Advertisement
E-Paper

দু’হাতে দুই চ্যালেঞ্জ নিয়ে সূর্যের মুখে দায়িত্বের কথা

বেঁচে থাকলে খুশি হতেন সুভাষ চক্রবর্তী! পরমাণু চুক্তিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ কারাটেরা যখন ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিলেন, তার পরে পরেই ক্ষুব্ধ সুভাষবাবু বলে ফেলেছিলেন, ‘‘আমাদের দলের এই সব নেতাদের ভোটে দাঁড়ানো উচিত। তা হলে বুঝতে পারবেন, মানুষ কী বলে! ভোটের জন্য কী লড়াই করতে হয়!’’

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৬ ০৫:১৫

বেঁচে থাকলে খুশি হতেন সুভাষ চক্রবর্তী! পরমাণু চুক্তিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ কারাটেরা যখন ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিলেন, তার পরে পরেই ক্ষুব্ধ সুভাষবাবু বলে ফেলেছিলেন, ‘‘আমাদের দলের এই সব নেতাদের ভোটে দাঁড়ানো উচিত। তা হলে বুঝতে পারবেন, মানুষ কী বলে! ভোটের জন্য কী লড়াই করতে হয়!’’

নজিরবিহীন ভাবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের পদে থেকেও এ বার বিধানসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন সূর্যকান্ত মিশ্র। তাত্ত্বিক কমিউনিস্ট মহলের অনেকে এমন সিদ্ধান্তে ভ্রূ তুলছেন! তাঁদের প্রশ্ন, কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক ভোটে লড়তে যাবেন কেন? কিন্তু রাজ্য সিপিএমের গরিষ্ঠ অংশই খুশি। তাঁরা বলছেন, কঠিন লড়াইয়ে কাণ্ডারী নিজেই সামনে থাকছেন। নির্বাচনী রাজনীতিতে যে দল অংশগ্রহণ করছে, তারা ভোটের ময়দানের লড়াইয়ে সর্বস্ব পণ করবে না-ই বা কেন?

বস্তুত, অল্প সময়ের মধ্যে সিপিএমের রাজনীতিতে ‘সাহসী জেনারেলে’র মর্যাদা হাসিল করে ফেলেছেন সূর্যবাবু। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলকে হারাতে বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ঐক্য চাই এবং তার জন্য কংগ্রেসকে পাশে নেওয়া চাই, এই বাস্তব বুঝে গত কয়েক মাসে দলকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করেছেন রাজ্য সম্পাদকই। প্রকাশ্য সমাবেশ হোক বা দলের অন্দরের কর্মশালা, বৃহত্তর ঐক্যের পক্ষে সওয়াল চালিয়ে গিয়েছেন। তার পরে কারাট ও তাঁর সঙ্গীদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ঘুরপথে হলেও কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মতি আদায় করে এনেছেন। মানুষের চাহিদা এবং নিচু তলার কর্মীদের কথা না মানলে দলই ভেঙে যেতে পারে বলে প্রায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলের অন্দরে।

লড়াইয়ের সেই প্রথম পর্ব শেষ হতে না হতেই এ বার দ্বিতীয় পর্ব! দলের চাপ মাথায় নিয়ে ভোটে প্রার্থী হতে রাজি হয়েছেন। এবং সাফ বলেছেন, লড়তে যখন হচ্ছেই, তা হলে কেন্দ্র বদলাবেন না। অথচ পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যানের নিরিখে নারায়ণগড় সিপিএমের জন্য খুবই নড়বড়ে আসন! তবু সেই আসন থেকেই লড়তে গিয়ে কর্মীদের মনোবল বাড়াতে চেয়েছেন রাজ্য সম্পাদক।

কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, নিতান্তই পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়েছেন সূর্যবাবু! সিপিএমের যে হেতু এখন ভোটে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো আলাদা মুখের সঙ্কট, তাই রাজ্য সম্পাদককেও নামিয়ে দিতে হচ্ছে! এর মধ্যে আলাদা কোনও কৃতিত্ব নেই। কিন্তু দলের বড় অংশই এই ঘটনাকে ‘ইতিবাচক’ হিসাবে দেখতে চান। যেমন, রাজ্য কমিটির প্রবীণ সদস্য কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘রাজ্য সম্পাদক প্রার্থী হলে তো নিরাপদ আসন খুঁজবেন। সব দলে সবাই তা-ই করে। সূর্যবাবুর জন্য যাদবপুরের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু তিনি যখন দলের কথায় রাজি হলেন, নিজেই নিরাপদ আসনের বাইরে নারায়ণগড় বেছে নিলেন। দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন তিনি!’’

দৃষ্টান্তই বটে! প্রমোদ দাশগুপ্ত, সরোজ মুখোপাধ্যায়, শৈলেন দাশগুপ্ত, অনিল বিশ্বাস বা বিমান বসুরা কেউ রাজ্য সম্পাদক হিসাবে ভোটে লড়ার কথা ভাবেননি। অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির আমলে বিধায়ক থাকতে থাকতে জ্যোতি বসু রাজ্য সম্পাদক হয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু পরবর্তী কালে প্রমোদবাবুর হাতে দলের দায়িত্ব ছেড়ে সংসদীয় রাজনীতিতেই মন দিয়েছিলেন। রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে করতে আবার ভোটের ময়দানেও দলকে নেতৃত্ব দিতে যাওয়া— সূর্যবাবুর আগে কেউ করেননি! সিপিএমের পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, ‘‘যুগ পাল্টেছে। রাজনীতির চাহিদা পাল্টেছে। আগেকার চিন্তাভাবনা ছেড়ে আমাদেরও বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।’’

স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই স্বয়ং সূর্যবাবু এই নিয়ে বিশেষ মুখ খুলতে নারাজ। তিনি শুধু বলছেন, ‘‘আমাদের দলেই এটা হয়। রাজ্য সম্পাদককেও দলের কথা শুনে চলতে হয়। দল যা দায়িত্ব দিয়েছে, আমি তা পালন করব।’’ সূর্যবাবুর কেন্দ্র নারায়ণগড়ে ভোট ১১ এপ্রিল। অর্থাৎ দ্বিতীয় পর্বে। নিজের কেন্দ্রে ভোট মিটে গেলে সারা রাজ্যে দলের কাজে মনোযোগ দিতে তাঁর কিঞ্চিৎ সুবিধা হবে। তবে একটি কেন্দ্রে প্রার্থী হলেও প্রতি জেলায় সাধারণ সভা করার কর্মসূচি নিয়ে রেখেছেন সম্পাদক। প্রতি জেলাতেই প্রচারে যাওয়ার জন্য আর্জি জানাচ্ছে যে দল, তারাই আবার তাঁকে প্রার্থী হওয়ার জন্যও চাপ দিয়েছে! এবং সূর্যবাবুও চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন!

কান্তিবাবুর সংযোজন, ‘‘সংগঠন করলে ভোটে লড়া যাবে না, এই প্রথা এ বার ভাঙা হল। রাজনীতি মানে তো মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক। সূর্যবাবু এখন দলের মুখ, মানুষের কাছেও মুখ।’’ স্বেচ্ছায় নড়বড়ে আসনে গিয়ে জিতবেন সূর্যবাবু? তার উত্তর মিলবে ১৯ মে। কিন্তু দু’হাতে দুই চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন রাজ্য সম্পাদক, এই সত্যে কোনও প্রশ্ন নেই!

CPM assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy