ডেঙ্গি নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগে সরব সব বিরোধী দল। চিকিৎসকদের একাংশেরও অভিযোগ, তথ্য চেপে যাওয়ায় ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে ডেঙ্গি। বরং সব তথ্য খোলাখুলি জানিয়ে সাধারণ মানুষকে নিয়ে কাজে নেমে পড়লে ডেঙ্গিকে বাগে আনা যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা। আর এ প্রসঙ্গেই তাঁরা তুলে আনছেন শ্রীরামপুরের উদাহরণ।
কী সেই উদাহরণ?
ঠিক এক বছর আগে শ্রীরামপুরের কয়েক হাজার মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় অন্তত চার জনের। তথ্য গোপন না করে স্বাস্থ্য দফতর শ্রীরামপুরে ডেঙ্গিকে ‘মহামারি’ ঘোষণা করে। ফল মেলে হাতেনাতে। শহরে ডেঙ্গি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকে। এ বার আক্রান্তের সংখ্যা হাতেগোনা। পুরসভার পরিসংখ্যান বলছে, বছরের গোড়া থেকে এ পর্যন্ত শ্রীরামপুরে ডেঙ্গিতে ৪০-৪৫ জন আক্রান্ত হন। বেশির ভাগই ইতিমধ্যে সুস্থ। বর্তমানে জনাদশেক আক্রান্ত। মৃত্যু নেই এখনও। মশা নিধন নিয়েও পুরসভার বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগ নেই।
পুরকর্তাদের একাংশও মানছেন, গত বার এখানে ডেঙ্গিকে রাজ্য সরকার ‘মহামারি’ ঘোষণা করাটা কাজে এসেছে। এক পুরকর্তা তো বলেই দিলেন, ‘‘গতবার মহামারি ঘোষণার পরে আমরা এ বার আগাম মাঠে নেমেছি। তাই ফল পাচ্ছি। ঘটনা সত্য হলে স্বীকারে সমস্যা কোথায়?’’
কেমন সেই মাঠে নামা?
এ বার ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই পুরসভার প্রতিটি এলাকায় ব্লিচিং পাউডার এবং মশা মারার তেল ছড়ানো শুরু হয়। জমা জলের খোঁজে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি তল্লাশি শুরু করেন। পুর কর্তৃপক্ষ পুরকর্মীদের কাজে নজরদারির জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালু করেন। পুরকর্মীরা প্রতিটি বাড়িতে মাসে অন্তত একবার যাচ্ছেন কিনা, তা সেই কার্ডে লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যতদিন জ্বরের আশঙ্কা থাকবে, ততদিনই ওই সব প্রক্রিয়া চলবে। কাজে কোনও ছেদ পড়বে না।’’ গতবার ‘মহামারি’ ঘোষণার আগে পুরসভার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগই ছিল, দেরিতে মাঠে নামার। এ বার তা হয়নি।
এই মরসুমে জ্বর-ডেঙ্গি রাজ্যের কোনও একটি-দু’টি এলাকায় সীমাবদ্ধ নেই। দেগঙ্গা, বাদুড়িয়া-সহ উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশ, পশ্চিম মেদিনীপুর, নদিয়া, এমনকী কলকাতারও জ্বর-ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই সরকারের দিকে আঙুল তুলেছে বিরোধীরা। চিকিৎসা পরিষেবা, জঞ্জাল সাফাই বা মশা নিধন নিয়ে অভিযোগও কম নেই।
দিনকয়েক আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছিলেন, রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে অযথা আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে। কিছু অসৎ ব্যক্তি এবং কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ কাজ করছে। ডেঙ্গি নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় সব রকম পদক্ষেপ করছে। সে দিন পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে ১৩ জনের মৃত্যু হয় বলে তিনি অবশ্য মেনে নেন।
এখানেই আপত্তি বিরোধীদের। তাদের প্রশ্ন, পরিস্থিতি যে জটিল, তা কেন মানতে চাইছে না রাজ্য? কেন তথ্য ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে? অনেকে ‘শ্রীরামপুর মডেল’-এর কথাও তুলছেন। সকলকে নিয়ে মাঠে নামলে যে আখেরে লাভ হয়, সে কথাও বলছেন কেউ কেউ।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ডেঙ্গির দায় এড়াতে সরকার অজানা জ্বরের কথা বলছে। সেটা আরও ভয়ঙ্কর। ডেঙ্গি যদি সরকার মানে, তা হলে কি ক্ষমতা চলে যাবে ওদের?’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ শুক্রবার বাগনানে বলেন, ‘‘নিজেদের অপদার্থতাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা না করে সরকারের উচিত কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ডেঙ্গি মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা করা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy