Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

জমি চেয়ে হাইকোর্টে গেল শিবপুর

দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ফাঁকা পড়ে থাকলেও অধিগৃহীত জমিতে কোনও শিল্পতালুক হয়নি। এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানও হয়নি। উল্টে সেখানে শিল্পের নাম করে আবাসন আর বিশ্ববিদ্যালয় গড়ছে রাজ্য সরকার।

ক্ষতিপূরণের নেওয়ার আর্জি জানিয়ে মাইকে প্রচার প্রশাসনের।

ক্ষতিপূরণের নেওয়ার আর্জি জানিয়ে মাইকে প্রচার প্রশাসনের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৫
Share: Save:

দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ফাঁকা পড়ে থাকলেও অধিগৃহীত জমিতে কোনও শিল্পতালুক হয়নি। এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানও হয়নি। উল্টে সেখানে শিল্পের নাম করে আবাসন আর বিশ্ববিদ্যালয় গড়ছে রাজ্য সরকার। এই অভিযোগ তুলে জমি ফেরত চেয়ে এ বার হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলেন বোলপুরের শিবপুর মৌজার ক্ষতিগ্রস্ত জমি মালিক ও চাষিদের একাংশ।

শুক্রবার তাঁদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, ওই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল শিল্প তালুক গড়ার জন্য। বর্তমানে সেই জমিতে শিল্প তালুক না গড়ে আবাসন প্রকল্প ও বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। সেই কারণেহাসিবুর রহমান-সহ এলাকার কিছু মানুষ কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে তাঁদের দেওয়া জমি ফেরত চেয়েছেন। বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের আদালতে আগামী সপ্তাহে ওই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।

শিবপুরকে ঘিরে যখন পরিস্থিতিক্রমেই ঘোরাল হয়ে উঠছে, তখনই ক্ষতে প্রলেপ দিতে পাল্টা চাল দিল প্রশাসনও। আজ, শনিবার শিবপুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সভার ২৪ ঘণ্টা আগে হঠাৎ-ই এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে স্থানীয় সাবিরগঞ্জ যুব সঙ্ঘকে খেলার মাঠ গড়তে প্রকল্প এলাকা লাগোয়া নুরপুর মৌজা থেকে ৩ বিঘা জমিদান করল জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি তড়িঘরি ক্ষতিপূরণ বাবদ বাকি টাকা (বিঘে প্রতি ২০ হাজার) দেওয়ার কথা জানিয়েও পঞ্চায়েতকে দিয়ে এলাকায় এলাকায় মাইকে প্রচার চালাল প্রশাসন। আগামী বৃহস্পতিবার স্থানীয় রাইপুর-সুপুর পঞ্চায়েত অফিস তার শিবির হবে।

যদিও এত দিন পরে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা মনে পড়ল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে চাপের মুখে পড়েই কি এমন সিদ্ধান্ত? বোলপুরের শমীক পাণিগ্রাহীর দাবি, ‘‘সরকারি ভাবে এমন কোনও ঘোষণার কথা আমার জানা নেই।’’ আর বারবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি রাইপুর-সুপর পঞ্চায়েতের প্রধান প্রীতিকণা দাস। প্রশ্ন উঠেছে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নিয়েও। আন্দোলনকারীদের পক্ষে হাসিবউদ্দিন খান, উত্তম গড়াইদের মন্তব্য, ‘‘একাধিক বার এলাকায় গিয়ে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজে ক্ষতিপূরণ বাবদ রাস্তা লাগোয়া জমির ক্ষেত্রে ৯ লক্ষ এবং বাকি ক্ষেত্রে ৮ লক্ষ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এখন ওই জমি এবং আশপাশের জমির দাম তার থেকে ঢের বেড়েছে। তবু আমরা পার্থবাবুর আশ্বাসটুকুই মেটানো হোক, সেই দাবি রেখেছি।’’ এ দিনের প্রচারকে ‘সরকারি প্রতারণা’ বলেই দাবি করছেন তাঁরা। আন্দোলনকারীদের অন্যতম মুখ ইউসুফ শেখের দাবি, ‘‘ক্লাবকে জমিদান আর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণাই প্রমাণ করছে, আমাদের আন্দোলনের ফলে সরকার কতটা চাপে রয়েছে। আমাদের সমস্ত দাবি মেটা না পর্যন্ত জমিরক্ষার এই আন্দোলন চলবে।’’ ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ-ই সরকারের ওই টাকা নিতে যাবেন না বলেও তাঁর দাবি।

বকে দেওয়া জমির পরিমাপ চলছে। —নিজস্ব চিত্র।

শিবপুরে শিল্পতালুকের জন্য ২০০১ সালে প্রায় ৩০০ একর জমি নেয় সরকার। বাম জমানায় অধিগৃহীত ওই জমির জন্য বিঘে পিছু ৬৮ হাজার টাকা ধার্য হলেও ৪৮ হাজার টাকা মিলেছিল বলে অভিযোগ। অনেকেই আবার ক্ষতিপূরণের চেক নেননি। ২০১৫-র শেষে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন— শিবপুরে ১৩১ একর জমিতে ‘গীতবিতান’ আবাসন গড়বে সরকার। বছরের গোড়ায় ২০ একর জমিতে বিশ্বভারতীর ধাঁচে বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কথাও জানান তিনি। জমির ৫০ একরে ‘বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজার’ (কুটির শিল্পের জন্য) ও ১০ একরে আইটি-হাবও গড়ছে সরকার।

যদিও শিল্পের জন্য অধিগৃহীত জমিতে আবাসন নয়, গড়তে হবে শিল্পই— এই দাবিতে অনড় ক্ষতিগ্রস্ত জমিদাতাদের একাংশ। সুপ্রিম কোর্টে সিঙ্গুর মামলার রায়ের পরে গত সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক বার প্রকল্প এলাকায় ঢুকে ভাঙচুর চালিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। অবশ্য এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের দাবি, “আমরা জোর করে কিছু করছি না। এলাকার মানুষ চাইছে কাজ হোক। কিছু লোক ওখানে নোংরামি করছে। আইটি হাব, বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। কর্মসংস্থান হবে।”

এই পরিস্থিতিতে আজ, শনিবার আন্দোলনকারীদের পাশে নিয়ে প্রতিবাদ সভা করতে আসছেন অধীরবাবু। তার জন্য এলাকায় প্রচারও শুরু হয়েছে। যার সমালোচনা করে সংবাদমাধ্যমের কাছে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দাবি করেছেন, ‘‘ওখানে শিল্পই হচ্ছে। কর্মসংস্থানও হবে। অধীরবাবু এলাকার মানুষকে তাতাতে আসছেন। মানুষের ক্ষতি করতে আসছেন। এলাকার মানুষকে বলব, কেউ ওই সভায় যোগ দেবেন না।’’

জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মির অবশ্য অভিযোগ, “পুলিশ-প্রশাসনের কাছে অধীরবাবুর সভার জন্য অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা শাসকদলের দাসে পরিণত হয়েছে। তাই সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ভাবে এখনও অনুমতি দেয়নি। এ দিন এলাকায় আমাদের প্রচার গাড়িও আটকেছে।’’ এলাকার মানুষ প্রতিবাদ সভায় যোগ দেবেন, এই আশঙ্কাতে ভুগেই তৃণমূল এমনটা করছে বলে কংগ্রেসের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shibpur High Court land
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE