Advertisement
৩১ মার্চ ২০২৩
Education Department

School Uniform: ৭ মাসেও মেলেনি স্কুলের পোশাক, বিপাকে পড়ুয়ারা

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশ্ন, এখন চলবে কী করে? বেশির ভাগ স্কুলে পুরনো যে-পোশাক রয়েছে, সেটা আর পড়ুয়াদের মাপে হচ্ছে না।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২২ ০৭:১৯
Share: Save:

কারও পোশাক ছোট আর বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে, আবার জামা-প্যান্ট ছিঁড়ে-ফেটেও গিয়েছে অনেক পড়ুয়ার।

Advertisement

স্কুল-ভেদে বৈচিত্রের বদলে রাজ্যের সব সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং সরকার পোষিত স্কুলেই এ বার থেকে এক ধরনের নীল-সাদা পোশাকের ব্যবস্থা হচ্ছে। কিন্তু বছরের প্রায় সাত মাস কেটে যাওয়ার পরেও প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের স্কুলপোশাক আসেনি। তবে শিক্ষা দফতরের এক কর্তার আশ্বাস, চলতি মাসের শেষেই স্কুলে পোশাক পৌঁছে যাবে। পোশাকে বিশ্ব বাংলার লোগো লাগানো চলছে।

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশ্ন, এখন চলবে কী করে? বেশির ভাগ স্কুলে পুরনো যে-পোশাক রয়েছে, সেটা আর পড়ুয়াদের মাপে হচ্ছে না। পোশাক সরবরাহের বরাত চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে নেওয়া হয়ে গেলেও পোশাক ঠিক কবে পাওয়া যাবে, এখনও পর্যন্ত তাঁরা তা জানেন না।

কিছু প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের ফেব্রুয়ারিতে জুতো দেওয়া হয়েছিল। কোনও মাপ ছাড়া সেই জুতোও অনেক পড়ুয়ার পায়ে হয়নি। সেই জুতোও বদলানো হয়নি। তা ডাঁই করা অবস্থায় স্কুলে স্কুলে পড়েই রয়েছে।

Advertisement

উত্তর কলকাতার সরস্বতী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জয়তী মজুমদার মিত্র জানান, স্কুলপোশাক শেষ দেওয়া হয়েছিল ২০২০ সালে। তার বরাত দেওয়া হয় ২০১৯-এ। প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের বাড়ন্ত বয়স। তাই দু’বছরের পুরনো পোশাক অনেক পড়ুয়ারই মাপে ছোট হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের উদ্যোগে নতুন পোশাক তৈরি করতেও বলা যাচ্ছে না। কারণ, এ বার নীল-সাদা পোশাক দেওয়া হবে। সেই পোশাকে রাজ্য সরকারের লোগো থাকার কথা। জয়তীদেবী বলেন, “স্কুলপোশাক দ্রুত না-দিলে পড়ুয়ারা খুব সমস্যায় পড়বে। আমাদের মতো স্কুলে অনেক পড়ুয়াই স্কুল থেকে সরবরাহ করা পোশাকের উপরেই নির্ভর করে।”

হাওড়ার উদং হাই অ্যাটাচ প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইমারি ট্রেন্ড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজ্য সভাপতি পিন্টু পাড়ুই জানান, তাঁদের স্কুলে পোশাক সরবরাহের বরাত নেওয়া হয়েছিল চলতি বছরের ২৩ মার্চ। তাঁরা ভেবেছিলেন, গরমের ছুটির আগেই হয়তো স্কুলপোশাক চলে আসবে। কিন্তু এখনও আসেনি। যারা প্রাক্‌-প্রাথমিকে ভর্তি হয়েছে, তাদের কোনও স্কুলপোশাকই নেই। পিন্টুবাবু বলেন, “প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের জুতোও দেওয়া হয়। গত ফ্রেব্রুয়ারিতে শিক্ষা দফতর সেই জুতো দিলেও তা অনেকের পায়ের মাপে মেলেনি। সেগুলো পাল্টে দেওয়ার জন্য জেলা শিক্ষা দফতরে চিঠিও দিয়েছি। কোনও লাভ হয়নি। জুতোগুলো স্কুলে পড়েই আছে। এই ভাবে সরকারি টাকার অপচয় হচ্ছে।” পিন্টুবাবুর অভিযোগ, শুধু তাঁদের স্কুলে নয়, রাজ্যের অনেক স্কুলেই ছাত্রছাত্রীদের পায়ে মানানসই না-হওয়ায় পড়ে আছে জুতো।

শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রতি বার পোশাক দেওয়ার আগে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কর্মীরা স্কুলে এসে মাপ নিয়ে যান। কিন্তু এ বার প্রায় কোনও স্কুলেই পড়ুয়াদের মাপ নেওয়া হয়নি। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি এ বার মাপ ছাড়াই পোশাক দেওয়া হবে পড়ুয়াদের? প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ তেমনটাই আশঙ্কা করছেন। কারণ, আগে বিভিন্ন স্কুলের পোশাকের রং ছিল ভিন্ন ভিন্ন। সেই অনুযায়ী বিভিন্ন মাপের পোশাক দেওয়া হত। এ বার সব স্কুলের পোশাকের রং যে-হেতু এক রকম করে দেওয়া হচ্ছে, তাই প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পোশাকের যত ধরনের মাপ হয়, সব মাপের পোশাক বানিয়ে স্কুলগুলোকে দেওয়া হতে পারে। কোনও পড়ুয়ার পোশাক মাপে না-হলে তখন শুধু সেই পড়ুয়ার পোশাক পাল্টে দিলেই হবে।

পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্র বলেন, “কার্যত তিন বছর পোশাক দেওয়া হয়নি। ২০১৯ সালের পোশাক দেওয়া হয়েছে ২০২০-তে। তার পরে আর দেওয়া হয়নি। করোনার সময় স্কুল বন্ধ থাকলেও অনেক গরিব পড়ুয়া স্কুলের পোশাক বাড়িতে পরছে। ফলে সেই সব পোশাকের অবস্থাও খুব খারাপ। অনেকের পোশাক ছোট তো হয়েছেই, অনেক ক্ষেত্রে ছিঁড়েও গিয়েছে। ছেঁড়া পোশাকেই স্কুলে আসছে তারা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.