Advertisement
০৪ মে ২০২৪

আঙুলের ক্ষত সারেনি,ফের পায়ে পায়ে হাঁটা শুরু চেতনার

নার্সিংহোমের শুয়ে থাকলেও মন পড়ে রয়েছে এভারেস্টে। অসুস্থতার মধ্যেও সে কথা বলছেন চেতনা সাহু। সতীর্থ দেবরাজ দত্ত ও স্বামী প্রদীপ সাহুর সঙ্গে উঠেছেন এভারেস্টে। সেই মুহূর্তটি ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি হয়ে গিয়েছে।

হাসপাতালে চেতনা। —নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে চেতনা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৬ ০১:৪১
Share: Save:

নার্সিংহোমের শুয়ে থাকলেও মন পড়ে রয়েছে এভারেস্টে। অসুস্থতার মধ্যেও সে কথা বলছেন চেতনা সাহু। সতীর্থ দেবরাজ দত্ত ও স্বামী প্রদীপ সাহুর সঙ্গে উঠেছেন এভারেস্টে। সেই মুহূর্তটি ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি হয়ে গিয়েছে। নার্সিংহোমে শয‌্যার পাশে বসে থাকা স্বামীর সঙ্গে সেই সব স্মৃতিচারণাই বাড়তি উৎসাহ দিচ্ছে এভারেস্ট জয়ী চেতনাকে সুস্থ হয়ে উঠতে।

আবার কখনও মনে পড়ছে তাঁদের পরিচিত প্রিয় পরর্বতারোহীদের কথা, যাঁদের হারাতে হয়েছে। মনে পড়ছে গৌতম ঘোষের সঙ্গে তাঁদের দেখা হওয়ার কথা। চেতনা দেবীকে নিয়ে প্রদীপবাবু নামছিলেন। গৌতম ঘোষরা উঠছিলেন। ২১ মে তাঁদের এভারেস্টে ওঠার কথা ছিল। অল্প সময়ের জন্য কথা হলেও তখনই যে তাঁদের শেষ কথা হবে সে তো কখনও ভাবেননি প্রদীপবাবু। মনে পড়ছে বেসক্যাম্পে প্রতিদিনই কথা হতো গৌতমবাবু, সুনীতা হাজরাদের সঙ্গে। বিশেষ করে দীর্ঘ ন’দিন ধরেই গৌতম ঘোষের সঙ্গে এক সঙ্গে পাহাড়ে অভিযান করেছেন প্রদীপবাবুরা। আজ এভারেস্ট ডে সে কথাগুলিকে আরও বেশি করে মনে করিয়ে দেবে বলে জানান প্রদীপবাবু।

নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন চেতনাদেবী। সকালে চা, বিস্কুট, দুধ-কনফ্লেক্স কখনও ফল, দুপুরে ডাল ভাত, সব্জি, মাছের ঝোল, বিকেলে সুপ খাচ্ছেন। হাঁটার চেষ্টাও করছেন। গত তিন দিন আগেও তিনি খেতে পারছিলেন না। এভারেস্ট জয় করে ফেরার সময় তুষার ক্ষততে তাঁর দুই হাতের আঙুল মারাত্মক জখম হয়েছে। আঙুলগুলির মাথার দিকের অনেকটা অংশ কালো হয়ে গিয়েছে। শরীর বিধ্বস্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। হেলিকপ্টারে উদ্ধার করে তাঁকে ২২ মে নিয়ে আসা হয়েছিল শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে। এখানেই অসুস্থতা কাটিয়ে ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছেন চেতনা সাহু। দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে চেতনাদেবীর। মাকে দেখতে তাদেরও শিলিগুড়িতে আসার কথা রয়েছে আগামী সপ্তাহে। তার আগে আরও কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠতে চান তিনি।

শনিবার চিকিৎসক অবশ্য জানিয়েছেন, হাতের জখম সারতে সময় লাগবে। সেটাই চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে তাঁর পরিবারের। স্বামী প্রদীপ সাহু দিল্লিতে সেনা বাহিনীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। তবে আরও কিছু দিন শিলিগুড়ির এই নার্সিংহোমে থাকার পর বাইরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। তবে প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘জখম ওই আঙুলগুলিতে রক্ত সঞ্চালনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেটা ভাল দিক।’’ বৃহস্পতিবার তাঁদের এভারেস্ট জয়ী দলের সতীর্থ পর্বতারোহী দেবরাজ দত্ত নার্সিংহোমে দেখা করতে গিয়েছিলেন। চেতনাদেবীর সঙ্গে কথা বলে তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন তিনি।

এভারেস্ট জয় করে ফেরার পথে চেতনাদেবী দল থেকে পিছিয়ে পড়েছিলেন। অক্সিজেন ফুরিয়ে এসেছিল। শরীর অবসন্ন হয়ে হাঁটতে পারছিলেন না। পরে উদ্ধারকারী দলের দুই শেরপা খবর পেয়ে তাঁকে অতিরিক্ত অক্সিজেন পৌঁছে দেন। ওই দুই শেরপা এবং স্বামী প্রদীপবাবু গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন। শিলিগুড়িতে আনার পর পঙ্কজ ভরদ্বাজ নামে গুয়াহাটির এক প্লাস্টিক সার্জেন তাঁকে দেখে গিয়েছেন। প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, আরও কিছু দিন এখানে থেকে সুস্থ হলে অন্যত্র নেওয়া নিয়ে ভাবা হবে। চিকিৎসক তিন সপ্তাহ তাঁর হাতের অবস্থা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। হাতের আঙুলের যে অংশগুলি ফ্রস্টবাইটে কালো হয়ে গিয়েছে সেগুলিতে রক্ত সরবরাহ হচ্ছে কি না তা নজরে
রাখা হয়েছে। নার্সিংহোমের তরফে জানানো হয়েছে, ওই সময়ের মধ্যে হাতের পরিস্থিতি কী রকম থাকে তা দেখেই পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়টি ভাবা হবে। পায়ের কয়েকটি আঙুলে তুষার ক্ষত থাকলেও তা হাতের মতো মারাত্মক নয়। পায়ের পরিস্থিতির শীঘ্রই উন্নতি হবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। এ দিনও অনেক ক্ষণ হাঁটার চেষ্টা করেছেন চেতনাদেবী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chetna mountaineer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE