ফাইল ছবি।
কাজ করেন রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল পদে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তাঁর ছোট্ট বাড়ির প্রায়-প্রাসাদ হয়ে ওঠা, কলকাতার নিউ টাউন, বোলপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর ফ্ল্যাট, জমি, গয়না ও অন্যান্য সম্পত্তির বহর পড়শি থেকে তদন্ত সংস্থা সকলেরই বিস্ময়ের কারণ হয়ে উঠেছিল। সবিস্তার তদন্তের পরে সিবিআই জানাচ্ছে, কনস্টেবল থেকে ক্রমে ধনকুবের হয়ে ওঠা সেই সেহগাল হোসেনের সম্পত্তির পরিমাণ আপাতত একশো কোটি টাকা!
সরকারি ভাবে এই তথ্য আদালতে পেশ করে সেহগালের বিষয়সম্পত্তির ‘সিজার লিস্ট’ জমা দিয়েছে সিবিআই। তদন্তকারীদের দাবি, এর বাইরেও ওই কনস্টেবলের আরও সম্পত্তি থাকতে পারে। গ্রেফতারের পর থেকে সেহগাল এত দিন সিবিআইয়ের হেফাজতে ছিলেন। শুক্রবার আসানসোল আদালতে তোলা হলে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী তাঁকে আরও সাত দিনের জন্য সিবিআইয়েরই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
কী আছে সেহগালের সম্পত্তির তালিকায়? সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার এ দিন বিচারককে জানান, তালিকায় একাধিক ডাম্পার, একাধিক ফ্ল্যাট, একাধিক পাথর ভাঙার যন্ত্র, পেট্রল পাম্প, প্রায় ২০০ বিঘা জমি রয়েছে ডাকসাইটে তৃণমূল নেতা অনুব্রতের ওই দেহরক্ষীর।
এই বিপুল সম্পত্তির খতিয়ান দেখে সিবিআই-ও হতবাক! তাদের দাবি, কনস্টেবলের চাকরি করে সেহগাল যে-বেতন পান এবং তাঁর স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা হিসেবে যে-বেতন পান, তার সঙ্গে এই অগাধ সম্পত্তিকে কোথাও মেলানো যাচ্ছে না। এক জন নেতার নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কেউ যদি এত সম্পত্তি করে থাকেন, তা হলে অধিকতর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কত সম্পত্তি থাকতে পারে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তদন্তকারীরা।
এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সেহগালকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে আদালতে আনা হয়। বেলা ১২টা নাগাদ শুরু হয় শুনানি। অভিযুক্তের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতার অভিযোগ, সেহগালের ঠিকমতো স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হচ্ছে না। তাঁর কাছ থেকে একটি বিদ্যুতের বিল ছাড়া আর কিছু পায়নি সিবিআই। রাজ্য সরকারের কর্মী হলেও সিবিআই তাঁকে নিয়ম মেনে গ্রেফতার করেনি বলেও অভিযোগ অনির্বাণবাবুর।
তবে রাকেশ কুমারের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্তের স্বার্থে গ্রেফতার করার জন্য সিবিআই-কে অনুমতি নিতে হয় না। রাকেশের অভিযোগ, প্রশ্নের উত্তর না-দিয়ে চুপ করে থাকছেন সেহগাল। তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। তাঁকে আরও জেরার প্রয়োজন রয়েছে। অনির্বাণবাবু বলেন, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তের চুপ করে থাকাটা তাঁর মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। অতএব এর জন্য তাঁর মক্কেলকে হেফাজতে নেওয়ার কোনও মানে নেই।’’ বিচারকের মন্তব্য, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদের সময় চুপ করে থাকা যেমন মৌলিক অধিকার, তেমনই তদন্তে সহযোগিতা করাও অভিযুক্তের দায়িত্ব।’’
সর্বোচ্চ সাত বছর সাজা হতে পারে, এমন ধারায় কাউকে গ্রেফতার করতে হলে তাঁকে ৪১ নম্বর ধারায় নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠাতে হয়। কিন্তু সেহগালের আইনজীবীরা ১০ জুন বিচারকের কাছে অভিযোগ করেন, তদন্তকারী সিবিআই অফিসার নিয়ম ভেঙে সেহগালকে ৪১ নম্বর ধারায় নোটিস দিয়ে না-ডেকে ১৬০ ধারায় ডেকেছিলেন। এ বিষয়ে সে-দিন এই মামলার তদন্তকারী অফিসার সুশান্ত ভট্টাচার্যকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছিলেন বিচারক। শুক্রবার সেই নোটিসের জবাব দিয়েছেন সুশান্তবাবু। রাকেশ কুমার জানান, তদন্তকারী অফিসারের সেই জবাবে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিচারক।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy