Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পঞ্চায়েত হিংসায় ‘বিচারে’র আশা ২৫ বছর পরে

বাম জমানায় ১৯৯৩ সালের ৩০ মে ছিল পঞ্চায়েত ভোট। তার পরের দিন বর্ধমানের মেমারি থানার করন্দা গ্রামে গণহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত হয় শাসক সিপিএম। স্থানীয় সমবায়ে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে বিবাদের সূত্রপাত, তার জেরে সিপিএম ছেড়ে বেরিয়ে বেশ কিছু লোক সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের তৎকালীন গণফ্রন্ট আইপিএফের হয়ে পঞ্চায়েত ভোটে লড়েন। তার পরেই সে বছর ৩১ মে করন্দার পূর্ব পাড়ায় ২৬টি বাড়িতে আগুন লাগানো হয় বলে অভিযোগ।

সন্দীপন চক্রবর্তী ও সৌমেন দত্ত
কলকাতা ও মেমারি শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৮ ০৫:৩২
Share: Save:

পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে রাজ্যে যখন আগুন জ্বলছে, সেই সময়েই রক্তাক্ত পঞ্চায়েতের পুরনো স্মৃতি ফিরে এল সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের সৌজন্যে! সেই সঙ্গেই এই সময়ের স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সার্বিক বাম ঐক্যের বাতাবরণে নতুন করে অস্বস্তির আমদানি হল। মামলার বিবদমান দুই পক্ষই অবশ্য বলছে, পুরনো ঘটনার জেরে বৃহত্তর বাম ঐক্য ও আন্দোলনে কোনও প্রভাব পড়বে না।

বাম জমানায় ১৯৯৩ সালের ৩০ মে ছিল পঞ্চায়েত ভোট। তার পরের দিন বর্ধমানের মেমারি থানার করন্দা গ্রামে গণহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত হয় শাসক সিপিএম। স্থানীয় সমবায়ে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে বিবাদের সূত্রপাত, তার জেরে সিপিএম ছেড়ে বেরিয়ে বেশ কিছু লোক সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের তৎকালীন গণফ্রন্ট আইপিএফের হয়ে পঞ্চায়েত ভোটে লড়েন। তার পরেই সে বছর ৩১ মে করন্দার পূর্ব পাড়ায় ২৬টি বাড়িতে আগুন লাগানো হয় বলে অভিযোগ। হামলায় মৃত্যু হয় দিলীপ পাকড়ে, মানিক হাজরা, হিরু মালিক, সাধন নায়েক ও সোম কোঁড়া নামে পাঁচ আইপিএফ সমর্থকের। কিন্তু সাক্ষীদের বয়ানের ফারাক এবং অভিযোগের সঙ্গে ময়না তদন্ত রিপোর্টের অসঙ্গতি উল্লেখ করে ৩২ জন সিপিএম কর্মী-সমর্থককে বেকসুর খালাস দেয় দায়রা আদালত। কলকাতা হাইকোর্টও ২০০৪ সালে একই রায় বহাল রাখে। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের শেষে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এন ভি রামানা এবং মোহন এম সান্তানাগৌড়ার বেঞ্চ হাইকোর্টকে নির্দেশ দিয়েছে ওই রায় খতিয়ে দেখার। অভিযুক্তদের মধ্যে ৬ জন অবশ্য ইতিমধ্যে মৃত।

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে আশার আলো দেখছেন নিহতের পরিজন ও আহতেরা। পালাবদলের পরে ওই এলাকায় এখন তৃণমূলের দাপট। সে দিন আগুন লাগানো হয়েছিল যে বাদল মালিকের বাড়িতে, তাঁর আক্ষেপ, ‘‘বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকলে অনেক আগেই বিচার পেতাম!’’ আত্মীয়া মেনকা ছিলেন সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারী। বাদলবাবুর মনে আছে, ‘‘আমার বাড়িতেই প্রথম আগুন লাগানো হয়। প্রাণে বাঁচতে আমিই মেনকাকে নিয়ে মেমারি থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছিলাম।’’ নিহত দিলীপবাবুর মেয়ে বেদানাদেবীর স্মৃতিও এখনও টাটকা— ‘‘রাতভর ভোট-গণনার পরে বাবা-কাকারা বাড়িতে শুয়েছিলেন। বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুরো পাড়া ঘিরে ফেলা হয়। তখনও ঘর থেকে কেউ বেরোচ্ছে না দেখে খড়ের চাল, মাটির দেওয়ালের ভিতর দিয়ে বল্লম দিয়ে খোঁচানো হয়।’’

কিন্তু এত বছর পরে পুনর্বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ জোগাড় কি সম্ভব? সর্বোচ্চ আদালতে মামলার অন্যতম আইজীবী ও লিবারেশন নেতা দিবাকর ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘যে তথ্যপ্রমাণ আদালতে জমা হয়েছিল, সেগুলো খতিয়ে দেখলেই অনেক কিছু স্পষ্ট করা সম্ভব।’’

আর রাজনৈতিক অভিঘাত? লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ বলছেন, ‘‘খুনিদের কোনও দল বা রং হয় না। সে দিনের অভিযুক্তেরা অধিকাংশই বর্তমান শাসক দলে আছেন! আর এমন কিছু ঘটনায় দোষীদের শাস্তি হয়নি বলেই বামপন্থা কলুষিত হয়েছে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘আইনি পথ যা হওয়ার হবে। তবে স্থানীয় কোনও জটিলতার জন্য বৃহত্তর বাম আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Justice Panchayat Karanda Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE