Advertisement
০৩ মে ২০২৪

লুঠ হচ্ছে সারদার সম্পত্তি, মুখ খুলে বিস্ফোরক সুদীপ্ত

সম্পত্তিগুলো সব লুঠ হয়ে যাচ্ছে, ওগুলো বাঁচান! সংবাদমাধ্যমের সামনে হাহুতাশ করতে শোনা গেল সারদা-কর্তাকে। মঙ্গলবার সুদীপ্ত সেন প্রকাশ্যে অভিযোগ করলেন, রাজ্যের ভিতরে এবং বাইরে সারদার স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। কারা এর পিছনে রয়েছে, তাদের নাম অবশ্য জানাতে চাননি তিনি। সুদীপ্তর দাবি, তাঁর যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, তাতেও আপত্তি নেই। কিন্তু তিনি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে চান। সারদার সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা ফেরানো যেতে পারে।

সিউড়ির আদালতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি সুদীপ্ত সেন।  তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

সিউড়ির আদালতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি সুদীপ্ত সেন। তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৪৭
Share: Save:

সম্পত্তিগুলো সব লুঠ হয়ে যাচ্ছে, ওগুলো বাঁচান! সংবাদমাধ্যমের সামনে হাহুতাশ করতে শোনা গেল সারদা-কর্তাকে।

মঙ্গলবার সুদীপ্ত সেন প্রকাশ্যে অভিযোগ করলেন, রাজ্যের ভিতরে এবং বাইরে সারদার স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। কারা এর পিছনে রয়েছে, তাদের নাম অবশ্য জানাতে চাননি তিনি। সুদীপ্তর দাবি, তাঁর যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, তাতেও আপত্তি নেই। কিন্তু তিনি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে চান। সারদার সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা ফেরানো যেতে পারে। কিন্তু সম্পত্তিগুলোই বাঁচানো যাচ্ছে না বলে তাঁর আক্ষেপ। শ্যামল সেন কমিশন তাঁর কথা শুনছে না, অতএব সিবিআই-কে তাঁর অনেক কিছু বলার আছে বলেও দাবি করেন তিনি।

সোমবারই ইডি দীর্ঘক্ষণ জেরা করেছে অভিনেত্রী অপর্ণা সেন এবং বস্ত্রমন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায়কে। এই সব জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে তাঁর কী প্রতিক্রিয়া? সুদীপ্তর সংক্ষিপ্ত অথচ ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য, “এখনও অনেককেই ডাকা বাকি রয়েছে সিবিআইয়ের!”

মঙ্গলবার সুদীপ্ত সেনকে হাজির করানো হয় সিউড়ি আদালতে। আগে সুদীপ্ত বা কুণাল ঘোষকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে বারবারই বাধা দিয়েছে পুলিশ। এক বারই মুখ খোলার সুযোগ পেয়েছিলেন সারদা-কর্তা। সল্টলেক আদালতে ঢোকার মুখে সে বার কুণাল ঘোষের সরকার-বিরোধী মন্তব্যের বিরোধিতা করেন তিনি।

এ দিন এসপি অফিস সংলগ্ন পুলিশ লকআপ থেকে পুলিশ ভ্যানে ওঠার আগে সুদীপ্ত সাংবাদিকদের দেখে দাঁড়িয়ে পড়েন। কিছু প্রশ্নের উত্তরও দিতে শুরু করেন। তারই মাঝে বাধা দিয়ে পুলিশ কর্মীরা তাঁকে ভ্যানে ওঠার জন্য তাড়া দিতে থাকেন। সুদীপ্ত তখন রক্ষীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘প্লিজ স্যার, আমাকে বলতে দিন। আমার কিছু বলার আছে।”

কী বললেন সুদীপ্ত? রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ইদানীং কুণাল ঘোষ যে সব অভিযোগ করছেন, এ দিন অনেকটা সেই ধাঁচেই কথা বলেছেন সারদা-কর্তা। এক দিকে সিবিআই-এর উপরে আস্থা জানিয়েছেন, অন্য দিকে রাজ্য সরকার গঠিত শ্যামল সেন কমিশনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। তাঁর কথায়, “গত ১৭ মাস ধরে শ্যামল সেন কমিশনে যাচ্ছি। কিন্তু কমিশন আমার কোনও কথাই শুনছে না।”

সুদীপ্তর অভিযোগ, “রাজ্য ও রাজ্যের বাইরে সারদার যত সম্পত্তি রয়েছে, সব লুঠ হয়ে যাচ্ছে। সেটা আটকাতে হবে। সারদার আমানতকারী, অগুন্তি সহকর্মী, সকলের কাছে অনুরোধ আপনারা চেষ্টা করুন যাতে রাজ্য ও কেন্দ্র যৌথ ভাবে সারদার সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা ফিরিয়ে দেয়।”

কী ভাবে লুঠ হচ্ছে সম্পত্তি? বোলপুরে সারদার রিসর্টের উদাহরণ দিয়ে সুদীপ্ত বলেন, “কী বানিয়েছিলাম আর কী দশা হয়েছে, তা আপনারা দেখুন।” ঘটনাচক্রে এ দিনই দুপুরে ওই রিসর্টে হানা দিয়েছিল ইডি। দেখা যায়, আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম-সহ রিসর্টের সব কিছুই চুরি হয়ে গিয়েছে।

কিন্তু এই ভাবে সম্পত্তি ‘লুঠের’ ব্যাপারে তদন্তকারীদের কেউই দায়িত্ব নিতে চাননি। সল্টলেক পুলিশের বক্তব্য, সারদা-কর্তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রির যাবতীয় দায়িত্ব শ্যামল সেন কমিশন এবং বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট)। সিট-এর এক কর্তা বলেন, “সারদা সংক্রান্ত সব কিছুই সিবিআই-কে হস্তান্তর করা হয়েছে। সম্পত্তি লুঠ হয়ে যাচ্ছে কি না, তাঁরাই বলতে পারবেন।” সিবিআই-এর দাবি, তারা সবে তদন্তের কাজ হাতে নিয়েছে। সম্পত্তির হিসেব কষতেই এখন তারা ব্যস্ত। বিষয়টি সম্পর্কে বললে সিট-ই বলতে পারবে।

সুদীপ্ত সেনের অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ সারদা কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলকুমার সেনও। তাঁর বক্তব্য, “সম্পত্তির তালিকা তো উনিই (সুদীপ্ত) কমিশনে জমা দিয়েছেন। তা আমরা পাঠিয়েছি জেলাশাসকের কাছে। বেহাত হওয়ার কথা আসছে কী ভাবে?” আগামী কাল বৃহস্পতিবার কমিশনে সুদীপ্তবাবুর হাজির হওয়ার কথা আছে। সে দিন এ ব্যাপারে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হবে। কমিশন এও মনে করে, সুদীপ্ত সব সম্পত্তির তালিকা জমা দেননি। সে ব্যাপারে বহু তথ্য এসেছে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে। শ্যামলবাবুর মন্তব্য, “উনি কখন কী বলেন তার ঠিক নেই! কমিশনের সামনে এক সময় জানিয়েছিলেন, সিবিআইকে চিঠি দেননি। এখন আবার শোনা যাচ্ছে সিবিআইকে বলেছেন, চিঠি দিয়েছেন।” কমিশন সুদীপ্তর কথা শোনেনি, এই অভিযোগও খারিজ করেছেন শ্যামলবাবু। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “বাধা দিতে যাব কেন? উনি বললে অনেক কিছু জানতে পারব তো!”

সুদীপ্তর অভিযোগ সম্পর্কে শাসক দলের কী বক্তব্য? তৃণমূল নেতা মুকুল রায় এ দিন বলেন, “সুদীপ্ত কী বলেছেন জানি না। না জেনে মন্তব্য করব না।” আর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এ রকম ভিত্তিহীন মন্তব্যের সঙ্গে আমাদের দলের নাম জড়ানো ঠিক হবে না। সুদীপ্ত এক-এক সময় এক-এক রকম কথা বলেন। তাঁর কোন কথা কতটা বিশ্বাসযোগ্য, সেটা তদন্তকারীরাই বিচার করুন!”

বিরোধীরা কিন্তু মনে করছেন, সম্পত্তি লুঠের কথা তুলে সুদীপ্ত পরোক্ষে শাসক দলকেই বিঁধেছেন। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলছেন, “আমরা তো দীর্ঘ দিন ধরেই এটা বলে আসছি। তৃণমূল সারদার বহু সম্পত্তির এস্টেট ম্যানেজার হয়ে উঠেছে! সারদার ফেলে যাওয়া মিডিয়া ব্যবসা তৃণমূল কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে, সেটা সবাই দেখেছে। বাকি সব সম্পত্তির কী অবস্থা সহজেই অনুমেয়!” বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহর মন্তব্য, “দীর্ঘ দিন ধরে সারদার মাধ্যমে জনগণের টাকা লুঠ করেছে তৃণমূল। এখন সারদার সম্পত্তি লুঠ করছে!” তাঁর দলীয় সতীর্থ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “সুদীপ্ত যখন বলেছিলেন, সিট-এর তদন্ত ঠিক পথে চলছে, তখন তৃণমূল সমর্থন করেছিল। অতএব সুদীপ্তর এ দিনের বক্তব্যের দায়ও তাদের উপরেই বর্তাবে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saradha scam sudipto sen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE