Advertisement
১৩ অক্টোবর ২০২৪
West Bengal Budget 2023-24

‘ভিক্ষা’ নয়, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবি সরকারি কর্মীদের, ‘প্রত্যাশা’ বেশি ছিল তৃণমূলপন্থীদেরও

রাজ্য ৩ শতাংশ ডিএ বাড়াচ্ছে। এর ফলে রাজ্য সরকারি কর্মীদের প্রাপ্তি দাঁড়াল ৬ শতাংশ। কিন্তু তাদের প্রত্যাশা কেন্দ্রীয় হারে। যা এই মুহূর্তে ৩৫ শতাংশ। কেন্দ্র শীঘ্রই আরও ৪ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করতে পারে।

State government employees who are in dharna are not pleased for the announcement of increased DA

রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যাশার কাছাকাছিও যেতে পারেনি বুধবারের ঘোষণা। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:২৬
Share: Save:

সরকারের সাধ্য কম। তবু যতটা পারা যায় করা হয়েছে। মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে বিধানসভায় এমনটাই বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাতেও ক্ষোভের আগুন নিভছে না। আসলে রাজ্য সরকারি কর্মচারীর প্রত্যাশার কাছাকাছিও যেতে পারেনি বুধবারের ঘোষণা। তৃণমূলপন্থী সরকারি কর্মচারী সংগঠনও সে কথা স্বীকার করছে। বিরোধী সংগঠনগুলি বৃহত্তর আন্দোলনের ডাকও দিচ্ছে। তবে সকলেই তাকিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দিকে। কারণ মার্চ মাসেই শীর্ষ আদালতে বাংলার ডিএ মামলার শুনানি হওয়ার কথা।

বুধবার বিধানসভায় রাজ্যের বাজেট পেশ হয়। তবে তাতে ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা ছিল না। বাজেট বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠানো চিরকুট পড়ে ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা। তা শোনার পরে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের প্রকাশই বেশি। কারণ, দাবি ছিল কেন্দ্রীয় হারে ডিএ। কিন্তু ঘোষিত বৃদ্ধির পরেও কেন্দ্রের তুলনায় ৩২ শতাংশের ফারাক থেকে যাবে। এ নিয়ে তৃণমূল সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্য ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করেছে। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। ১৫ মার্চ এই সংক্রান্ত শুনানি রয়েছে। আপাতত সকলে সেই দিকেই তাকিয়ে।’’

অর্থমন্ত্রীর ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণার পরে নিজের বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সীমিত সাধ্যের মধ্যে আমরা যথাসাধ্য করেছি।’’ কিন্তু সরকারি সাধ্যের কথা নিয়ে ভাবতে চাইছেন না সরকারি কর্মীদের একাংশ। বেশ কয়েক দিন ধরেই বর্ধিত ডিএ-র দাবিতে কলকাতায় ধর্না বিক্ষোভ চলছে সরকারি কর্মচারীদের একাংশের। তাতে অংশ নেওয়া এক সরকারি কর্মী বলেন, ‘‘বকেয়া ডিএ-র টাকা কোথা থেকে আসবে সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। সরকার উনি চালাচ্ছেন। উনি ঠিক করবেন কোথা থেকে টাকা আসবে। উনি আমাদের থেকে ভোট চাইতে এসেছিলেন। আমরা ওঁকে ভোট দিয়েছিলাম। কিন্তু ২০১১ সালের পর থেকে আমাদের মহার্ঘ ভাতা নিয়ে টালবাহানা চলছে। এই ৩ শতাংশ বৃদ্ধি আমরা মানছি না। আমাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বাজেটে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা নিয়ে কোনও ঘোষণা ছিল না। এটা পরে ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের আন্দোলন চলবে। আরও এক জন অনশন শুরু করেছেন। আমরা আরও বড় আন্দোলন শুরু করব।’’

অন্য দিকে, বামপন্থী সংগঠন কোঅর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিজয়শঙ্কর সিংহ, সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ চাই। এখন ৩৫ শতাংশ বকেয়া। সেটা খুব তাড়াতাড়ি ৩৯ শতাংশ হয়ে যাবে। সেখানে দাঁড়িয়ে মাত্র ৩ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণার পরে সরকারি কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বেড়ে গিয়েছে।’’

বিজেপিপন্থী কর্মচারী সংগঠন ধর্মঘট ডাকা উচিত বলেও মনে করছে। চাইছে সব সংগঠনকে নিয়ে যৌথ আন্দোলন। সংগঠনের রাজ্য নেতা দেবাশিস শীল বলেন, ‘‘এটা সম্পূর্ণ ভিক্ষে। এই ৩ শতাংশ বকেয়া দেওয়াতে ৬ শতাংশ প্রাপ্তি হল। তা-ও আমরা ৩২ শতাংশ পিছিয়ে রইলাম। যা দেওয়া হচ্ছে তার ১০ গুণ বকেয়া থেকে যাচ্ছে।’’ ডিএ নিয়ে আদলতে চলা মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশাবাদী সুপ্রিম কোর্টে আমরা বিষয়টা তুলে ধরতে পারব। রাজ্য সরকারের পিটিশন সুপ্রিম কোর্ট খারিজ হয়ে যাবে। এখন সময় এসেছে সমস্ত সরকারি কর্মচারী সংগঠনের একজোট হয়ে আন্দোলনে নামার। তেমন কোনও উদ্যোগ নেওয়া হলে আমরা তাতে যোগ দেব। ধর্মঘট ডাকারও সময় এসে গিয়েছে। দফতরে দফতরে বিক্ষোভ চলছে। কাল (বৃহস্পতিবার) নবমহাকরণে বিক্ষোভ কর্মসূচি রয়েছে।’’

তবে ক্ষোভের আগুন বেশি দেখা যাচ্ছে কলকাতায় চলা সরকারি কর্মচারীদের ধর্না মঞ্চে। সেখানেই এক অনশনকারী বলেন, ‘‘আমরা ৩৯ শতাংশ ডিএ চাই। আমাদের হাউস রেন্ট অ্যালাউন্স ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ করা হয়েছে। সেই ৩ শতাংশকে বকেয়া ডিএ বলে দাবি করা হচ্ছে। আমরা কোনও ভিক্ষা চাইছি না।’’

প্রসঙ্গত গত অক্টোবর মাসেই ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। বেড়েছিল ৪ শতাংশ। যা ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই দাবি করেছে, খুব তাড়াতাড়ি আরও ৪ শতাংশ ডিএ বাড়াবে কেন্দ্রীয় সরকার। তা কার্যকর হবে ১ জানুয়ারি থেকে। তাতে মোট ডিএ প্রাপ্তি হবে মূল বেতনের (বেসিক) ৪২ শতাংশ। ২০২২ সালের ১ এপ্রিল ও ১ জুলাই ৩ ও ৪ শতাংশ হারে ডিএ বাড়িয়েছিল কেন্দ্র। এ বারেরটিও ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হলে চলতি অর্থবর্ষে মোট ১১ শতাংশ ডিএ বাড়বে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের।

সপ্তম বেতন কমিশনের আওতায় কেন্দ্র ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন হারে ডিএ দিতে শুরু করে। তার পরে প্রতি বছর জুলাই ও জানুয়ারি, বছরে দু’বার রীতি মেনে ডিএ বাড়াতে থাকে। ফলে কেন্দ্রীয় কর্মীদের ডিএ-র পরিমাণ বেড়ে ইতিমধ্যেই হয়েছে ৩৯ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের আওতায় ২০২১-এর ১ জানুয়ারি ৩ শতাংশ ডিএ চালু হয়। এর পরে দ্বিতীয় বার ডিএ বাড়তে চলেছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE