Advertisement
E-Paper

শিল্পাঞ্চলে বিরোধীর ঘর ভাঙল তৃণমূল

লোকসভা ভোটে হারের ধাক্কা বছর দেড়েক পরে পুরভোটেই কাটিয়ে উঠেছিল তৃণমূল। আসানসোলে এ বার বিরোধী ঘরে ভাঙনও ধরালো তারা। ছ’জন বিরোধী কাউন্সিলরকে দলে টানার পরে ১০৬ আসনের পুরসভায় তৃণমূলের কাউন্সিলরের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৪।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০০:১৫
অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে দলবদল। —নিজস্ব চিত্র।

অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে দলবদল। —নিজস্ব চিত্র।

লোকসভা ভোটে হারের ধাক্কা বছর দেড়েক পরে পুরভোটেই কাটিয়ে উঠেছিল তৃণমূল। আসানসোলে এ বার বিরোধী ঘরে ভাঙনও ধরালো তারা। ছ’জন বিরোধী কাউন্সিলরকে দলে টানার পরে ১০৬ আসনের পুরসভায় তৃণমূলের কাউন্সিলরের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৪। রবিবার আসানসোলের রবীন্দ্রভবনে দলের বর্ধমান জেলা পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে যে কাউন্সিলররা তৃণমূলে যোগ দেন তাঁদের মধ্যে ছ’জনই বিজেপির, যে দলের কাছে লোকসভা ভোটে আসানসোল কেন্দ্রে ধরাশায়ী হয়েছিল রাজ্যের শাসকদল। এ দিন সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন অন্ডালের এক জেলা পরিষদ সদস্য-সহ বেশ কিছু জনপ্রতিনিধিও।

রাজ্যের নানা প্রান্তেই সম্প্রতি বিরোধীদের ঘরে ভাঙন ধরিয়েছে শাসকদল। খনি-শিল্পাঞ্চলেও এ দিন সেই ঘটনা ঘটল। আসানসোলে ২০১৪ লোকসভা ভোটে ষাট হাজারেরও বেশি ভোটে জেতেন বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। তবে পরের বছর অক্টোবরে পুরভোটে সেই সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। ১০৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৮টিতে জেতে তারা। এর পরে বিধানসভা ভোটেও শিল্পাঞ্চলে আশানুরূপ ফল হয়নি তাদের। আসানসোল উত্তর ও কুলটি কেন্দ্রে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে ছিল। বাকি সব কেন্দ্রেই তৃণমূল ও বাম-কংগ্রেসের প্রার্থীদের থেকে পিছিয়ে ছিল তারা।

এ দিন পুরসভার আট কাউন্সিলরের মধ্যে চার জনই দল ছাড়ায় সংগঠন আরও মুখ থুবড়ে পড়ল কি না, সে প্রশ্নে বিজেপির আসানসোল জেলা সভাপতি তাপস রায়ের বক্তব্য, ‘‘প্রলোভনের কাছে ওই কাউন্সিলররা মাথা নিচু করেছেন। নাগরিকদের প্রতারিত করে ওঁরা শাসকদলের বশবর্তী হয়েছেন।’’ তাঁর দাবি, সংগঠন বা নেতৃত্বের প্রতি সাধারণ কর্মীদের কোনও অনাস্থা নেই। দলের অন্য কাউন্সিলর বা নেতাদের ব্যাপারে কতটা আত্মবিশ্বাসী তাঁরা, সে প্রসঙ্গে তাপসবাবু বলেন, ‘‘সাংগঠনিক স্তরে আলোচনা শুরু হয়েছে। বাকি কাউন্সিলরদের সঙ্গেও কথা চলছে।’’

বিজেপির টিকিটে জিতে এসে দল পাল্টানো চার কাউন্সিলর প্রবীর চট্টোপাধ্যায়, উষা সিংহ, রেশমা রামকৃষ্ণান ও রাধা সিংহ অবশ্য কোনও লোভের কাছে মাথা নত করার কথা মানতে চাননি। তাঁদের দাবি, উন্নয়নের কাজে আরও বেশি করে সামিল হতেই শাসকদলে যোগ দিলেন তাঁরা। প্রবীরবাবু অবশ্য বিজেপি নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভও উগরে দেন। তিনি দাবি করেন, দলে উপযুক্ত সম্মান পাচ্ছিলেন না। নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা থেকেই দল ছেড়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমি নেতাদের অনেক বার আমার বক্তব্য জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কেউই আমার কথা শুনতে চাননি।’’ রেশমা রামাকৃষ্ণান বলেন, ‘‘পুরনো কথা আর বলতে চাই না। এলাকার মানুষের মতামত নিয়েই তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।’’

এ দিন তৃণমূলে যোগ দেন ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে জয়ী সাধন পাল ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে কাউন্সিলর হওয়া অমিত তুলসিয়ানও। তাঁদেরও দাবি, এলাকায় আরও ভাল কাজ করাই লক্ষ্য। তাতে সুবিধার জন্য দল পাল্টালেন। যদিও ফরওয়ার্ড ব্লক এবং কংগ্রেস নেতৃত্বও শাসকদলের বিরুদ্ধে লোভ দেখিয়ে কাউন্সিলর ভাঙিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন।

এ দিন সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন অন্ডালের জেলা পরিষদ সদস্য রেনুদেবী নুনিয়া, পঞ্চায়েত সমিতির দুই সদস্য দয়াশঙ্কর লোহার ও গুজি কোরা এবং কাজোড়া পঞ্চায়েতের সাত সদস্য। তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরেই এই জনপ্রতিনিধিরা দল ছাড়া নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এ দিনের দলবদলের পরে অন্ডাল পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের আস দাঁড়াল ১৭, বামেদের ৫। জেলা পরিষদের তিনটি আসনই হল তৃণমূলের। কাজোড়া পঞ্চায়েতে ২১টি আসনের ১৮টি তৃণমূলের হল। সিপিএমের দামোদর-অজয় জোনাল সম্পাদক তুফান মণ্ডল অবশ্য লোভ ও ভয় দেখিয়ে তৃণমূল তাঁদের দলের লোক ভাঙিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

এ দিন রবীন্দ্রভবনে জেলা পর্যবেক্ষক অরূপবাবু তাঁর বক্তব্যে বিরোধী দলের যোগ্য নেতা-কর্মীদের দলে টানার পরামর্শ দেন। সভা শেষে তিনি দাবি করেন, আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির নেতৃত্বে শহরে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। তাতে সক্রিয় ভাবে যোগ দিতেই বিরোধী শিবির থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। সম্প্রতি আসানসোল বাসস্যান্ডে দলের শ্রমিক সংগঠনের এক পক্ষ অন্য পক্ষের দিকে তোলাবাজির অভিযোগ তোলার ঘটনা প্রসঙ্গে অরূপবাবু বলেন, ‘‘জেলায় আইএনটিটিইউসি-র কমিটি নেই। দ্রুত তা তৈরি হবে। তার পরেই সমস্ত শাখা কমিটি তৈরি করে দেওয়া হবে।’’ সেক্ষেত্রে শনিবার কী ভাবে কুলটিতে রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় সেল গ্রোথ ডিভিশনের কারখানার জন্য আইএনটিটিইউসি-র কমিটি ঘোষণা করলেন, সে প্রশ্নে অরূপবাবু বলেন, ‘‘বিষয়টি ঠিক জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

tmc Asansol BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy