Advertisement
০৪ মে ২০২৪

উড়ান কি থমকে ‘ব্র্যান্ড বঙ্গালি’র

চলতি বছরের মার্চ মাসে, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ‘ব্র্যান্ড বঙ্গালি’ যাত্রা শুরু করেছিল। আলিপুরের ‘উত্তীর্ণ’ মুক্তমঞ্চে হয়েছিল বিশাল অনুষ্ঠান।

—প্রতীকী ছবি

—প্রতীকী ছবি

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ ০২:০৬
Share: Save:

স্বনির্ভরতা এবং আত্মবিশ্বাসের ডানায় ভর দিয়ে নতুন উড়ানের স্বপ্ন দেখিয়েছিল ‘ব্র্যান্ড বঙ্গালি’। কিন্তু খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া নাম এবং তাঁর এঁকে দেওয়া লোগো নিয়ে চোখ ধাঁধানো উদ্বোধনের সাত মাসের মধ্যেই লিলুয়া হোমের মেয়েদের আর্থিক পুনর্বাসনের এই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে অভিযোগ।

চলতি বছরের মার্চ মাসে, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ‘ব্র্যান্ড বঙ্গালি’ যাত্রা শুরু করেছিল। আলিপুরের ‘উত্তীর্ণ’ মুক্তমঞ্চে হয়েছিল বিশাল অনুষ্ঠান। ঠিক হয়েছিল, লিলুয়া হোমের মেয়েদের তৈরি পোশাক, গয়না, ব্যাগ, বেল্ট এই ব্র্যান্ডের নামে বিক্রির জন্য রাখা হবে বিশ্ববাংলার সব দোকানে। লাভের টাকা জমা হবে মেয়েদের নামে। দুর্গাপুজোর বাজার ধরে প্রকল্পে গতি আনার পরিকল্পনাও করা হয়েছিল তখনই। কিন্তু এই সাত মাসে বিশ্ববাংলার কোনও দোকানে ‘ব্র্যান্ড বঙ্গালি’র জিনিস রাখা হয়নি। পুজোর বাজার ধরা দূরে থাক, লিলুয়া হোম সূত্রের খবর, গত দু’-তিন মাসে জিনিসপত্র তৈরি হয়নি বললেই চলে। প্রশিক্ষণেরও তথৈবচ অবস্থা। তাই পুজোয় বিক্রির জন্য কিছু তৈরি করা যায়নি। হোমের মেয়েরাও আশাহত।

যারা এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী হয়েছিল, সেই রাজ্য শিশু অধিকার ও সুরক্ষা কমিশনও মেনেছে, এই জিনিস তৈরি ও বিক্রির জন্য যে সময়, পরিকল্পনা এবং উদ্যোগ দরকার ছিল, সেটা তারা দিতে পারেনি। কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ব্যবসা শুরু করার একটা প্রক্রিয়া থাকে। অনেক পরিকল্পনা করতে হয়। কিন্তু গত কয়েক মাস আমরা অন্য কাজে এমন ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম যে ব্র্যান্ড বঙ্গালির কাজ এগোতে পারিনি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্ববাংলায় রাখতে গেলে জিনিসের উৎপাদন বেশি করে করতে হবে। বিশেষ করে পুজোর বাজার ধরার জন্য সেটা দরকার। এ বছর পারা গেল না। তবে আমরা বড়দিনের বাজার ধরার চেষ্টা অবশ্যই করব।’’

একই কথা বলেছেন নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা, ‘‘উন্নত মানের জিনিস বেশি সংখ্যায় তৈরি করতে আরও প্রশিক্ষণের দরকার। তবে সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হোমের মেয়েদের তৈরি জিনিস আমরা উপহার দিয়েছি। তার টাকা মেয়েদের নামে জমা পড়েছে।’’ মন্ত্রীর কথায়, ‘‘বিশ্ববাংলায় ওদের জিনিস কিছু দিনের মধ্যেই দেওয়া হবে। অনলাইনেও যাতে বিক্রি করা যায়, সেটা দেখা হচ্ছে।’’

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যথাযথ প্রস্তুতি না নিয়ে দফতর এত প্রচার চালিয়ে ব্র্যান্ডের উদ্বোধন করল কেন? এই তাড়াহুড়ো কি তা হলে নিছক বাহবা কুড়োনোর জন্য? অন্য বহু সরকারি আর্থিক পুনর্বাসন প্রকল্পের মতো মাঝপথে ভরাডুবিই কি এর ভবিষ্যৎ? এ ব্যাপারে কেউ মন্তব্য করতে চাননি।

ব্র্যান্ড বঙ্গালির জিনিসপত্র তৈরির জন্য আট মাস ধরে হোমের মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল। সেই প্রশিক্ষণ নেয় সেখানকার আবাসিক কিছু বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা কিশোরীও। বিবি বলেন, ‘‘আমিও মাঝে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তবে আমি আবার গিয়ে ওদের প্রশিক্ষণ দিতে পারি। বিক্রির ব্যাপারটা আমি বলতে পারব না।’’

এই দেবীপক্ষে এখনও তাই স্বনির্ভরতার স্বাদ পেল না লিলুয়া হোমের মেয়েরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE