Advertisement
E-Paper

বিধ্বস্ত বাবলি, রক্তচাপ বেড়ে ২১০/১৩০

সকাল থেকে বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ। দু’কামরার এক চিলতে ফ্ল্যাটে একটা ঘরে ছেলেকে রেখে বাইরে থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। যাতে কেউ ঢুকে পড়তে না পারে। অন্য ঘরে তিনি একা। বাইরে বেল বাজানো, কড়া নাড়া চলছে তো চলছেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৮:০৫
সাংবাদিকদের মুখোমুখি সিদ্ধার্থ দাস। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি সিদ্ধার্থ দাস। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

সকাল থেকে বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ। দু’কামরার এক চিলতে ফ্ল্যাটে একটা ঘরে ছেলেকে রেখে বাইরে থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। যাতে কেউ ঢুকে পড়তে না পারে। অন্য ঘরে তিনি একা। বাইরে বেল বাজানো, কড়া নাড়া চলছে তো চলছেই।

কৌতূহলীদের ভিড় ঠেকাতে ক্লান্ত বাবলি দাসকে মাঝেমধ্যে দু’এক ঝলক দেখা যাচ্ছিল। ওড়নায় মুখ ঢাকা। চেনা-জানা দু’এক জন ছাড়া ভিতরে ঢোকার অনুমতি ছিল না কারও। দুপুরে দমদম পুরসভার কাউন্সিলর রিঙ্কু দত্ত হন্তদন্ত হয়ে এক ডাক্তারকে সঙ্গে নিয়ে ভিতরে ঢুকলেন। জানা গেল, দীর্ঘ সময় মানসিক চাপ সামলাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সিদ্ধার্থ দাসের স্ত্রী বাবলি। কিছু ক্ষণ পর নকুলচন্দ্র বিশ্বাস নামে ওই ডাক্তার বাইরে বেরিয়ে জানালেন, বাবলির রক্তচাপ বেড়ে ২১০/১৩০ হয়ে গিয়েছে। রক্তচাপ কমানোর ইঞ্জেকশন দিতে হয়েছে। বিছানা থেকে ওঠার মতো অবস্থাও নেই তাঁর। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন ডাক্তারবাবু। কিন্তু সে কথা শোনেননি বাবলি। জানিয়েছেন, আপাতত এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও নড়বেন না তিনি।

দুর্গানগর স্টেশন থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার ভিতরে তস্য গলিতে একটা দোতলা বাড়ির এক তলায় দাস পরিবার ভাড়া এসেছে বছর দেড়েক হল। তার আগে পাশেই এক কামরার একটা ফ্ল্যাটে থাকতেন তাঁরা। বাবলি জানান, ছেলের পড়াশোনার চাপ বাড়ছিল। তাই আর্থিক ভাবে সামলানো চাপের হয়ে যাবে তা বুঝেও তুলনামূলক ভাবে বেশি ভাড়ার দু’কামরার ওই বাড়িতে চলে আসেন তাঁরা।

এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে এই পরিবারের রীতিমতো সদ্ভাব রয়েছে বলে জানালেন বাড়িওয়ালা শ্রীদাম মণ্ডল। বাড়ির বাইরে ভিড় করা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের রীতিমতো বিরক্ত হয়েই শ্রীদামবাবু বলেছেন, ‘‘২৫ বছর আগে কী হয়েছে তা নিয়ে এখন ওঁদের জেরবার করছেন কেন? ওঁদের তো কোনও দোষ নেই। এই মানসিক চাপ সহ্য করতে করতে ওঁদের কারও যদি কোনও ক্ষতি হয়ে যায়, তা হলে তার দায় কে নেবে?’’

বস্তুত, এই মনোভাব গোটা পাড়ারই। সিদ্ধার্থ, তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে আগলে রাখার চেষ্টা করছেন সকলেই। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রটি এ দিন স্কুলে যায়নি। বাবা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন সকালেই। তার পর থেকে একটা ঘরে তাকে রেখে বাইরের সব কিছু সামলাচ্ছেন মা বাবলিই। এ দিন সাংবাদিকদের বার বারই তিনি বলেছেন, ‘‘আমার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আমাকে আর বিরক্ত করবেন না। আমি আগে এর বিন্দুবিসর্গ জানতাম না। এখন জেনেছি। ব্যস, এর বেশি আর কিছু নয়।’’

তবে পাড়ার লোকেরা আগলে রাখার চেষ্টা করলেও গুজবের ডালপালা মেলা শুরু হয়েছে এ দিন সকাল থেকেই। বাড়ির অদূরেই সুকুর আলির মোড়ে সকাল থেকেই জটলা চলছে। দাস পরিবারকে যাঁরা কস্মিনকালেও চিনতেন না তেমন অনেকেই সেখানে ভিড় করে আলোচনা করছেন, ‘‘আরে ওই খুনিটা তো ধরা পড়েছে। লোকটা এই পাড়াতেই থাকত। আগে কেউ জানতে পারেনি।’’ সিদ্ধার্থের প্রতিবেশীরা অনেকেই এগিয়ে গিয়ে এই ধরনের আলোচনার প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! দিনভর জটলার মুখগুলো বদলেছে, কিন্তু আলোচ্য বিষয়টা বদলায়নি। বাবলির আশঙ্কা, এই ধরনের গুজবের জন্য এর পর তাঁর ছেলের পক্ষে স্কুলে যাওয়াটাও সমস্যা হয়ে যাবে।

আপনাদের দাম্পত্য সম্পর্কে কখনও তৃতীয় কারও ছায়া পড়ছে বলে সন্দেহ হয়েছে?

তিনি বলেন, ‘‘১৯৯৭ সালে আমাদের বিয়ে হয়েছে। তার পর থেকে এই এলাকাতেই আছি। এখানে সকলে জানে আমার স্বামী আমাকে কতটা সুখে রেখেছেন। ইন্দ্রাণীকে আমি কখনও দেখিনি। কিন্তু আমার স্বামীর মতো মানুষের সঙ্গে যিনি থাকতে পারেননি, আমি নিশ্চিত তাঁর মধ্যে সংসার করার কোনও বাসনা ছিল না।’’

প্রথম যখন শিনা হত্যার বিষয়টা সামনে আসে, তখন কি আপনার স্বামী বুঝতে পেরেছিলেন?

বাবলি বলেন, ‘‘সেটা উনিই বলতে পারবেন। আমাকে কিছু বলেননি। আমার শাশুড়ির ছবি দেখে প্রথম বুঝতে পারি। তখন উনিও বিষয়টা জানান। আমি কোনও বাড়তি প্রশ্ন করিনি। কারণ, উনি মানসিক চাপে রয়েছেন সেটা বুঝতে পারছিলাম। অতীত নিয়ে বাড়তি কৌতূহল দেখিয়ে ওঁকে বিব্রত করতে চাইনি।’’

এর পর পুলিশ যদি ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনও রকম আইনি পথে যায়, সে ক্ষেত্রে আপনি কি ওঁর পাশে থাকবেন?

বাবলির উত্তর, ‘‘আমি তো কোথাও যাইনি। ওঁর পাশেই আছি।’’

পাড়ার লোকেরা জানিয়েছেন, তিন জনের এই পরিবারকে তাঁরা সবসময় হাসিখুশি দেখেই অভ্যস্ত। ‘সুখি পরিবার’ বলতে যে ছবিটা চোখের সামনে ভাসে, দাস পরিবার একেবারেই সে রকম। একই কথা বলেছেন বাবলিও। তাঁর কথায়, ‘‘আমার স্বামী আমাকে খুবই সুখে রেখেছেন। আমার কোনও অভিযোগ নেই। আমার ছেলেকেও বলেছি, তোমার বাবা কত কষ্ট করে তোমাকে বড় করছেন তা তোমার চেয়ে ভাল কেউ জানে না। তাই যে পরিস্থিতিই সামনে আসুক না কেন, বাবাকে কখনও অবিশ্বাস কোরো না।’’

siddharth das kolkata murder school dumdum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy