Advertisement
E-Paper

আধারের কামাল, মায়ের কোলে ফিরল ছেলে

তোতাপাখির দৌলতে নয়, বছর তেরোর বালক শেদুল মাকে ফিরে পেয়েছে আধার কার্ডের সৌজন্যে।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:১০
ফেরা: মা তারা খাতুনের সঙ্গে শেদুল। নিজস্ব চিত্র।

ফেরা: মা তারা খাতুনের সঙ্গে শেদুল। নিজস্ব চিত্র।

তোতাপাখি মা-হারা মেয়েটির কাছে মাকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল কি না, বাংলা গানে তার জবাব নেই।

তোতাপাখির দৌলতে নয়, বছর তেরোর বালক শেদুল মাকে ফিরে পেয়েছে আধার কার্ডের সৌজন্যে।

অন্যদের দেখাদেখি মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চাইত ছটফটে শেদুল। অনেক শহর, গ্রাম ছাড়িয়ে পথভোলা ছেলেটি আশ্রয় পেয়েছিল কলকাতার এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে। নাছোড় শেদুলের সামনে পড়ে বাধ্য হয়ে মা সাজতেন সংগঠনের দিদিরা। শেদুলের হাতে ফোন দিয়ে অন্য ঘর থেকে কথা হতো সেই সাজানো মায়ের। জড়ানো বাংলায় শেদুল জানতে চাইত, ‘‘কী করছিস? রান্না করছিস?’’ অন্য প্রান্ত থেকে মহিলা শুধু ‘হুঁ-হাঁ’ করতেন। ‘‘পুলিশ আমাকে এখানে দিয়ে গিয়েছে। তুই এসে নিয়ে যা।’’ ব্যস, এটুকুই। এতেই চোখ চকচক করে উঠত শেদুলের। খুশির আলো খেলে যেত মুখে।

দু’বছর ধরে এই ‘লুকোচুরি’ খেলার শেষে মা তারা খাতুন বুধবার এসে সত্যি সত্যিই নিয়ে গিয়েছেন শেদুলকে। বিহারের কাটিহার জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম বাগুড়া মশালতলিতে থাকেন তাঁরা। বছর দুয়েক আগে সেখান থেকেই ট্রেন ধরে ভুল করে কলকাতায় চলে আসে ছেলেটি। শিয়ালদহে উদ্‌ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ানো শেদুলকে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে খুঁজে পায় শিশু কল্যাণ সমিতি। এ শহরের যে-সংগঠনে শেদুলের ঠাঁই হয়েছিল, সেই ‘মুক্তি’র দিদিরা চেষ্টা করেও দু’বছরে শেদুলের মাকে খুঁজে বার করতে পারেননি।

আরও পড়ুন:সর্ষে কিনছেন, ইলিশ মাছও দিয়ে দেব সঙ্গে?

কী ভাবে মিলল মায়ের হদিস?

মুক্তির প্রশাসক পৌষালি সেনগুপ্ত জানান, মাস চারেক আগে তাঁদের কাছে থাকা শিশুদের আধার কার্ড করানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। নেওয়া হয় বায়োমেট্রিক তথ্য। সকলে গিয়ে আঙুলের ছাপ দিয়ে আসে। নেওয়া হয় চোখের মণির ছবি। শেদুলের নামও ছিল সেই তালিকায়। তখন তাকে ‘নামোনি’ বলে ডাকা হতো। কেননা আধো আধো বোলে ওই নামটাই বলেছিল সে। কম্পিউটার থেকে ই-আধার নেওয়ার সময়ে দেখা যায়, সেই নামোনি-র নামে ২০১৫ সালের গোড়াতেই আধার কার্ড করা হয়েছে। তার আসল নাম শেদুল রহমান। বাবার নাম মান্নান।

পাওয়া যায় ঠিকানাও। যোগাযোগ করা হয় তারা খাতুনের সঙ্গে। কিন্তু হিন্দিও বলতে পারেন না তিনি। তারার দেহাতি ভাষা বুঝতে পারেন না পৌষালিরা। মধ্যস্থতায় নামেন তারার ভাই, শেদুলের মামা। স্থানীয় এক বাসিন্দার স্মার্ট ফোনে ভিডিও কল করার পরে মাকে দেখে অঝোরে কাঁদতে থাকে শেদুল। কলকাতায় মুক্তির ঠিকানা নিয়ে বুধবার শ্বশুর মসিউর রহমানের সঙ্গে হাজির হন তারা খাতুন। নিয়ে যান ছেলেকে।

শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন ইন্দ্রাণী গুহ ব্রহ্ম বললেন, ‘‘শেদুলের বাবা-মাকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আধার কার্ড করতে গিয়েই ঠিকানা পাওয়া যায়।’’ শেদুলের বাবা কাজ করেন দিল্লিতে। তাঁর কাছে যেতে গিয়েই পথ হারিয়ে ফেলেছিল শেদুল।

কলকাতায় থেকে দু’বছরে একটু একটু বাংলা বুলি শিখেছে ছেলেটি। মানসিক ভারসাম্যের অভাব রয়েছে। তার চিকিৎসাও হয়েছে। পৌষালি জানান, শুধু মা নয়, শেদুল কথা বলতে চাইত বাবার সঙ্গেও। সংগঠনের কোনও দাদা ফোন হাতে নিয়ে বাবা সাজতেন। কিন্তু বাবার উপরে শেদুলের রাগ ছিল খুব। ফোন তুলেই বলত, ‘‘মেরে তোর মাথা ফাটিয়ে দেবো। তুই কেন আমার মেজাজ এত গরম করিয়ে দিস?’’

মান্নান বুধবার জানতে পেরেছেন ছেলের ফেরার কথা। শেদুলের দাদু মসিউর একটু চিন্তিত। কেননা নাতি শুধু বাংলা বলছে! তাঁরা সেই ভাষা বুঝছেন না। আবার তাঁদের ভাষাও বুঝছে না শেদুল। মসিউর এ দিন ফোনে বললেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে থাকতে থাকতে আশা করি এ বার দেহাতি ভাষাটাও শিখে যাবে।’’

Aadhaar আধার কার্ড
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy