Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

চিঠিই সার, হদিস নেই দুর্জয়ের

বছর চারেক আগে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে ঢুকে পড়া কিশোর দুর্জয় ভক্তি এখন কোথায়? স্বরাষ্ট্র দফতরের নথি বলছে, বছর পনেরোর দুর্জয় রয়েছে হাওড়ার ‘মালিপুকুর সমাজ উন্নয়ন সমিতি’ নামে সরকার স্বীকৃত একটি হোমে।

দুর্জয় ভক্তি

দুর্জয় ভক্তি

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২০
Share: Save:

বছর চারেক আগে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে ঢুকে পড়া কিশোর দুর্জয় ভক্তি এখন কোথায়?

স্বরাষ্ট্র দফতরের নথি বলছে, বছর পনেরোর দুর্জয় রয়েছে হাওড়ার ‘মালিপুকুর সমাজ উন্নয়ন সমিতি’ নামে সরকার স্বীকৃত একটি হোমে। কিন্তু বাস্তবে ওই হোমে সেই কিশোরের কোনও হদিস নেই! কিশোরটি কোথায়, তা নিয়ে প্রশাসনও অন্ধকারে।

ছেলের খোঁজে বাংলাদেশ থেকে এসে প্রশাসনের দোরে দোরে
ঘুরে বেড়াচ্ছেন দুর্জয়ের আত্মীয়-স্বজনেরা। শেষ পর্যন্ত গত ২৪ জুলাই বিদেশ মন্ত্রক থেকে চিঠি পাঠিয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরকে বলা হয়েছে— ওই কিশোর কোথায় জানানো হোক। যদিও সেই চিঠি পাওয়ার ১৭ দিন পরেও দুর্জয়ের কোনও হদিস দিতে পারেননি স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা।

বাংলাদেশি ওই কিশোরের অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি যশোরের কোতোয়ালি থানার বারান্দি মোল্লাপাড়ায়। দুর্জয়ের বাবার নাম দুলাল। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঈদের আগের দিন হারিয়ে যায় দুর্জয়। আত্মীয়-পড়শিদের বাড়িতে তার খোঁজ না-মেলায় বাংলাদেশের যশোরের কোতোয়ালি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন পরিবারের লোকেরা। এর পর ২০১৩ সালে কোতোয়ালি থানার পুলিশ দুর্জয়ের পরিবারকে জানায়, ওই কিশোর কোনও ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে এসেছিল। তাকে উদ্ধার করে হাওড়ার ‘মালিপুকুর সমাজ উন্নয়ন সমিতি’ নামে হোমটিতে রাখা হয়েছে।

এই খবর পাওয়ার পর কিশোরটির পরিবার ছেলের খোঁজে হাওড়ার হোমটিতে পৌঁছন। তাঁদের অভিযোগ— মালিপুকুর হোম কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানান, ওই নামের কোনও কিশোর তাদের কাছে নেই। দুর্জয়ের মামা সুব্রত মণ্ডলের প্রশ্ন, ‘‘তা হলে আমার ভাগ্নেটা গেল কোথায়?’’

রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, সাধারণত কোনও নাবালক-নাবালিকা উদ্ধার হলে জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে তাকে হোমে পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রে দুর্জয়কে পাঠানো হয়েছিল মালিপুকুর হোমটিতে। সমাজ কল্যাণ দফতরের সচিব রোশনি সেন বলেন, ‘‘আমরা ওই হোমের কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমাদেরও জানিয়েছে দুর্জয় তাদের কাছে নেই। রাজ্যের অন্য হোমগুলিতে খোঁজ করেও ওই কিশোরটিকে পাওয়া যায়নি।’’ সমাজকল্যাণ দফতরেরই এক কর্তা বলেন, ‘‘হোম থেকে কিশোরটি নিখোঁজ হওয়ার পিছনে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে কি না, সিআইডি-কে তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।’’

রাজ্যে বিদেশি শিশু-নারী উদ্ধার ও প্রত্যর্পণের নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতর নথি ও ঠিকানা জানাবে জানায় স্বরাষ্ট্র দফতরকে। তারা সেই তথ্য দেয় বিদেশ মন্ত্রককে। সেই নথি সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস হয়ে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পৌঁছয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের দাবি। কেন্দ্রীয় এই মন্ত্রকের এক অফিসার জানাচ্ছেন, রাজ্যের কোন হোমে কত বিদেশি এবং বাংলাদেশি শিশু-কিশোর রয়েছে, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র দফতর প্রায়ই রিপোর্ট পাঠায় তাঁদের কাছে। তেমনই একটি রিপোর্টে দুর্জয়ের কথাও জানানো হয়েছিল। সেই নথি-ই পাঠানো হয়েছিল বাংলাদেশে, যশোর কোতোয়ালি থানা যা জানিয়েছিল দুর্জয়ের বাড়ির লোকেদের।

কিশোরটির খোঁজে মঙ্গলবার আনন্দবাজারের পক্ষে ওই হোমে যাওয়া হয়। হোমের কর্তৃপক্ষের তরফে রফিক মিদ্দা নামে এক জন জানান— ওই কিশোরটি যে তাঁদের হোমে নেই, তা এক বছর আগেই সমাজকল্যাণ দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দুর্জয়ের পরিবার পুরো বিষয়টি নতুন করে ভারতের বিদেশ মন্ত্রককে জানিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘সেই চিঠি পেয়ে আমরা ফের রাজ্য সরকারকে বলেছি কিশোরটির খোঁজ করতে।’’

শুধু চিঠির পর চিঠি। দুর্জয়ের খোঁজে আসা তার আত্মীয়-স্বজনদের চোখে-মুখে এখন হতাশা। তাদের প্রশ্ন— কোথায় আছে, কার কাছে আছে তাদের ছোট্ট ছেলেটা? কী খাওয়া-দাওয়া করছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE