Advertisement
০১ মে ২০২৪

সূর্যের যুক্তিই ইয়েচুরির মুখে

সামনে ভোট নেই। তাই কংগ্রেসের সঙ্গে ফের নির্বাচনী জোট হবে কি না, সেই প্রশ্নটা থাকছেই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে চলার পক্ষেই ফের সওয়াল করলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৬ ০৮:৪৬
Share: Save:

সামনে ভোট নেই। তাই কংগ্রেসের সঙ্গে ফের নির্বাচনী জোট হবে কি না, সেই প্রশ্নটা থাকছেই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে চলার পক্ষেই ফের সওয়াল করলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।

পশ্চিমবঙ্গে সূর্যকান্ত মিশ্ররা ইতিমধ্যেই সে পথে হাঁটতে শুরু করেছেন। ভোটের সময় কংগ্রেসের সঙ্গে জোটকে পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাইন বা কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না বলেও সিপিএমের পলিটব্যুরো এ-ও জানিয়েছিল, তৃণমূলের হামলা রুখতে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। যার অর্থ, কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই চলা। এ বার তাতে কেন্দ্রীয় কমিটির সিলমোহর আদায় করতে আজ থেকে লড়াই শুরু করে দিয়েছেন ইয়েচুরি। প্রত্যাশা মতোই সূর্যবাবুর পাশাপাশি তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেন গৌতম দেব, হান্নান মোল্লা-সহ বাংলার নেতারা।

শনিবার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের শুরুতেই সীতারাম বোঝান,পশ্চিমবঙ্গে কোন পরিস্থিতিতে কী ভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে যেতে হয়েছে। একবার গাড়ি চলতে শুরু করার পর ব্রেক কষা সম্ভব ছিল না। কলকাতায় রাজ্য কমিটির বৈঠকে ঠিক এই যুক্তিই দিয়েছিলেন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। আজ কেন্দ্রীয় কমিটিতে পলিটব্যুরোর রিপোর্ট পেশের সময় একই যুক্তি দিয়েছেন ইয়েচুরিও।

ইয়েচুরির বক্তব্য, পরিস্থিতি অনুযায়ীই কৌশল নিতে হয়েছে আলিমুদ্দিনের নেতাদের। তা রাজনৈতিক লাইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হলেও। এখন তার থেকেও জরুরি হল, তৃণমূলের হামলা রোখা। সে জন্য ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তি, অর্থাৎ কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে।

ইয়েচুরি-সূর্যদের যুক্তি যে সকলেই এক কথায় মানছেন, তা নয়। শুক্রবারের পলিটব্যুরো ও শনিবার থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের শুরুতে তার ইঙ্গিতও মিলেছে। কেরলের পাশাপাশি অন্য রাজ্যের নেতারাও পার্টি লাইন না মানার জন্য পশ্চিমবঙ্গের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। প্রকাশ কারাট-অনুগামীদের বক্তব্য, একটি রাজ্য শাখা পার্টি লাইন না মেনে উল্টে তা অমান্য করার পক্ষে সওয়াল করছে! এ ভাবে চললে পার্টির ঐক্য ধরে রাখাই মুশকিল হবে। একটি সূত্রের দাবি, কারাট-অনুগামীদের অনেকে পশ্চিমবঙ্গের সমালোচনা করে প্রস্তাব আনারও দাবি তুলছেন।

পাল্টা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের নেতারাও। গৌতম দেব এ দিন বৈঠকে প্রকাশ কারাটের এক সাংবাদিক বৈঠকের সিডি পেশ করেন। দলের প্লেনামে কংগ্রেস-সঙ্গ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রকাশ বলেছিলেন, রাজনীতিতে হ্যাঁ বা না বলে কিছু হয় না। সেই সিডি জমা দিয়ে গৌতম ঘুরিয়ে প্রকাশ এবং তাঁর অনুগামীদের নিশানা করেন। রাজ্য নেতাদের যুক্তি, জেতার পরেও তৃণমূল বেলাগাম হামলা চালাচ্ছে। এর পর তাদের সঙ্গে যোগ দেবে বিজেপি। পাশাপাশি অনেকের স্পষ্ট বক্তব্য, পার্টি লাইন অমান্য করা হলে কেন্দ্রীয় কমিটি পশ্চিমবঙ্গ শাখাকে ভেঙে দিক। রাজ্য নেতৃত্বকে অপসারিত করা হোক। এই নেতারা ভাল করেই জানেন, সেটা করা কঠিন শুধু নয়, কার্যত অসম্ভব। অন্তত এই মুহূর্তে।

ইয়েচুরি চাইছেন, এই বিবাদ থেকে বেরিয়ে এসে আগামী দিনের রণকৌশল ঠিক করতে। দলীয় সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের মতো জাতীয় স্তরেও বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেস-সহ অন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চান ইয়েচুরি। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতার বক্তব্য, আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে আর একটি পার্টি কংগ্রেস হবে। সেখানে নতুন রাজনৈতিক লাইন তৈরি হবে। তার আগে পর্যন্ত রাজ্যে তৃণমূল, জাতীয় স্তরে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারই পক্ষপাতী ইয়েচুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

suryakanta mishra Meeting congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE