Advertisement
E-Paper

ফেসবুক কোরো না, বকুনিতে আত্মঘাতী

দিন কয়েক ধরে মেয়ের লেখাপড়া লাটে উঠেছিল। সব সময়ে শুধু মোবাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাটি। ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ ঘিরে তৈরি হয়েছিল নিজের জগত। পরিবারের সদস্যদের তা নজর এড়িয়ে যায়নি। সর্বক্ষণ মোবাইলে ডুবে থাকতে নিষেধ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু মেয়ের অভ্যাস বদলায়নি। শুক্রবার সন্ধ্যায় বকাঝকাও খায় মাম্পি।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:২৫
মাম্পি দাস।

মাম্পি দাস।

হোয়াটস অ্যাপ প্রোফাইলে লেখা, ‘আমি মারা গেছি।’’

যখন তা বাকিদের চোখে পড়ল, ততক্ষণে সত্যিই মারা গিয়েছে হাবরার মেয়ে মাম্পি দাস (১৮)।

দিন কয়েক ধরে মেয়ের লেখাপড়া লাটে উঠেছিল। সব সময়ে শুধু মোবাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাটি। ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ ঘিরে তৈরি হয়েছিল নিজের জগত। পরিবারের সদস্যদের তা নজর এড়িয়ে যায়নি। সর্বক্ষণ মোবাইলে ডুবে থাকতে নিষেধ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু মেয়ের অভ্যাস বদলায়নি। শুক্রবার সন্ধ্যায় বকাঝকাও খায় মাম্পি। এরপরেই ঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না জড়িয়ে ঝুলে পড়ে একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী। হাবরার মনসাবাড়ি নতুনগ্রাম এলাকায় থাকত মাম্পি। কামিনীকুমার গার্লস স্কুলে পড়ত সে। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। দেহ পাঠানো হয়েছে ময়না-তদন্তে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় মাম্পিকে মোবাইল নিয়ে বকাবকি করে বাবা বিকাশবাবু ও মা কনকলতা। এরপরে তাঁরা বাড়ি থেকে বেরোন। গিয়েছিলেন হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে বৌমাকে দেখতে। বাড়িতে ছিল মাম্পি ও তার দাদা দুলাল। বাড়ির কাছেই তাঁদের জুতো তৈরির কারখানা।

দাদাও কারখানায় বেরিয়ে যান। রাত ৯টা নাগাদ বাড়ি ফিরে বিকাশবাবুরা দেখেন, ঘরের মধ্যে গলায় ওড়না জড়িয়ে ঝুলে রয়েছে মেয়ে। বিকাশবাবুর কথায়, ‘‘মেয়ে সব সময়ে মোবাইল ঘাঁটত। ফেসবুক করত। ওকে নিষেধ করেছিলাম। সে জন্যই অভিমানে চলে গেল।’’

মাম্পির মৃত্যু তুলে দিল অল্পবয়সী পড়ুয়াদের সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার নিয়ে নানা প্রশ্ন। লেখাপড়া বাদ দিয়ে পড়ুয়ারা কেন ফেসবুকে বুঁদ হয়ে থাকছে?

কামিনীকুমার গার্লস স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নন্দিতা সাহা বলেন, ‘‘ওই ছাত্রীদের নিজেদের উপরে আত্মবিশ্বাস নেই। জীবনকে তারা তুচ্ছ বলে মনে করে। বাবা মায়ের প্রতিও ভালবাসা নেই। তাঁরা তো বকবেনই। সে জন্য মরতে হবে কেন?’’ প্রধান শিক্ষিকা জানালেন, স্কুলে ছাত্রীরা মোবাইল নিয়ে আসে। তাদের নজরে এলে তারা তা নিজেদের কাছে রেখে দেন। স্কুল ছুটির পরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

স্কুলে পড়ুয়াদের মোবাইল নিয়ে আসা নিষেধ থাকলেও দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতিটি স্কুলের পড়ুয়ারা এখন মোবাইল নিয়ে স্কুলে আসে। প্রফুল্লনগর বিদ্যামন্দির স্কুলের প্রধান শিক্ষক সত্যজিৎ বিশ্বাস বলছিলেন, ‘‘নিঃসঙ্গতা থেকে অল্পবয়সীরা সোশ্যাল মিডিয়াকে আঁকড়ে ধরেছে। সামান্য কারণে আত্মহত্যা করছে।’’ তিনি জানান, তাঁর স্কুলের অনেক পড়ুয়া জানিয়েছে, বাড়িতে বাবা-মায়েরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাদের কথা শোনার সময় থাকে না। কিছু পড়ুয়া প্রকৃত বন্ধু খুঁজে পাচ্ছে না, যাদের সব কথা বলতে পারে।

পুলিশ ও শিক্ষক মহলের একাংশ জানাচ্ছেন, ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ ব্যবহারের ফলে নিত্যনতুন বন্ধু তৈরি হচ্ছে। সেখান থেকে প্রেমের সম্পর্তে জড়িয়ে পড়ছে অনেকে। সম্পর্কের টানাপড়েন থেকেও একাকিত্ব গ্রাস করছে। সেখান থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারছে না। এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘অভিভাবকদেরও উচিত অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের হাতে দামি মোবাইল তুলে না দেওয়া।’’

পুলিশের পক্ষ থেকে হাবরা থানা এলাকায় বিভিন্ন স্কুল মোবাইল ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা শিবির আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে তাদের সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার সম্পর্কে বোঝানো হচ্ছে। তারপরেও ছাত্রদের মধ্যে মোবাইল ব্যবহার কমছে না। দিন কয়েক গোপালননগরের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ব্লু হোয়েল গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছিল। পরে সে জানায়, একটি মেয়েকে সে ভালবাসত। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর থেকে সে ওই খেলায় আসক্ত হয়ে পড়ে।

Suicide Death Mampi Das Facebook Social Media মাম্পি দাস
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy