Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

উচ্চমাধ্যমিকে সেরার সেরা জেলার শোভন

মেধাতালিকায় শুধু জায়গা পাওয়াই নয়, ৫০০ নম্বরের মধ্যে  ৪৯৮ পেয়ে রাজ্যে সেরার সেরা হলেন সিউড়ির বীরভূম জেলা স্কুলের ছাত্র শোভন মণ্ডল।

উচ্ছ্বাসে: উচ্চ মাধ্যমিকে সেরার সেরা হওয়ার পরে সহপাঠীদের কাঁধে শোভন মণ্ডল। সোমবার সিউড়িতে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

উচ্ছ্বাসে: উচ্চ মাধ্যমিকে সেরার সেরা হওয়ার পরে সহপাঠীদের কাঁধে শোভন মণ্ডল। সোমবার সিউড়িতে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

দয়াল সেনগুপ্ত ও শুভদীপ পাল
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ০০:১৭
Share: Save:

দু’বছর আগে মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় অষ্টম স্থান পাওয়ার পরে থেকেই আত্মীয়-পরিজনেরা বারবার একই কথা বলতেন তাঁকে— ‘‘উচ্চমাধ্যমিকেও তোমার নাম খবরের কাগজ, টেলিভিশনের পর্দায় দেখেতে চাই।’’ প্রত্যাশার চাপ ছিল নিজের উপরেও। সোমবার সকালে উচ্চমাধ্যমিকে ফল ঘোষণার পরে সে সব কেটে শুধু খুশির বন্যা চারপাশে।

মেধাতালিকায় শুধু জায়গা পাওয়াই নয়, ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৪৯৮ পেয়ে রাজ্যে সেরার সেরা হলেন সিউড়ির বীরভূম জেলা স্কুলের ছাত্র শোভন মণ্ডল।

মাধ্যমিকের থেকে উচ্চমাধ্যমিকে আরও ভাল ফল করে দারুণ খুশি শোভন। রাজ্যের মেধাতালিকায় ছেলের নাম প্রথমে, সিউড়ির সমন্বয়পল্লির ভাড়াবাড়িতে বসে টেলিভিশনে সে কথা শুনেই আবেগে ভাসলেন বাবা সুভাষ মণ্ডল, মা নূপুরদেবী। ছাত্রের এমন ফলে গর্বিত শোভনের স্কুলের শিক্ষকেরা।

ময়ূরেশ্বরের কোটাসুর হাইস্কুল থেকে ২০১৭ সালে মাধ্যমিক দিয়েছিলেন শোভন। ৬৮৩ নম্বর পেয়ে ওই পরীক্ষায় রাজ্যের মেধাতালিকার অষ্টমে ছিল তাঁর নাম। এর পরেই কাঠডিঘা গ্রামের বাড়ি ছেড়ে সপরিবার সিউড়ির ভাড়াবাড়িতে চলে আসেন সুভাষবাবু। ময়ূরেশ্বরের একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সুভাষবাবু ভেবেছিলেন, তাঁকে এত পথ যাতায়াত করতে হলেও জেলার অন্যতম সেরা জেলা স্কুলে পড়ে ছেলে আরও ভাল ফল করুক উচ্চ মাধ্যমিকে। একই চাওয়া ছিল নূপুরদেবীরও।

সোমবার সকালে খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোভনদের বাড়িতে ভিড় জমল। শোভনের মা-বাবার তখন ব্যস্ততার শেষ নেই। এক দিকে মোবাইল ফোন বেজেই চলছে, ছেলের কৃতিত্বের খবর দিচ্ছেন তাতে। তার মধ্যেই সময় বের করে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। কখনও ছেলের মুখে মিষ্টি তুলে দিয়ে বলছেন, ‘‘তুই যা দিয়েছিস, আমাদের আর চাওয়া কিছু নেই।’’ ছেলে মেধাতালিকায় স্থান পাবে, এমন আশা থাকলেও, কেমন ফল হয় তা নিয়ে শোভনের মতো উৎকন্ঠায় ছিলেন তাঁর বাবা-মা। উৎকন্ঠার অবশ্য কারণও ছিল। তাঁরা জানান, মাস কয়েক আগে নুপূরদেবীর পা ভেঙে যায়। তিনি জানান, সে জন্য কয়েকটা দিন ছেলের পড়াশোনায় একটু ব্যাঘাত ঘটেছিল। কিন্তু গভীর রাত পর্যন্ত পড়ে সেই ঘাটতি মিটিয়ে নেন শোভন। উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম স্থানাধিকারী বলছেন, ‘‘সব বিষয়েই টিউশন ছিল। মা-বাবা, শিক্ষক এবং সহপাঠীদের পাশে পেয়েছি সব সময়। সাধ্যমতো পড়াশোনা করার চেষ্টা করেছি। রেজাল্ট ভাল হবে জানতাম। তবে প্রথম হবো ভাবিনি।’’

ক্রিকেট খুব প্রিয় শোভনের। প্রিয় ক্রিকেটার বিরাট কোহালি। তবে তাঁর আদর্শ এপিজে আব্দুল কালাম। শোভনের বক্তব্য, ‘‘ওঁর সব কথাই অনুপ্রেরণা।’’ হাসপাতাল থাকলেও এত মানুষকে চিকিৎসকের অভাবে দুর্ভোগে পড়তে হয় বলে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চান শোভন।

বিনয়ী ওই ছাত্র যে রাজ্যের সেরাদের মধ্যে জায়গা পেতে পারে, তা আন্দাজ করেছিলেন শিক্ষকেরাও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন সাহা বলেন, ‘‘শোভন এমন এক ছাত্র যে স্কুলের মান বাড়িয়ে দিয়েছে। সর্বকালের সেরা রেজাল্ট ওর। আমরা গর্বিত।’’ স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, শোভনের পাশাপাশি রাজ্যের মেধাতালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে ওই স্কুলের আরেক ছাত্র শীর্ষেন্দু ঘোষ। স্কুলের সামগ্রিক ফলও দারুণ। মোট ১১১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬৯ জন ৮০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE