Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শঙ্কুর বার্তা অমান্য করেই আন্দোলন

দলের ছাত্র সংগঠনের কাণ্ডকারখানায় অস্বস্তি কমার লক্ষণ নেই শাসক দলের। গত বুধবারেই টিএমসিপি-র দাবি মানতে না পেরে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়ার কলেজের মহিলা টিচার-ইনচার্জ পদত্যাগ করেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। তার রেশ কাটতে না কাটতেই এ বারের ঘটনাস্থল বর্ধমান। মঙ্গলবার শহরের বিবেকানন্দ মহাবিদ্যালয়ে গা-জোয়ারি করে অধ্যক্ষ-সহ সমস্ত শিক্ষককে প্রায় ছ’ঘণ্টা ঘেরাও করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বিরুদ্ধে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৮
Share: Save:

দলের ছাত্র সংগঠনের কাণ্ডকারখানায় অস্বস্তি কমার লক্ষণ নেই শাসক দলের।

গত বুধবারেই টিএমসিপি-র দাবি মানতে না পেরে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়ার কলেজের মহিলা টিচার-ইনচার্জ পদত্যাগ করেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। তার রেশ কাটতে না কাটতেই এ বারের ঘটনাস্থল বর্ধমান। মঙ্গলবার শহরের বিবেকানন্দ মহাবিদ্যালয়ে গা-জোয়ারি করে অধ্যক্ষ-সহ সমস্ত শিক্ষককে প্রায় ছ’ঘণ্টা ঘেরাও করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বিরুদ্ধে।

‘ছাত্র স্বার্থে’ আন্দোলনের নামে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত অশান্তি সম্প্রতি অস্বস্তি বাড়িয়েছে তৃণমূলের। শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দলের ছাত্র সংগঠনের এমন কাজে রাশ টানতে চেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডাকে এই মর্মে কড়া বার্তা দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দেন, শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির ‘অনুপ্রবেশ’ নিয়ন্ত্রণে কাউকে রেয়াত করা হবে না।

লালগড় গর্ভমেন্ট কলেজে এ দিন এক অনুষ্ঠানে শঙ্কুদেব বলেন, “আন্দোলনের আগে গোটা বিষয়টি বিশদে সংগঠনের রাজ্য বা জেলা নেতৃত্বকে জানিয়ে ছাড়পত্র নিতে হবে। কেউ যদি বলে, ‘কলেজ ঘেরাও করে দাও’, সেটা হবে না। তার দায়ও কেউ নেবে না। তেমনটা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ওই টিএমসিপি নেতার স্বীকারোক্তি, “অনেক সময় স্থানীয় ভাবে নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তের প্রভাব সংগঠনের ভাবমূর্তিতে পড়ে। সেটা আটকানোর দরকার আছে।”

শঙ্কুদেবের বার্তা তিনি জানেন বলে মেনেছেন টিএমসিপি-র বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। দাবি করেছেন সংগঠনের নিচুস্তরে সে কথা জানানো হয়েছে। তবে বাপ্পাদিত্য বলেন, “বিবেকানন্দ কলেজে অধ্যক্ষ এবং শিক্ষকদের ঘেরাও করা হয়েছে বলে জানি না। সংগঠনে কেউ তাঁদের ঘেরাও করার অনুমতিও নেয়নি।”

তা হলে টিএমসিপি কেন ঘেরাও করল বিবেকানন্দ মহাবিদ্যালয়ে? সারাদিনই কলেজ চত্বরে ছিলেন টিএমসিপি-র বর্ধমান শহর কমিটির সভাপতি রাসবিহারী হালদার। তিনি বলেন, “কাউন্সেলিংয়ের তারিখ দিয়েও কর্তৃপক্ষ তাঁদের হয়রান করায় ছাত্রেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ছাত্র সংসদ তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিল।”

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার অনার্সে ‘ইন্টারচেঞ্জ’-এর দিন ছিল। অর্থাৎ, যে ছাত্রেরা অনার্সের সিট না পেয়ে পাস পাঠ্যক্রমে ভর্তি হয়েছেন, বা কেউ যদি অনার্সের বিষয় পাল্টাতে চান, এমন ছাত্রদের নিয়ে কাউন্সেলিং ছিল। কাউন্সেলিং শুরু হওয়ার কথা ছিল সাড়ে ১০টায়। টিএমসিপি-র দাবি, অধ্যক্ষ শিবপ্রসাদ রুদ্র ১১টা নাগাদ কলেজে আসেন। পরে সাড়ে ১২টা নাগাদ জানান, কাউন্সেলিং হবে না। টিএমসিপি পরিচালিত কলেজের ছাত্র সংসদের দুই পদাধিকারী প্রদীপ হাজরা ও সন্দীপ দে-র বক্তব্য, “খামখেয়ালি মনোভাবের প্রতিবাদে অধ্যক্ষকে ঘেরাও করা হয়।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে অধ্যক্ষের দাবি, “আমি সময়ে কলেজে এসেছিলাম। আসলে নিজেদের ইচ্ছেমতো কাউন্সেলিং করাতে চাইছে টিএমসিপি। প্রতিবাদ করাতেই আমাকে ও সমস্ত শিক্ষকদের ৬ ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখা হয়।” পরে পুলিশ গিয়ে অধ্যক্ষ এবং শিক্ষকদের ঘেরাওমুক্ত করে। বুধবার অ্যাডমিশন কমিটির বৈঠক ডেকে ফের কাউন্সেলিংয়ের দিন স্থির করা হবে। “এ বার কাউন্সেলিং হবে পুলিশের উপস্থিতিতে”, বলেছেন অধ্যক্ষ।

বর্ধমানের ঘটনা জেনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “ঘেরাও-আন্দোলন সমর্থনযোগ্য নয়। অধ্যক্ষদের বারবার বলছি, তেমন হলে প্রশাসনের সাহায্য নিতে।” এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসের টিপ্পনী, “সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ কলেজ-শাখাগুলো মানবে না, টিএমসিপি-র ক্ষেত্রে সেটাই স্বাভাবিক।’’ ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “টিএমসিপি-তে কার কথা, কে মানে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE