Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মার্কশিট দিতে সাইকেলের নম্বর চাইল স্কুল

সাইকেল দেখাও, মার্কশিট নাও—মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন একটি স্কুলের এই ফরমানে সবুজ সাথী নিয়ে ফের বিড়ম্বনায় সরকার।

শিলিগুড়ি গার্লস হাই স্কুলের সেই বিজ্ঞপ্তি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

শিলিগুড়ি গার্লস হাই স্কুলের সেই বিজ্ঞপ্তি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৬ ০৪:২৮
Share: Save:

সাইকেল দেখাও, মার্কশিট নাও—মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন একটি স্কুলের এই ফরমানে সবুজ সাথী নিয়ে ফের বিড়ম্বনায় সরকার।

মঙ্গলবার শিলিগুড়ি গার্লস হাইস্কুলে সকালে স্কুলে রেজাল্ট আনতে গিয়ে ছাত্রীরা দেখে নোটিস বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি ঝুলছে, সবুজ সাথী প্রকল্পে পাওয়া সাইকেলের ফ্রেমের নম্বর আনতে হবে, তবেই মার্কশিট পাওয়া যাবে। তাই দেখে কেউ
কেঁদে ফেলে, কেউ ছুটে বাড়ি চলে যায়। কয়েকজনকে বাড়ি থেকে সাইকেলের নম্বর এনে তা জমা দিতে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ। অভিভাবকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। খবর পৌঁছয় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও।

সরকারি সূত্রের খবর, পার্থবাবু সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষা দফতরের প্রধান সচিবকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের আঞ্চলিক দফতর থেকে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শেফালি সিংহকে নোটিস তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপরে দুপুরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘মাধ্যমিকের মার্কশিটের সঙ্গে সাইকেলের নম্বরের কোনও সম্পর্ক নেই। এমন নির্দেশ জারি করা যায় না। বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।’’ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও প্রশ্ন করেন, ‘‘সাইকেল বিলির সঙ্গে রেজাল্ট দেওয়ার কী সম্পর্ক?’’

সত্যিই কী সম্পর্ক?

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পে কে কোন সাইকেলটি পেয়েছে তার নথি রাখতে প্রাপকের নামের পাশে সাইকেলের ফ্রেমের নম্বর লিখে রাখা হয়। কিন্তু এই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রীদের সকলের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। প্রধান শিক্ষিকা শেফালিদেবী জানান, কিছু ছাত্রী স্কুল থেকে সাইকেল পেয়েছে, কিছু ছাত্রী পেয়েছে বাগরাকোটে এফসিআইয়ের গুদাম থেকে। তিনি বলেন, ‘‘সে সময় কাকে কোন সাইকেল দেওয়া হল, তার ফ্রেম নম্বর নথিভুক্ত করা হয়নি। কিন্তু প্রশাসনকে তা জানাতে হবে। নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে তা নথিভুক্ত করতে হবে। অথচ মাধ্যমিকের ছাত্রীরা পরীক্ষার সময় থেকেই স্কুলে আসছে না। তাই তাদের জানানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছিল। সে জন্যই রেজাল্টের নেওয়ার সময় সাইকেল নম্বর জানিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।’’

কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের এই যুক্তি পার্থবাবু, গৌতমবাবুরা মেনে নিতে পারেননি। গৌতমবাবুর বক্তব্য,
‘‘কেন এমন কাণ্ড করে ছাত্রী-অভিভাবকদের সমস্যায় ফেলা হল, বুঝতে পারছি না।’’

সবুজ সাথীর সাইকেল নিয়ে তৃণমূলের বিড়ম্বনা এই প্রথম নয়। বাম আমলের শেষের দিকে শুধু ছাত্রীদের জন্য এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল। তৃণমূল জমানায় নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সব পড়ুয়াকেই এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। কিন্তু নানা সমস্যাও তৈরি হয়। রাজ্যের নানা জায়গায় পড়ুয়ারা সাইকেল পেয়ে দেখে কোনওটার চাকায় ফুটো, কারও সাইকেলে ব্রেক ধরে না, কারওটার বল বেয়রিং খারাপ। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের কৌশল্যা মোড়ে নতুন পাওয়া সাইকেল সারানোর রীতিমতো লাইন পড়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার সাইকেল বেশ কয়েকদিন ধরে রোদে জলে ফেলে রাখার জন্যই সেগুলির ওই দশা হয় বলে দাবি করেন অনেকে।

এই সাইকেল সময় মতো এলাকার সব স্কুলে পৌঁছে দিতে না পারার জন্যও ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের। জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে সাইকেল না পেয়ে পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীও। কিন্তু সরকার সব থেকে বেশি বিব্রত হয়েছে এই প্রকল্পের সাইকেল পেয়ে কিছু পড়ুয়া তা বিক্রি করে দেওয়ায়। একটি ওয়েবসাইটে বিশ্ব বাংলার লোগো সাঁটানো সাইকেলের ছবি দিয়ে তা বিক্রি করতে চেয়েছিল শিলিগুড়ির এক ছাত্রী। একই ভাবে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল আসানসোলের এক ছাত্রও। এ ছাড়া, নানা শহরের সাইকেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে বিক্রির জন্য ওই প্রকল্পে পাওয়া সাইকেল নিয়ে এসেছিল বেশ কিছু ছাত্র ও অভিভাবক।

সেই সব কথাই উস্কে দিল এ দিন শিলিগুড়ি গার্লসের কাণ্ড। প্রশ্ন উঠল, তবে কি ফ্রেমের নম্বর চাওয়ার অছিলায় প্রশাসন দেখতে চাইছিল, কারা সাইকেল রেখেছে আর কারা বেচে দিয়েছে?

বিরোধীদের দাবি, উপযুক্ত পরিকাঠামো ও প্রস্তুতি ছাড়াই এত ব়ড় একটা প্রকল্প চালু করে দিয়ে সমস্যা পাকিয়েছে সরকারই। পরে তাল সামলাতে না পেরে নানা ঝঞ্ঝাটের মুখে পড়তে হচ্ছে। বিব্রত শিক্ষামন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ‘‘কেন এমন হল, তা খোঁজ নিচ্ছেন অফিসাররা। তাঁদের ব্যবস্থা নিতেও বলেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

marksheet madhaymik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE