Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ বছরের মতো বাঁচল ডাক্তারির সব আসনই

রাজ্যকে সতর্কবার্তা দিয়ে এমবিবিএসে বাতিল হওয়া সব আসনে ছাত্র ভর্তির অনুমোদন দিচ্ছে ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ (এমসিআই)। পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যসচিবকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে শনিবার এ কথাই জানিয়ে দিয়েছে তারা। তবে সেই সঙ্গেই রাজ্যর প্রতি এমসিআইয়ের সতর্কবার্তা, ‘আগামী বছর যেন এমন আর না হয়’।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৪ ০২:৪৬
Share: Save:

রাজ্যকে সতর্কবার্তা দিয়ে এমবিবিএসে বাতিল হওয়া সব আসনে ছাত্র ভর্তির অনুমোদন দিচ্ছে ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ (এমসিআই)। পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যসচিবকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে শনিবার এ কথাই জানিয়ে দিয়েছে তারা। তবে সেই সঙ্গেই রাজ্যর প্রতি এমসিআইয়ের সতর্কবার্তা, ‘আগামী বছর যেন এমন আর না হয়’।

পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাবে এ রাজ্যের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে এ বছর ১১৯৫টি আসনে ছাত্র ভর্তি আটকে দিয়েছিল এমসিআই। গত মাসে ৪০০টি আসন ফিরে পেয়েছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু বাকি ৭৯৫ আসন নিয়ে টানাটানি চলছিলই। শেষে কার্যত মুচলেকা দিয়ে এমসিআইয়ের কাছ থেকে ওই আসনে ছাত্র ভর্তির অনুমোদন নিতে হল রাজ্যকে। এ দিন বৈঠকের পর রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে বলেন, “আমরা এমসিআইকে কথা দিয়েছি, আগামী ছ’মাসের মধ্যে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে পরিকাঠামোর সব ত্রুটি শুধরে নেওয়া হবে।” তাঁর বক্তব্য, এমসিআই জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই মালদহ ও সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের ২০০ আসনের ছাড়পত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রকে পাঠিয়ে দিয়েছে তারা। বাকিগুলোর ছাড়পত্রও ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে পাওয়া যাবে।

এমবিবিএসে সব আসন ফিরে পাওয়ার আশ্বাস মিললেও ছাত্র ভর্তির কাউন্সেলিং শুরু হয়ে যাওয়ায় নতুন করে সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, গত ক’মাস ডাক্তারিতে ভর্তির বেশ কিছু আসন বাতিল হওয়ায় অনেক ছাত্র প্রথম কাউন্সেলিংয়ে পছন্দের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। বাধ্য হয়ে তাঁরা অন্য কলেজে ভর্তি হয়েছেন। এখন দ্বিতীয় কাউন্সেলিংয়ে সেই ছাত্রেরা পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ পেতে পারেন। কিন্তু তা কতটা সুষ্ঠু ভাবে করা যাবে, তা নিয়েই সংশয়ে ওই স্বাস্থ্যকর্তারা।

এমসিআই সূত্রের খবর, এমবিবিএসে সব আসনে ছাত্র ভর্তির অনুমোদন দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রকে চিঠি লিখেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই আবেদন নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন এবং এমসিআইয়ের কাছে একাধিক বার দরবার করেন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা। এমনকী, সিপিএমের নেতারাও এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। রাজ্যের এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “বিজেপি সরকার প্রথম থেকেই আসন ছেড়ে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিল। গত সপ্তাহে এমসিআইয়ের সভাপতি জয়শ্রী বেন মেটাকে ডেকে পাঠিয়ে সরকারের ওই মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন হর্ষবর্ধন। তার পরেই বরফ গলেছে বলে মনে হচ্ছে।”

এ দিনের বৈঠকে এমসিআইয়ের এগ্জিকিউটিভ কমিটির সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য যে সব রাজ্যে আসন বাতিলের সুপারিশ করেছিল এমসিআই, ডাকা হয়েছিল তাদেরও। বৈঠকে উপস্থিত রাজ্যের এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “প্রথমে সকলের সঙ্গে আধ ঘণ্টা কথা বলেন এমসিআই কর্তারা। তার পরে এক এক করে রাজ্যগুলিকে ডাকা হয়। আমাদের স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কাছে তাঁরা জানতে চান, পরিকাঠামোর যে সব কাজ বাকি পড়ে আছে, সেগুলো কি রাজ্যের দেওয়া সময়সীমার মধ্যে শেষ করা যাবে? রাজ্যের কর্তারা আশ্বস্ত করলে এমসিআইয়ের তরফে সব আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।” ওই স্বাস্থ্যকর্তার বক্তব্য, এমসিআই জানিয়ে দিয়েছে, আগামী বছর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে কোনও ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।

পরিকাঠামোর অভাবে মেডিক্যাল কলেজে আসন আটকে দেওয়ার সুপারিশ অবশ্য নতুন নয়। কিন্তু এমসিআইয়ের তরফে কখনও এত বেশি সংখ্যক আসন আটকানোর নজির নেই। এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “কলেজের পরিকাঠামো শুধরে নেওয়া হবে, এই মর্মে চিঠি দিলেই ছাড়পত্র মিলত। বহু ক্ষেত্রে ধার করা ডাক্তার ও চেয়ার-টেবিল দেখিয়ে পার পাওয়া যেত।” কিন্তু এই বছর থেকেই কড়াকড়ি শুরু করেছে এমসিআই।

চিকিৎসকের ঘাটতি, চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় ডিগ্রির ঘাটতি, অসম্পূর্ণ কলেজ ভবন, ল্যাবরেটরি, প্রেক্ষাগৃহ বা গ্রন্থাগারের দুরবস্থা এবং মর্গ ও হস্টেল না থাকাএ রকম বিভিন্ন বিষয়ে আপত্তি তুলে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ১১৯৫টি আসনে ছাত্র ভর্তি বন্ধের সুপারিশ করেছিল এমসিআই।

এতেই সমস্যায় পড়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। ক্ষমতায় আসার পরে মূলত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই রাজ্যে এমবিবিএসের আসন বেড়ে দাঁড়ায় ২৪০০-তে। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এই পদক্ষেপকে সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে ব্যাখ্যাও করেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের নির্বাচনী ইস্তাহারেও তার উল্লেখ ছিল। এই পরিস্থিতিতে ডাক্তারি পড়ায় আসন কমলে সরকারের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠার আশঙ্কায় ছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা। অবশেষে এ বছরের মতো ফাঁড়া কাটল বলেই মনে করছে স্বাস্থ্য ভবন।

কিন্তু আগামী বছর কী হবে, তা নিয়ে আশঙ্কার মেঘ কাটছে না সরকারের অনেক মহলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

west bengal doctor seat secured
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE