Advertisement
E-Paper

মুছে ফেলা এসএমএস, ফাইল উদ্ধারের চেষ্টায় এনআইএ

এসএমএস করা হয়েছিল, সেটা জানা গিয়েছে। কিন্তু এসএমএস করে কী বার্তা দেওয়া হয়েছিল, তা জানা যায়নি। আবার ভুয়ো নামে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ‘চ্যাট’ করার কথা জানা গিয়েছে। কিন্তু সেই সব কথোকথন অ্যাকাউন্ট থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে না জঙ্গিরা কী তথ্য আদান-প্রদান করেছিল। শুধু তা-ই নয়, ইন্টারনেটের মাধ্যমে কিছু ফাইল ডাউনলোড করে নিয়ে সেগুলি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কম্পিউটারে সে সবের অস্তিত্ব নেই।

শিবাজী দে সরকার ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫২

এসএমএস করা হয়েছিল, সেটা জানা গিয়েছে। কিন্তু এসএমএস করে কী বার্তা দেওয়া হয়েছিল, তা জানা যায়নি। আবার ভুয়ো নামে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ‘চ্যাট’ করার কথা জানা গিয়েছে। কিন্তু সেই সব কথোকথন অ্যাকাউন্ট থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে না জঙ্গিরা কী তথ্য আদান-প্রদান করেছিল। শুধু তা-ই নয়, ইন্টারনেটের মাধ্যমে কিছু ফাইল ডাউনলোড করে নিয়ে সেগুলি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কম্পিউটারে সে সবের অস্তিত্ব নেই।

অথচ খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সূত্রে হদিস পাওয়া সন্ত্রাসবাদী চক্র সম্পর্কে ওই সব নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মিলতে পারে বলে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) মনে করছে। আর সে জন্যই সেই সব ফাইল, এসএমএস, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের চ্যাট পুনরুদ্ধার করতে বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছেন গোয়েন্দারা।

বর্ধমান বিস্ফোরণের সূত্র ধরে ওই জেলা এবং নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের বিভিন্ন জঙ্গি ডেরায় হানা দিয়ে গোয়েন্দারা কম্পিউটার হার্ড ডিস্ক, ইন্টারনেট ডঙ্গল, কয়েকটি মোবাইল ফোন ও ১৪টি সিমকার্ড উদ্ধার করেছেন। ওই সব সরঞ্জাম হায়দরাবাদের সাইবার ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছে এনআইএ। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, “ওই সব সরঞ্জাম থেকে বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যে সব তথ্য বার করা গেলে জঙ্গি মডিউলের আরও কয়েক জন চাঁইয়ের হদিস মিলতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে ঘাঁটি গেড়ে বসা জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর জাল কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত, তা-ও অনেকটা বোঝা যাবে।”

জঙ্গিদের ব্যবহৃত কম্পিউটার, হার্ড ডিস্ক, মোবাইল ফোন ও সিমকার্ড ঘেঁটে কিছু সূত্র ইতিমধ্যেই মিলেছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সন্ত্রাসবাদী চক্রে সামিল আরও কয়েক জন ও তাদের বাংলাদেশ যোগের তথ্য মিলেছে। গোয়েন্দাদের দাবি, সেপ্টেম্বরে কলকাতার দু’টি জায়গা থেকে বাংলাদেশে ফোনে কিছু কথোপকথন হয়েছিল। সেগুলির জঙ্গি সংস্রব থাকার আঁচ পেয়েছেন তাঁরা। তবে আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বৈদ্যুতিন সরঞ্জামগুলিতে লুকিয়ে রয়েছে বলে এনআইএ মোটামুটি নিশ্চিত। তদন্তকারীদের দাবি, সাধারণ ভাবে ওই সব তথ্য বের করা সম্ভব নয়। কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কে থেকে যাওয়া কিছু প্রমাণ, পাসওয়ার্ড দিয়ে আটকে রাখা তথ্য এমনিতে বার করা সম্ভব নয়। হায়দরাবাদের সাইবার ল্যাবরেটরিতে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে পাসওয়ার্ড ভেদ করে লুকনো তথ্যের হদিস মিলবে বলে গোয়েন্দাদের আশা। তা ছাড়া, মুছে ফেলা বা ‘ডিলিট’ করা নথিও ওই প্রযুক্তির সাহায্যে ‘রিট্রিভ’ বা পুনরুদ্ধার করতে চান গোয়েন্দারা।

২৮ অক্টোবর এনআইএ-র এক জন ডিএসপি-র নেতৃত্বে চার জন সাইবার বিশেষজ্ঞ অফিসার কলকাতায় এসেছিলেন। খাগড়াগড় কাণ্ডের সূত্রে উদ্ধার হওয়া কম্পিউটার ও হার্ড ডিস্ক ঘাঁটতে গিয়ে তাঁরা দেখেন, কিছু তথ্য পাসওয়ার্ড দিয়ে আটকানো। পাসওয়ার্ড ভেদ করে সেগুলির কয়েকটি কলকাতায় বসেই উদ্ধার করেন গোয়েন্দারা। বৃহস্পতিবার ওই সাইবার বিশেষজ্ঞরাই বাজেয়াপ্ত করা বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম নিয়ে ফেরেন।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর ল্যাপটপে কিছু জেহাদি কাজকর্মের ছবি মিলেছে। তার মধ্যে সম্প্রতি আইএস জঙ্গিদের হাতে কয়েক জন ব্রিটিশ ও মার্কিন নাগরিকের শিরচ্ছেদ হওয়ার ছবিও রয়েছে। সেই সঙ্গে পাওয়া গিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন জঙ্গি শিবিরের ভিডিও।

সিমকার্ড ঘেঁটে বাংলাদেশের সঙ্গে ফোনে কথোপকথনের প্রমাণও পেয়েছেন তদন্তকারীরা। কোথা থেকে ফোন করা হয়েছিল, তার নিকটবর্তী মোবাইল টাওয়ারের অবস্থানও মিলেছে। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, কলকাতার দু’টি টাওয়ারের কথাও জানতে পেরেছেন তাঁরা।

গোয়েন্দারা জেনেছেন, শাকিল গাজি ও শেখ কওসর বর্ধমানের একটি সাইবার কাফে থেকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ‘চ্যাট’ করত। তারা সে ভাবে কাদের সঙ্গে কী তথ্য আদানপ্রদান করেছিল, তা জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “বিভিন্ন ভুয়ো নামে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে দশটির মতো অ্যাকাউন্ট ছিল। সেগুলি বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া কয়েকটি জেলা থেকে ব্যবহার করা হত চ্যাট-এর জন্য।”

কী ভাবে ওই নথি উদ্ধার করা যাবে? সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম্পিউটার থেকে ফাইল যদি মুছে দেওয়া হয় (ডিলিট), তা হলে তা কিছু সফটওয়্যার মারফত ফের উদ্ধার করা সম্ভব। কিন্তু যদি পাকাপাকি ভাবে মুছে (ফরম্যাটিং) দেওয়া হয়, তা হলে সেগুলি উদ্ধার করার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতে পারে। সাইবার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “ওই কম্পিউটার বা হার্ড ডিস্কে যে সব কাজ করা হয়েছে, তার চিহ্ন মিলবে। কিন্তু সেই ফাইল পুরো ফিরিয়ে আনা যাবে কি না, তা নিশ্চিত বলা যায় না।” একই কথা প্রযোজ্য ফোনের ক্ষেত্রেও। সেখান থেকেও মুছে দিলে উদ্ধার করা কঠিন। তবে অসম্ভব নয়। আর সে জন্যই হায়দরাবাদের বিশেষ সাইবার ল্যাবরেটরির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।

রিজওয়ানুর রহমান মৃত্যু রহস্যের তদন্তে নেমে রিজের লেখা ও কম্পিউটার থেকে ডিলিট করে দেওয়া একটি সুইসাইড নোট কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক থেকে এই ভাবেই উদ্ধার করেছিল সিবিআই। এনআইএ-র তদন্তকারীদের একাংশ জানান, ২০১১ সালে দিল্লি হাইকোর্টের বাইরে বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে জানা যায়, কাশ্মীরের একটি সাইবার কাফে থেকে জঙ্গিরা ই-মেল করে ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল। তার পরেই ওই কাফে ও কাশ্মীরে কিছু জঙ্গি ডেরায় হানা দিয়ে প্রচুর কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করেছিল এনআইএ। তদন্তে তার থেকে বেশ কিছু সূত্রও মিলেছিল।

বর্ধমানেও তার পুনরাবৃত্তি হয় কি না, সেটাই দেখার।


বিএসএফ-ও দায়ী, বলছেন কিছু ইমাম
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনায় বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে এফআইআর করার দাবি তুলল বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশন। কারণ, ওই সংগঠনের মতে, বিএসএফ-এর গাফিলতিতেই ভিনদেশিরা এ রাজ্যে ঢুকে জঙ্গি কার্যকলাপ করতে পারছে। তাদের বক্তব্য, ওই ঘটনায় যারা অভিযুক্ত, তাদের অনেকেই পড়শি দেশ থেকে এ রাজ্যে এসে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র, এমনকী পাসপোর্ট পর্যন্ত করে নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন এবং পাসপোর্ট দফতরের কারও যোগসাজস না থাকলে এ সব সম্ভব নয় বলে ইমামদের ওই সংগঠনটি অভিযোগ করেছে। সেই সব সহায়তাকারীকেও খুঁজে বার করতে হবে বলে শনিবার দাবি জানান বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মহম্মদ ইয়াহিয়া।খাগড়াগড়-কাণ্ডের তদন্তের ভার কেন্দ্রীয় সরকার এনআইএ-র উপরে দেওয়া পরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য ছিল, সীমান্ত পাহারার দায়িত্ব বিএসএফ-এর। সেটি কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা। তাই কেন্দ্র এই ব্যাপারে দায় এড়াতে পারে না। এ দিন কলকাতায় বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বের কথাতেও ছিল একই সুর। যদিও অনুপ্রবেশকারীদের রেশন কার্ড পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে শাসক দলের নেতাদের সক্রিয়তা নিয়ে কোনও কথা বলেননি তাঁরা। পরিচয়পত্র বা অন্য নাগরিক সুবিধা পাওয়া ক্ষেত্রে রেশন কার্ডের বড় ভূমিকা রয়েছে। অতীতেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশকারীদের রেশন কার্ড পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলের শাসন কালেও সেই ট্র্যাডিশন চলছে বলেই অভিযোগ। এ দিন ইমামদের ওই সংগঠনটি স্পষ্ট জানায়, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্তরা যে ধর্মেরই হোক, তাদের শাস্তি দিতে হবে। কোনও মাদ্রাসা যদি ওই ধরনের কাজে জড়ালে, তবে তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। গত মঙ্গলবারও এ রাজ্যের ইমামদের অন্য চারটি সংগঠন খাগড়াগড়-কাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছে।

nia sibaji dey sarker kuntak chottopahyay burswan blast khagragarh state news SMS deleted file recovery online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy