে সবাইকে চোর মনে করে। আমরা কোনও গটআপ করিনি। আমরা সোজা ব্যাটে খেলেছি।’’ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘কমিশন কেন আইনজীবী দেয়নি, তা কমিশনই বলতে পারবে।’’ অর্থাৎ এতে রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকা নেই বলেই তাঁর দাবি।

সুপ্রিম কোর্টে আত্মপক্ষ সমর্থনে অবশ্য আজ সর্বশক্তি নিয়েই নেমেছিল রাজ্য। রাজ্যের হয়ে সওয়াল করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল ইউপিএ জমানার দুই কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বল এবং সলমন খুরশিদের মতো দুঁদে আইনজীবীকে। মামলার দেখভাল করার জন্য কলকাতা থেকে চলে এসেছিলেন বিধাননগর পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত। আদালতে স্বস্তি মেলায় তাঁর মুখে ছিল বিজয়ীর হাসি। শুনানির পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কপিল সিব্বলের মধ্যে কথা হয়। সব্যসাচীর মোবাইলেও কলকাতা থেকে তৃণমূলের একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর ফোন আসতে থাকে। সব্যসাচীই সকলকে ‘জয়ের খবর’ জানান। সিব্বলও বাইরে এসে সাংবাদিকদের বলে দেন, ‘‘আপাতত নির্বাচন হচ্ছে না।’’

হাইকোর্টে যে যুক্তি দিয়েছিল রাজ্য, সুপ্রিম কোর্টেও সে কথাই বলেছে তারা। অর্থাৎ ভোট থেকে পালানো নয়, পুরসভা সংযুক্তিকরণের কাজ শেষ না হওয়ার জন্যই ভোটে যেতে দেরি। বিচারপতি এ কে সিক্রি এবং বিচারপতি উদয় উমেশ ললিত রাজ্যের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, তাঁরা কবে নির্বাচন করতে চাইছেন। সিব্বল জানান, ১৫ জুনের মধ্যে পুরসভাগুলির সংযুক্তিকরণের প্রক্রিয়া শেষ হবে। তার পরে যে কোনও দিন নির্বাচনের দিন ঘোষণা করতে পারে কমিশন। সেই মতো রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। এর পরেই বেঞ্চ জানতে চায়, এজলাসে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কোনও আইনজীবী রয়েছেন কি না। কিন্তু কেউ না থাকায় অগত্যা নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিস জারি করে আদালত।

হাইকোর্ট তার রায়ে বলেছিল, একমাত্র প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছাড়া ভোট পিছিয়ে দেওয়ায় সায় নেই সুপ্রিম কোর্টের। এ দিন শীর্ষ আদালতে অবশ্য সে প্রসঙ্গ ওঠেনি।

state election commission seven municipalities supreme court stay order seven municipality poll supreme court on municipality poll state vs high court abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy