Advertisement
০৮ মে ২০২৪
দাদার মাথায় দিদির হাত

তাপসের পাশে দাঁড়িয়ে মমতার তোপ মিডিয়াকে

মঙ্গলবার ক্ষমাপ্রার্থনার চিঠি পেয়েই ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলেন। বুধবার দলীয় বৈঠকে প্রকাশ্যেই তাপস পালকে ক্ষমা করে দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন, সাংসদের চিঠিতে তিনি খুশি। তাঁর বিরুদ্ধে দল কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। এবং সেই সূত্র ধরে সংবাদমাধ্যমকে আরও এক বার দুষলেন মমতা।

শিশির অধিকারী, সন্ধ্যা রায় এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তৃণমূল ভবনের সামনে। ছবি: সুদীপ আচার্য।

শিশির অধিকারী, সন্ধ্যা রায় এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তৃণমূল ভবনের সামনে। ছবি: সুদীপ আচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৪ ০৩:৪৬
Share: Save:

মঙ্গলবার ক্ষমাপ্রার্থনার চিঠি পেয়েই ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলেন। বুধবার দলীয় বৈঠকে প্রকাশ্যেই তাপস পালকে ক্ষমা করে দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন, সাংসদের চিঠিতে তিনি খুশি। তাঁর বিরুদ্ধে দল কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। এবং সেই সূত্র ধরে সংবাদমাধ্যমকে আরও এক বার দুষলেন মমতা।

সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশন এবং আগামী পুরভোটের রণকৌশল নিয়ে আলোচনা করতে দলীয় নেতাদের বৈঠক আগেই ডেকেছিলেন মমতা। কিন্তু গত দু’দিন ধরে তাপসের অশালীন ও উস্কানিমূলক মন্তব্য ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটাই আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে। মমতাই ছিলেন এ দিনের সভার একমাত্র বক্তা। বিষয়টি নিয়ে নিজের মতামত জানান তিনি। বলেন, “ও একটা ভুল করেছে। ও যা বলেছে, সেটা নিন্দনীয়। কোনও ভাবেই সমর্থন করা যায় না। কিন্তু বিষয়টা নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করারও কিছু নেই।”

তবে বিভিন্ন মহলের জোরদার দাবি সত্ত্বেও তাপসের বিরুদ্ধে তিনি যে কোনও রকম ব্যবস্থা নেবেন না, সেটা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন দলনেত্রী। এ দিন তাপসের চিঠিতে সন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি তাঁর শরীর-স্বাস্থ্য নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন মমতা। ঠিক যেমনটি করেছিলেন অনুব্রত মণ্ডলের ক্ষেত্রে। মমতা এ দিন বলেছেন, তাপসের শরীর খারাপ। ওর ভাল করে ট্রিটমেন্ট দরকার।

তাপস অবশ্য এ দিনের বৈঠকে ছিলেন না। তবে ছিলেন পুলিশকে বোম মারার ডাক দেওয়া অনুব্রত। ছিলেন তিন বিরোধীকে পায়ের তল দিয়ে পিষে মারার কথা সগর্বে ঘোষণা করা মনিরুল ইসলামও। তাপসের মতো এই দু’জনের বিরুদ্ধেও দল কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। প্রশাসনও না।

তবে এ দিন বে-লাগাম কথা বলা নিয়ে দলের নেতাদের সাবধান করে দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, “আমাদের জনপ্রতিনিধিদের যেমন দায়িত্বশীল ও সংযমী হতে হবে, তেমনই কোনও বক্তব্য রাখার সময়ে সতর্ক থাকতে হবে। খুন করব, গুন্ডামি করব এ সব না বলে রাজনৈতিক কথা রাজনৈতিক ভাবে বলুন। মনে রাখবেন, আপনাদের একটা কথায় আমার ৭৭ হাজার বুথ যেন নষ্ট না হয়ে যায়।”

আর তার পরেই সংবাদমাধ্যমের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মমতা বলেন, এখন প্রযুক্তি এমন জায়গায় পৌঁছেছে তাতে বৈঠক দূরে থাক, ১০-১২ জন মিলে আলোচনা করলেও তা মোবাইলে রেকর্ড করে ফেলা যায়। সংবাদমাধ্যম তৃণমূলের কিছুই ভাল দেখে না। তৃণমূলের সরকারের বিরুদ্ধে সামগ্রিক ভাবে তারা ষড়যন্ত্র করছে। গত তিন বছরে সরকারের একটা ভাল কাজও সংবাদমাধ্যম প্রচার করেনি। চতুর্দিকে তারা লোক ছড়িয়ে রেখেছে। সামান্য বেফাঁস কথার রেকর্ড হাতে পেলেও তারা টাকা দিয়ে তা কিনে নিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে প্রচার করছে।

তৃণমূলনেত্রীর অভিযোগ, বামফ্রন্ট সরকারের আমলে অনিল বসু, বিনয় কোঙার, পরবর্তী সময়ে আনিসুর রহমানের মতো সিপিএম নেতারা কুরুচিকর মন্তব্য করলেও সংবাদমাধ্যম তা নিয়ে প্রচারে এখনকার মতো অতি সক্রিয়তা দেখায়নি। যদিও বাস্তব ঘটনা হল, বাম নেতাদের ওই সব মন্তব্য ঘিরে আলোড়ন তখন কিছু কম হয়নি। এমনকী, তাপস-কাণ্ডের সূত্র ধরে গত দু’দিনে ফের নিন্দার সুরেই আলোচিত হয়েছে ওই মন্তব্যগুলি।

তৃণমূল তাদের সাংসদের অশালীন মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক দ্রুত এড়াতে চাইলেও বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে সরব। তাপসের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে টাকিতে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “কার্টুন ফরোয়ার্ড করে অম্বিকেশ মহাপাত্র ও সারের দামের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়ে শিলাদিত্য চৌধুরীকে গ্রেফতার হতে হয়েছিল। তা হলে কেন ছেলেদের ঢুকিয়ে রেপ করে দেব, গুলি চালিয়ে দেব। হাত-পা কেটে নেব বলা সত্ত্বেও তৃণমূল সাংসদ এখনও বাইরে আছেন? তাঁকে তো গ্রেফতার করে গরুর খোঁয়াড়ে রাখা উচিত ছিল।”

তাপসের পাশে দাঁড়ানোয় মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে বারাসতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘খুনি ও ধর্ষণকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে জন্যই তৃণমূলের বিধায়ক থেকে সাংসদ নির্লজ্জ ভাবে বাংলা জুড়ে কেবল তাণ্ডব চালাচ্ছে।”

তাপসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার সম্ভাবনা মুখ্যমন্ত্রী খারিজ করে দিলেও তাঁর বক্তব্যের ফুটেজ কী ভাবে সংবাদমাধ্যমের হাতে গেল তা জানতে সক্রিয় হয়েছে পুলিশ। এ ব্যাপারে তদন্তকারী অফিসার হিসেবে এসআই শুভময় সাহা মণ্ডলকে নিয়োগ করেছে নাকাশিপাড়া থানা। এই থানাতেই তাপসের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে। কিন্তু তাকে এখনও এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করেনি পুলিশ।

শুভময়বাবু এ দিন চৌমুহা গ্রামে গিয়ে স্থানীয় সিপিএম এবং তৃণমূল সমর্থক ছাড়াও গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার পর গ্রামের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান। জানা গিয়েছে, সংবাদমাধ্যমে তাপসের যে ফুটেজ দেখানো হয়েছে তার আসল ভিডিও রেকর্ডিং খুঁজতে পুলিশ হন্যে হয়ে ঘুরছে। যার যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, তদন্তের স্বার্থে আসল ফুটেজ পাওয়া জরুরি। এখনও তা তারা পায়নি। শেষ পর্যন্ত যে বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে ফুটেজটি দেখানো হচ্ছিল, সেখানে ফ্যাক্স পাঠিয়ে অবিকৃত ভিডিও ফুটেজ চাওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE