Advertisement
০৫ মে ২০২৪
পুনর্মূল্যায়ন-বিধি সিন্ডিকেটে

প্র্যাক্টিক্যালের নম্বর যাচাই হবে না কেন

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য ছাত্রীটির দরকার ছিল আর মাত্র পাঁচ নম্বর। নিজের কলেজের কর্তৃপক্ষের কাছে কম্পিউটার প্র্যাক্টিক্যালের নম্বর জানতে চান তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩০
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য ছাত্রীটির দরকার ছিল আর মাত্র পাঁচ নম্বর। নিজের কলেজের কর্তৃপক্ষের কাছে কম্পিউটার প্র্যাক্টিক্যালের নম্বর জানতে চান তিনি। কলেজ-কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁরা প্রধান পরীক্ষকের কাছে নম্বরের যে-তালিকা পাঠিয়েছিলেন, তাতে ওই ছাত্রীর আরও অন্তত আট নম্বর বেশি পাওয়া উচিত ছিল।

অর্থাৎ যাদবপুরে ভর্তি হতে ওই ছাত্রীর আর যতটুকু নম্বর প্রয়োজন ছিল, কলেজ-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী তার থেকেও তিন নম্বর বেশি পেতে পারতেন তিনি। কিন্তু প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার ফল রিভিউ বা পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ না-থাকায় ওই আট নম্বর পাওয়া হয়নি তাঁর। পাঁচ নম্বরের ঘাটতি থেকে যাওয়ায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নও মুখ থুবড়ে পড়ে ওই ছাত্রীর। লিখিত সব বিষয়ের নম্বর যাচাইয়ের বন্দোবস্ত আছে। প্র্যাক্টিক্যালের পুনর্মূল্যায়নের পথ বন্ধ কেন? শুধু ওই ছাত্রীর নয়, পরীক্ষার্থী-অভিভাবক এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশেরও প্রশ্ন এটাই। এই পরিস্থিতির বদল ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। স্নাতক স্তরের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার ফলও রিভিউ করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে।

চালু নিয়ম অনুযায়ী প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার নম্বর রিভিউ করা যায় না। তাই মূল্যায়ন নিয়ে পরীক্ষার্থীদের কোনও প্রশ্ন বা সংশয় থাকলে তার সুরাহা বা নিরসনও হয় না। সম্প্রতি প্র্যাক্টিক্যালে কম নম্বর পাওয়ায় মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন যোগমায়াদেবী কলেজের এক ছাত্রী। তাঁর সমস্যাটি খতিয়ে দেখে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের মনে হয়েছে, সিন্ডিকেটের মতামতের জন্য বিষয়টি এখনই সেখানে তোলা উচিত। সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) স্বাগত সেন জানান, এই নিয়ে সিন্ডিকেটে আলোচনা হবে।

যোগমায়াদেবী কলেজের ওই ছাত্রীর ক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটেছিল?

যোগমায়াদেবী কলেজের পদার্থবিদ্যার (অনার্স) ওই ছাত্রী ফল ঘোষণার পরে দেখেন, তিনি প্রথম বিভাগের থেকে মাত্র পাঁচ নম্বর কম পেয়েছেন। এবং ওই পাঁচ নম্বর থাকলেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হতে পারতেন তিনি। তীরে এসে তরী ডুবতে বসায় তিনি আরটিআই (রাইট টু ইনফর্মেশন) বা তথ্য জানার অধিকার আইনে কলেজের কাছে কম্পিউটার প্র্যাক্টিক্যালের নম্বর জানতে চান। গত ডিসেম্বরে কলেজ-কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, প্রধান পরীক্ষকের কাছে তাঁদের পাঠানো নম্বর-তালিকা অনুযায়ী ওই ছাত্রীর আরও আট নম্বর পাওয়ার কথা।

কলেজ-কর্তৃপক্ষ যে-নম্বর পাঠিয়েছেন, তা কমিয়ে দেওয়া হল কেন, ওই ছাত্রীটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামকের কাছে তা জানতে চান। লিখিত ভাবে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। তবে মৌখিক ভাবে তাঁকে বলা হয়, প্রধান পরীক্ষক যে-নম্বর দিয়েছেন তার উপরে ভিত্তি করেই ফল প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু কীসের ভিত্তিতে প্রধান পরীক্ষক ওই নম্বর কমালেন, সেই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রীটিকে জানিয়ে দেওয়া হয়, প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার ফল রিভিউয়ের ব্যবস্থা নেই। তাই তাঁর প্র্যাক্টিক্যালের খাতার পুনর্মূল্যায়ন সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতেই পারেননি ওই ছাত্রী।

শুধু যোগমায়াদেবীর ওই ছাত্রী নয়, নম্বরে সামান্য টান পড়ায় অনেক ছাত্রছাত্রীরই স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা শিবিরের একাংশের বক্তব্য, এমন নয় যে, ওই ছাত্রী প্রাপ্যের বেশি দাবি করছেন। কলেজ-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী আরও তো আট নম্বর তাঁর পাওয়ার কথা। সেটা কমে যায় কী করে? ওই নম্বর কী কারণে কমানো হল, সেটাই বা যাচাই হবে না কেন? একই সঙ্গে শিক্ষাজগতের অনেকের প্রশ্ন, থিওরি আর প্র্যাক্টিক্যাল মিলিয়েই তো একটি বিষয় সম্পূর্ণ হয়। সে-ক্ষেত্রে থিওরি পরীক্ষার পুনর্মূল্যায়ন করা গেলে প্রাক্টিক্যালের রিভিউ হবে না কেন? পুনর্মূল্যায়ন তো পড়ুয়াদের স্বার্থেই। রিভিউয়ের এখনকার নিয়মে কি তাঁদের সেই স্বার্থই বিঘ্নিত হচ্ছে না?

‘‘নিয়মটি যাতে আরও সহজ করা যায়, সেই চেষ্টাই হচ্ছে। সিন্ডিকেটে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত আলোচনা করা হবে। সিন্ডিকেট যা বলবে, সেটাই রূপায়ণ করা হবে,’’ আশ্বাস দিয়েছেন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) স্বাগতবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ju practical
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE