Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শ্যামল আসলে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ, দাবি তুষারের

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, এক গাদা শর্ত মানার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে দেখা করতে রাজি হলেন তুষার মজুমদার ওরফে বিশু। বললেন, “চলে আসুন নতুনবাজারে।” ব্যানার্জিপাড়া থেকে কিলোমিটার তিনেক দূরে নতুনবাজার এলাকা। সেখানে রেললাইনের পাশ দিয়ে নেমে গিয়েছে সরু ইটের রাস্তা। খানিকটা এগোতেই মার্বেলের সিঁড়িওয়ালা নির্মীয়মাণ দোতলা বাড়িটি।

বামনগাছিতে নিজের বাড়িতে তুষার মজুমদার। —নিজস্ব চিত্র

বামনগাছিতে নিজের বাড়িতে তুষার মজুমদার। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৮
Share: Save:

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, এক গাদা শর্ত মানার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে দেখা করতে রাজি হলেন তুষার মজুমদার ওরফে বিশু। বললেন, “চলে আসুন নতুনবাজারে।”

ব্যানার্জিপাড়া থেকে কিলোমিটার তিনেক দূরে নতুনবাজার এলাকা। সেখানে রেললাইনের পাশ দিয়ে নেমে গিয়েছে সরু ইটের রাস্তা। খানিকটা এগোতেই মার্বেলের সিঁড়িওয়ালা নির্মীয়মাণ দোতলা বাড়িটি। বাড়ির সামনে পাহারায় থাকা চার-পাঁচ জন যুবক এগিয়ে এলেন। পরিচয় দিতেই সটান নিয়ে চলে গেলেন ভিতরে।

কিছু ক্ষণ পরে এক যুবকের মোটরবাইকে চেপে এলেন বিশু। মাঝারি উচ্চতার বছর পঞ্চাশের পেটানো চেহারা। গায়ে সাদা টি-শার্ট আর নীল প্যান্ট। আপাদমস্তক ভাল করে জরিপ করে নিয়ে বললেন, “বলুন কী জানতে চান? কিন্তু আমি যা বলব, হুবহু তাই লিখতে হবে।”

ছোট জাগুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কুলবেড়িয়া এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য বিশু। সৌরভের পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, তাঁরই ছত্রচ্ছায়ায় ব্যানার্জিপাড়ায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল সৌরভ চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত শ্যামল কর্মকার। এই অভিযোগের কথা তুলতেই হাত নেড়ে উড়িয়ে দিলেন বিশু। বলেন, “শ্যামল অনেক বার গ্রেফতার হয়েছে। আবার ছাড়া পেয়েছে। শেষ বার জেলে যাওয়ার পরে ছাড়া পেয়ে যে এলাকায় ফিরে এসেছে, সেটাই তো জানতাম না। প্রকাশ্যে ওকে দেখাই যায়নি।”

তবে যে বাসিন্দারা বলছেন, দিন পনেরো আগে যখন শ্যামলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বামনগাছি-কুলবেড়িয়া এলাকার বাসিন্দারা তাকে আটক করে মারধর করেছিলেন, তখন আপনিই উদ্ধারকর্তা হিসেবে উদয় হয়েছিলেন? শ্যামল যদি আপনার ঘনিষ্ঠ না-ই হবে, তা হলে তাকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন কেন?

কিছু ক্ষণ গুম মেরে বসে থাকার পরে বলতে শুরু করেন বিশু। বলেন, “পাড়ার রাস্তায় লাইট ভাঙাকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল। শ্যামলকে জিজ্ঞেস করায় ও বলেছিল, আমি তো ভাঙিনি। এর পরেই গ্রামের কিছু লোক আর বাইরের কয়েক জন মিলে মারধর করে শ্যামলকে। মারতে মারতে তারা নাকি স্লোগান দিচ্ছিল জয় শ্রীরাম।” বিশুর দাবি, “খবর পেয়ে নির্বাচিত সদস্য হিসেবে আমি এলাকায় গিয়েছিলাম। ৫০-৬০ জনের সঙ্গে আলোচনায় বসি। তখন শ্যামল ছিল না। আমি বলেছিলাম, মীমাংসা করতে গেলে উভয় পক্ষকেই দরকার। তখন এলাকার সবাই আমাকে বলল শ্যামলকে ডাকতে। আমার কাছে শ্যামলের নম্বর ছিল না। ওদের বলেছিলাম, শ্যামলের নম্বর জোগাড় করে দিতে। আমি ডেকে আনব। আজ পর্যন্ত সেই নম্বর আমাকে কেউ দেয়নি।”

২০০৮ সালে প্রথম বার পঞ্চায়েত সদস্য হয়েছিলেন বিশু। নির্দল প্রার্থী হিসেবে। যদিও তাঁর দাবি, “আমি তো আগে সিপিএম করতাম। সিপিএমের বাবুলাল দত্তের কাছেই আমার রাজনীতির হাতেখড়ি।” সেই বাবুলালকে হারিয়েই ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে বিশুর উত্থান। ভোটে জিতে যোগ দেন তৃণমূলে। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শ্যামলও বাবুলালের শিবিরেই ছিল। অভিযোগ, বিশুর হাত ধরে শিবির বদল করে শ্যামলও। সৌরভের পরিবারের পক্ষ থেকে বারবারই অভিযোগ করা হয়েছে, বিশুর ছত্রচ্ছায়ায় থেকেই ব্যানার্জিপাড়া এলাকায় রমরমা শ্যামলের। কিন্তু এ দিন বিশু বারবারই দাবি করেছেন, শ্যামল তাঁদের দলের নয়। সে এখন বিজেপি-র ঘনিষ্ঠ। তিনি বলেন, “তিন বছর আগে তো শ্যামল আমার বাড়িতেও হামলা করেছিল। কিছু দিন আগে এলাকায় আবার বিজেপির মন্দির নির্মাণ কর্মসূচিতে শ্যামলকে দেখা গিয়েছে।”

বিপাকে পড়ে শাসক দলের এমন ঝেড়ে ফেলার রাজনীতি অবশ্য নতুন নয়। গত মাসে হাওড়ার হোটেল-মালিক সুমিত নাহা মৃত্যুর ঘটনায় হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী দীপক সাউয়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ওই এলাকার তৃণমূল নেতা সন্তোষ সাহানির ছত্রচ্ছায়াতেই রমরমা বেড়েছিল দীপকের। যদিও ঘটনার পরে সন্তোষ জানিয়ে দেন, দীপক তাঁদের দলের কেউ নন। এখানেও কি শ্যামলকে তা-ই করা হচ্ছে?

এ দিন তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “শ্যামল বিজেপিতে ছিল। এখনও আছে। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনও সংশয় নেই।” এর উত্তরে বিজেপির জেলার সহ-সভাপতি শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “সাহস থাকে তো ওনারা সিবিআই-কে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করান না। তা হলেই তো সব বার হয়ে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE