সিঙ্গুরে পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পের উদ্বোধনে গিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের প্রতি আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ আনেন মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই ।
সিঙ্গুরে দাঁড়িয়ে বছর ছয়েক আগে করা এক ভুলের কথা স্বীকার করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৭ সালের ১ জুলাই জিএসটি চালু করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। যার জেরে সে সময় দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। তবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থনই জানিয়েছিল বাংলা। কিন্তু ‘পুণ্যভূমি’ সিঙ্গুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে জিএসটি সমর্থনের সেই সিদ্ধান্তকে ভুল বলে মেনে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সিঙ্গুরে পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পের উদ্বোধনে গিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের প্রতি আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ আনেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রের তরফে ১০০ দিনের টাকা থেকে শুরু করে ছাত্রদের স্কলারশিপের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যকে ১০০ দিনের কাজ দেওয়াও বন্ধ করা হয়েছে। কেন্দ্র জিএসটির নামে প্রতি বছর বহু টাকা রাজ্যের কাছ থেকে আদায় করলেও, রাজ্যের প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা আটকে রেখে দেওয়া হয়। সেই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়েই মমতার মুখে এই ভুলের কথা উঠে এসেছে। তাঁর কথায়, ‘‘জিএসটি করার পর দিল্লি সব টাকা নিয়ে যায়। কিন্তু বাংলার প্রকল্পের টাকা আটকে রেখে দেয়। জিএসটিকে সমর্থন করা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কেন্দ্র এখন ১০০ দিনের কাজের টাকা, আবাসের টাকা, ছাত্রছাত্রীদের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। একটা কাজও বাংলাকে দেওয়া হয়নি। আমরা ঠিক করেছি রাজ্যই টাকা দিয়ে মানুষকে সাহায্য করবে।’’
এর পর কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আরও তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র কাজ না দিলেও জব কার্ডধারীদের কাজ দেবে। পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পে রাস্তা নির্মাণে কাজ পাবেন জব কার্ডধারীরা। আমরা ১০০ দিনের কর্মীদের দিয়ে পিডব্লিউডি এবং ‘জল ধরো জল ভরো’র কাজ করাব। কেন্দ্রকে দেখাব, বাংলা নিজের কাজ নিজেই করতে পারে। এক পয়সা না দেওয়া সত্ত্বেও আমরা ১০০ দিনের মধ্যে ২৬ দিনের কাজ করিয়ে দিয়েছি। নিজেরা কাজ তৈরি করেছি। এর জন্য বুদ্ধি খরচ করতে হয়। সে বুদ্ধি বাংলার আছে।’’
বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় ১২ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের কথাও ঘোষণা হয়েছিল। মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের সেই যাত্রাই শুরু হল সিঙ্গুর থেকে। মঙ্গলবার সিঙ্গুরে গিয়ে সিঙ্গুর-২ নং গ্ৰাম পঞ্চায়েতের রতনপুর নেতাজি সঙ্ঘ থেকে আথালিয়া নবোদয় সঙ্ঘ পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের ২২টি জেলায় ১২ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি নতুন গ্ৰামীণ রাস্তা নির্মাণ এবং পুরনো রাস্তা সংস্কারের কাজ বাস্তবায়িত হবে। নবান্নের দাবি, এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের ২৯,৮৭৫টি গ্রামের মানুষ উপকৃত হবেন। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। তবে সেই টাকাও কেন্দ্র দেয়নি। হাজার হাজার কিলোমিটারের গ্রামীণ রাস্তা তৈরির কাজ রাজ্যের টাকাতে হচ্ছে বলেই মুখ্যমন্ত্রী এই দিন জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy