—নিজস্ব চিত্র।
গরমের ছুটিতে সিকিম বেড়াতে গিয়ে কর্মস্থলে আর বেঁচে ফেরা হল না ৬ পর্যটকের।
সিকিম পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ সিকিমের লাচুং থেকে গ্যাংটক ফেরার পথে উত্তর সিকিমের ফেংগলা এলাকায় রাস্তার একটি বাঁকের মুখে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে গাড়িটি ৩৫০ ফুট নীচে খাদে পড়ে যায় পর্যটকদের গাড়িটি। ঘটনাস্থলেই মারা যান পাঁচ জন। পরে হাসপাতালে আর এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা সকলেই পলতার বাসিন্দা।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে তিন জন মহিলা, দু’জন পুরুষ ছাড়াও একটি শিশু রয়েছেন। রাতেই দুঘর্টনার খবর পেয়ে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। গাড়িটি পুরোপুরি দুমুড়েমুচড়ে গিয়েছিল। আলো জ্বালিয়ে অনেক চেষ্টা করে গাড়িটির ভিতর থেকে মৃত ও আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। গাড়িটির চালক-সহ তিন জনের সিকিম হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। পূর্ব সিকিমের পুলিশ সুপার ডিবি গিরি বলেন, ‘‘একে পাহাড়ের অন্ধকার, তার পরে আবহাওয়া ভাল না থাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দু’টি পরিবারের মধ্যে দণ্ডপাট পরিবারের কর্তা সুভাষচন্দ্র দণ্ডপাট দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। গাড়িটি খাদে পড়ার সময় তিনি একটি গাছের ডাল ধরে ফেলেছিলেন। তাতেই প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু তাঁর স্ত্রী জসমিন দণ্ডপাট (৩৩) ও কন্যা শ্রীপর্ণার (৬) মৃত্যু হয়েছে। আর এক পরিবারের কর্তা মাইকেল বাগ (৪৪), স্ত্রী সুজাতা বাগ (৪০), ছেলে সুভম বাগ (১৪) ও এক কন্যা শেফালি বাগ (১৫) মারা গিয়েছেন। প্রাণে বেঁচে রয়েছে মাইকেল ও সুজাতার ছোট ছেলে, চার বছরের সিদ্ধার্থ।
গ্যাংটক থেকে প্রায় ১৫-১৬ কিলোমিটার দূরে পূর্ব সিকিমের পানথাং। ছোট ছোট পাহাড় ঘেরা ওই অঞ্চলের রাস্তাটির অনেক জায়গাতেই অনেকটা খাড়াই রয়েছে। এই ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়েই লাচুং এবং লাচেন যেতে হয়। পলতার ওই দু’টি পরিবারের ৮ জনের দলটি ঘটনার এক দিন আগেই গ্যাংটক আসে। হোটেল থেকে ছোট গাড়িতে তাঁদের লাচুং ও লাচেন ঘোরার ব্যবস্থা করা হয়। সকালে রওনা হয়ে দিনভর সেখানে ঘোরাঘুরি করেন তাঁরা। সন্ধ্যার পর সেখান থেকে রওনা হয়ে তাঁরা ফের গ্যাংটক ফিরছিলেন। রাতে ওই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
আরও পড়ুন: রাত ১০টা বাজলে মাইক নয়: মুখ্যমন্ত্রী
সুভাযবাবু ও মাইকেলবাবু দু’জনেই ইছাপুরে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘গান অ্যান্ড শেল’ ফ্যাক্টরির কর্মী। বুধবার ভোরে দুর্ঘটনার খবরটি প্রথমে ওখানেই আসে। সেখান থেকেই পাড়ায় খবর যায়। ওই সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার সঙ্গে সঙ্গে সকালেই তিন জন কর্মীকে সিকিমে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেন। পরে দুপুরে ওই সংস্থা থেকে আরও একটি দল সিকিমের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে বলে সংস্থা সূত্রে খবর। পূর্ব সিকিমের জেলাশাসক প্রভাকর বর্মা জানান, সিকিম পর্যটন দফতরের তরফে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং ওড়িশা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। মৃতদের আত্মীয়স্বজনেরা আসলে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে দেহগুলি।
সকাল না হতেই এতগুলি মৃত্যুর খবরে পাড়ার সবাই প্রথমে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তালা বন্ধ দু’টি বাড়ির সামনে জটলা শুরু হয়ে যায়। পরে সংস্থা থেকে সহকর্মীরা ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন শুনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফেরে। মাইকেলবাবু যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সেই বাড়ির মালিক জয়কুমার রাজভর বলেন, ‘‘আমরা ভাবতেই পারছি না এমন ঘটনা ঘটতে পারে।’’ পাড়ার লোকজন বলেন, বাচ্চাগুলির গরমের ছুটি পড়ায় বেড়াতে যাবে অনেক দিন ধরেই বলছিল। তাই মাইকেলবাবু ঠান্ডার জায়াগেতেই বেড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর অফিসের বন্ধু সুভাষবাবুও। গত ২৭ মে তাঁরা রওনা দেন।
কিন্তু শেষটা যে এই রকম হবে সেটা ভাবতে পারছেন না কেউই। সবার মুখেই এখন শুধু মাইকেলবাবুর ছোট ছেলে সিদ্ধার্থের কথা। কী করবে ওই শিশুটি, সেটাই ভাবিয়ে তুলেছে পড়শিদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy