Advertisement
০৭ মে ২০২৪

নোট-নাট্যের দেশে কাছের চাঁদই সান্ত্বনা

ক্ষুধার রাজ্যে চাঁদের মধ্যে ঝলসানো রুটি খুঁজে পেয়েছিলেন কবি। নোট-বিড়ম্বনার দেশে জীবন এখন ঝামেলাময়। এবং সোমবার পৃথিবীর কাছাকাছি এসে নোট নিয়ে দিশাহারা মানুষকে যেন খানিক সোয়াস্তির ছোঁয়া দিল চাঁদ।

পৃথিবীর কাছাকাছি। ময়দানে সোমবার। দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি।

পৃথিবীর কাছাকাছি। ময়দানে সোমবার। দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:৫৫
Share: Save:

ক্ষুধার রাজ্যে চাঁদের মধ্যে ঝলসানো রুটি খুঁজে পেয়েছিলেন কবি। নোট-বিড়ম্বনার দেশে জীবন এখন ঝামেলাময়। এবং সোমবার পৃথিবীর কাছাকাছি এসে নোট নিয়ে দিশাহারা মানুষকে যেন খানিক সোয়াস্তির ছোঁয়া দিল চাঁদ।

কয়েক দিন ধরেই ট্রেনে, বাসে এবং হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরপাক খাচ্ছে নোট-কাণ্ড। কখনও ঠাট্টা-তামাশায়, কখনও বা প্রতিবাদ-প্রশংসায়। এ দিন সেই নেট-মুলুকে নোটের সঙ্গেই ঘুরে বেড়িয়েছে ‘মুন কি বাত’।

এমনিতে পৃথিবীর থেকে চাঁদের গড় দূরত্ব তিন লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। তবে পৃথিবীর চার পাশে ঘুরপাক খেতে খেতে প্রতি সাড়ে ২৭ দিনে এক বার মাটির একটু কাছে আসে চাঁদ। বিজ্ঞানীরা জানান, কাছে এলেও দুইয়ের দূরত্ব সাধারণত তিন লক্ষ ৫৭ হাজার কিলোমিটার বা তার বেশিই থাকে। সব সময় মেলে না পূর্ণিমাও। এ দিন দূরত্ব ছিল তিন লক্ষ ৫৬ হাজার ৫১১ কিলোমিটার। উপরি পাওনা রাসপূর্ণিমা!

পৃথিবীর এত কাছে চাঁদ এসেছিল প্রায় ৬৯ বছর আগে! ১৯৪৮ সালের ২৬ জানুয়ারির সেই রাতটাও ছিল পূর্ণিমার। চাঁদ-পৃথিবীর দূরত্ব ছিল তিন লক্ষ ৫৬ হাজার ৪৬২ কিমি।

এটিএম-ব্যাঙ্কে হত্যে দিতে দিতে হয়রান বাঙালি। তারই মধ্যে চাঁদকে একটু বেশি ‘কাছ’ দেখার সুযোগ ছাড়তে চাননি অনেকেই। জল্পনা চলছিল সকাল থেকেই। ঘুম থেকে উঠে মোবাইলে চোখ রাখতে গিয়ে একটি মেসেজ পান হাওড়ার এক যুবক। তাতে লেখা, সন্ধ্যায় গঙ্গার ঘাটে চাঁদ দেখার ‘মজলিশ’ বসবে। সন্ধে ঘনাতেই তাঁর মন উড়ুউড়ু। বন্ধুরা জড়ো হয়েছে গঙ্গার ঘাটে। কিন্তু তিনি তখনও অফিস-বন্দি। আড্ডার বদলে তাই হোয়াটসঅ্যাপে আসা ছবিতেই সাধ মিটিয়েছেন ওই যুবক।

কাজের চাপ সরিয়ে এ দিন চাঁদ-বদনে মজেছেন অনেকেই। বেসরকারি অফিসের কর্তা অলোক বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন বন্ধুদের মেসেজ পাঠিয়েছেন, ‘কেউ আবার ঝলসানো রুটি বলবে কি না জানি না। তবে এই নোট নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেও আজ কিন্তু দারুণ চাঁদ উঠেছে!’ কারও মনে হয়েছে, চাঁদটা অন্যান্য দিনের থেকে একটু বড়। কেউ আবার বলেছেন, ‘চাঁদটা একটু লালচে দেখাচ্ছে!’ কারও মতে, ‘চাঁদের ছটাও যেন আজ বেশি!’

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাঁদ কাছে এসেছে ঠিকই। তবে তাতে খালি চোখে অন্য পূর্ণিমার তুলনায় তার আকারের ফারাক বোঝা মুশকিল। ‘‘চাঁদ দিগন্তের কাছে থাকলে একটু লালচে দেখায়। এটা এ দিনের কোনও বিশেষ ঘটনা নয়, বরং স্বাভাবিক নিয়ম,’’ বলছেন কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের অধিকর্তা সঞ্জীব সেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাতাসে জলীয় বাষ্পের তারতম্য অনুযায়ী চাঁদের চার পাশের ছটা বাড়ে বা কমে। পৃথিবীর কাছে চাঁদের আসা বা দূরে যাওয়ার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।

যে যা-ই বলুক, বাঙালি কিন্তু এ দিন ‘সুপারমুন’ নিয়েই মজে ছিল। কত কাছে চাঁদ আসবে, কত উজ্জ্বল দেখাবে, কেমন দেখাবে— এ-সব নিয়ে চর্চা চলেছে দিনভর। অনেকে নেট-দুনিয়ায় খুলে বসেছিলেন গুজবের ঝাঁপি। পৃথিবীর আরও কাছে এলে চাঁদ কী কী প্রভাব ফেলবে, কেমন বিপদ হতে পারে— এমন জল্পনাতেও ডুবে ছিলেন অনেকে।

বিজ্ঞানীরা অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘সুপারমুন’ বলে কোনও শব্দই নেই তাঁদের বইয়ে। ভিত্তি নেই এই ধরনের গুজবেরও। এক জ্যোতির্বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘পূর্ণিমার দিন জোয়ারের জলের উচ্চতা অন্য দিনের থেকে বেশি থাকে। তার থেকে বেশি কোনও প্রভাব নেই।’’

ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কেটে গিয়েছে রাত। পশ্চিম আকাশে চাঁদ হেলে পড়েছে পূর্ণিমার চাঁদ। আক্ষেপের সুরে অনেকেই বলছেন, ‘‘ফের কবে এত কাছে আসবে চাঁদ?’’

২০৩৪ সালের ২৫ নভেম্বর। এবং সেই রাতটাও হবে পূর্ণিমার, আশ্বাস দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

supermoon demonetization
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE