Advertisement
০৪ মে ২০২৪

দোলেও তুঘলকি, শুকনো হাওয়ায় ত্বকে টান

গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা, বর্ষা থেকে শীত থেকে বসন্ত— তার মর্জির নাগাল পাওয়া ভার! বুধবার দোলযাত্রায়, বিশ্ব আবহাওয়া দিবসেও নিজেকে রহস্যের ছলনাজালে ঢেকে রাখল প্রকৃতি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৬ ০১:১১
Share: Save:

গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা, বর্ষা থেকে শীত থেকে বসন্ত— তার মর্জির নাগাল পাওয়া ভার! বুধবার দোলযাত্রায়, বিশ্ব আবহাওয়া দিবসেও নিজেকে রহস্যের ছলনাজালে ঢেকে রাখল প্রকৃতি।

সকাল থেকে রোদের তেজ কম ছিল না। কিন্তু বসন্তের শুরুতে তাপমাত্রার যে-চোখরাঙানি উত্ত্যক্ত করছিল, সেই গরমটা যেন নেই! উল্টে দোলের দিন হাওয়া খুবখানিকটা টান ধরাচ্ছিল চামড়ায়! আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনা বুধবার তাক লাগিয়ে দিয়েছে অনেক আবহবিদকেও।

গত বছর দোল ছিল ৫ মার্চ। এ বছর অবশ্য অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছে বসন্তোৎসব। ফেব্রুয়ারির শেষাশেষি থেকে যে-পরিস্থিতি ছিল, তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, চড়া গরম সয়েই এ বার দোল সারতে হবে বাঙালিকে। রোদে চাঁদি ফাটবে, রং মাখা শরীরে চুইয়ে পড়বে ঘাম।

কিন্তু মঙ্গলবার রাত থেকে হঠাৎ বদলে যায় পরিস্থিতি। দখিনা বাতাসের বদলে ভোরের দিকে মিলছে উত্তুরে হাওয়া। আর প্যাচপেচে গরমের বদলে হাজির হয়েছে পশ্চিমি শুষ্কতা। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, বুধবার আপেক্ষিক আর্দ্রতা নেমে গিয়েছিল ১৯ শতাংশে। চৈত্রের প্রথম ভাগে যা অস্বাভাবিক বলেই জানাচ্ছেন আবহবিজ্ঞানীরা।

এমন পরিস্থিতি হল কেন?

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, ওড়িশা-বাংলা উপকূলে একটি উচ্চচাপ বলয় ছিল। সেখান থেকেই জোলো দখিনা হাওয়া ঢুকছিল বাংলায়। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে সেটি সরে গিয়েছে। ফলে জোলো হাওয়ার জোগানে ঘাটতি দেখা দেয়। উচ্চচাপ সরতেই দখিনা বাতাসের বদলে উত্তর-পশ্চিম থেকে শুকনো হাওয়া ঢুকছে। তার ফলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

২৩ মার্চ ‘বিশ্ব আবহাওয়া দিবস’। প্রতি বছরই একটি নির্দিষ্ট বিষয় ধরে এ দিনটি পালন করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা। এ বছরের বিষয় জলবায়ুর পরিবর্তন। আবহবিদেরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব পড়বে আবহাওয়ায়। তার ফলে এক দিকে গরম বাড়বে, তেমনই কোনও কোনও এলাকায় বাড়বে শুষ্কতা বা খরাও। বিশ্ব আবহাওয়া দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। এই নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিরও চেষ্টা চলছে বলে জানান হাওয়া অফিসের কর্তারা।

এ বার বসন্তের সূচনাতেই পরাক্রম দেখাতে শুরু করেছিল পারদ। শীত তো হালে পানি বিশেষ পায়ইনি। বসন্তও কুণ্ঠিত হয়ে পড়ে তাপমাত্রার দাপটে। তবে দোলে গরম মাত্রা ছাড়ায়নি। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এ দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ সময়ের স্বাভাবিক। তবে এই স্বাভাবিক গরম নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নন আবহবিদেরা। তাঁদের পূর্বাভাস, আজ, বৃহস্পতিবার থেকেই দিনের তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। চলতি সপ্তাহেই কলকাতার তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রিতে পৌঁছে যেতে পারে। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০১১ সাল থেকেই তাপমাত্রার বৃদ্ধি ধরা পড়ছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার হিসেবে ২০১৫ গরমের সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে। আবহবিদদের একাংশের পূর্বাভাস, ২০১৬ সেই রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে।

আবহবিদদের অনেকে বলছেন, ২০১১ থেকে ২০১৫, গরম বেড়েছিল মার্চের শেষে। ২৩ মার্চ থেকেই তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রির কাছাকাছি ঘুরছিল। এ বার একটু পিছিয়ে থাকলেও এপ্রিলের দোরগোড়ায় গরম হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে নতুন খেল্‌ দেখাতে শুরু করবে কি না, আপাতত সেই প্রশ্নটাই ভাবাচ্ছে আবহবিজ্ঞানীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Weather Cock spring
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE