একটা মিটিং-এ ছিলাম। তার মধ্যেই খবর পেলাম পার্ক স্ট্রিটের গণধর্ষকরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। বলে বা লিখে বোঝাতে পারব না, খবরটা পেয়ে কতটা খুশি হয়েছি। আদালতের এই রায় খুব বড় স্বস্তি আমার কাছে।
শুক্রবার আদালত সাজা ঘোষণা করবে শুনলাম। চাইছি দৃষ্টান্তমূলক সাজা হোক।
তবে স্বস্তির শ্বাস, জ্বালা জুড়নোর অনুভূতি, জয়ের আনন্দ— এই সব কিছুকে আজ ছাপিয়ে যাচ্ছে যে বোধটা, তা হল অভাব বোধ। সুজেটের অভাব ভীষণভাবে অনুভব করছি। আজ ওঁর থাকাটা খুব জরুরি ছিল। সুজেট জর্ডন দেখে যেতে পারলেন না যে তাঁর গায়ে খলনায়িকার ছাপ দেগে দেওয়ার চেষ্টা বিফলে গিয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের একেবারে মাথায় বসে রয়েছেন তিনি-ই বলেছিলেন সব নাকি সাজানো ঘটনা। সুজেটের সঙ্গে নাকি কিছুই হয়নি! গণধর্ষিতাকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। রাজনীতির কথা ছেড়েই দিন। এক বার ভেবে দেখুন, সেই দিনগুলোয় সুজেট কোন মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। একটা জঘন্য রাত ঝড়ের মতো হানা দিয়ে প্রথমে তাঁর জীবনটাকে এলোমেলো করে দিল। গভীর ক্ষতস্থান যখন প্রলেপ চাইছে, তখন আমাদের সরকার প্রলেপের বদলে আরও আঘাত দিয়ে আরও রক্তাক্ত করল নির্যাতিতাকে। সুজেটের দিকেই আঙুল তোলা শুরু হল বিভিন্ন দিক থেকে।
ওঁর মনের জোর ছিল অনন্য। তাই ভাঙতে পারেনি ওঁকে। আমি খুব কাছ থেকে পেয়েছি সুজেটকে। পাশে থেকেছি। তিনিও আমাদের পাশে থেকেছেন। আমাদের কামদুনির পাশে। কামদুনি ধর্ষকদের সাজার দাবিতে যে দীর্ঘ আন্দোলন সুজেট জর্ডন তাতে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি কামদুনিতে এসেছেন। আমাদের লড়াইয়ের শরিক হয়েছেন। এক দিন বললেন, ‘‘কামদুনিকে দেখে আমি লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা পাই। এক সময় সামনে আসতে সঙ্কোচ হত। কিন্তু কামদুনির সবাই যেভাবে নির্যাতিতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে মনে জোর পেয়েছি। সামনে এসে লড়াই করতে আর আমার কোনও সঙ্কোচ নেই।’’
সুজেট আমাদের দেখে কতটা অনুপ্রেরণা পেত জানি না। আমরা কিন্তু ওঁকে দেখে সংগ্রামের উৎসাহ পেয়েছি অনেকটা। আমরা তো সবাই মিলে লড়েছি। সুজেটকে লড়তে হয়েছে একা। ওঁর সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর থেকে আরও বেশি করে অনুভব করেছি ওঁর সাংঘাতিক সেই মনোবল। শত-সহস্র প্রতিকূলতা, আক্রমণ, কলঙ্ক লেপে দেওয়া— কোনও কিছুই দমাতে পারেনি।
আজ তাই খুব ভাল লাগছে। আবার বলছি, শুক্রবার আদালত তিন অপরাধীর জন্য এমন দৃষ্টান্তমূলক সাজা ঘোষণা করুক, যা শয়তানের মনেও আতঙ্ক জাগাতে পারে।
খুব আফশোস হচ্ছে আবার। সেই অভাব বোধটাই বার বার মাথাচাড়া দিচ্ছে। বার বার মনে হচ্ছে আজকের দিনটা সুজেটের দেখে যাওয়া খুব জরুরি ছিল। ওঁর সেই অনাবিল হাসিটা আজ দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy