Advertisement
E-Paper

নির্বাচন এড়িয়ে সিন্ডিকেট, প্রতিবাদে চিঠি আচার্যকে

শিক্ষায় গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থেই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সিন্ডিকেট গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বড় একটি অংশ। কিন্তু সেই দাবিকে কোনও রকম আমল না-দিয়ে নির্বাচিত সদস্য ছাড়াই সিন্ডিকেট গড়া হয়েছে এবং আজ, মঙ্গলবার তার প্রথম বৈঠক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০৪:০০

শিক্ষায় গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থেই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সিন্ডিকেট গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বড় একটি অংশ। কিন্তু সেই দাবিকে কোনও রকম আমল না-দিয়ে নির্বাচিত সদস্য ছাড়াই সিন্ডিকেট গড়া হয়েছে এবং আজ, মঙ্গলবার তার প্রথম বৈঠক।

এই অবস্থায় গণতন্ত্র রক্ষার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। প্রতিনিধি নির্বাচন না-করে সিন্ডিকেট গড়ার প্রতিবাদে সোমবারেই রাজ্যপাল তথা আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের যৌথ মঞ্চ। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে যুক্তি দেখানো হচ্ছে, নতুন ‘স্ট্যাটিউট’ বা বিধি না-থাকায় নির্বাচন করা যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে মোট সদস্য-সংখ্যা ৩৯। তাঁদের মধ্যে পদাধিকারবলে সদস্য এবং মনোনীত সদস্যের সংখ্যাই ৩০। সেই তুলনায় নির্বাচিত সদস্য খুবই কম, মাত্র ন’জন। কিন্তু পঠনপাঠন সংক্রান্ত সব বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা তাঁদেরই। তাই সেই নির্বাচিত শিক্ষক-প্রতিনিধিদের এড়িয়ে সিন্ডিকেট গড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ যে-পঠনপাঠন, তাতেই ঘাটতি থেকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।

দীর্ঘদিন ধরে দু’টি প্রশ্ন উঠছে সমান্তরাল ভাবে।

• কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় এক বছর স্থায়ী উপাচার্য নেই কেন?

• কেনই বা সংশোধিত বিধি তৈরি করা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে?

জোড়া প্রশ্নের মধ্যে শিক্ষক-প্রতিনিধি নির্বাচন এড়িয়ে সিন্ডিকেট গড়ায় নতুন প্রশ্ন ও অভিযোগ উঠছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেই।

সপ্তাহখানেক পরেই বিদায় নিচ্ছেন অস্থায়ী উপাচার্য সুগত মারজিত। তাঁর জায়গায় আবার অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবেই দায়িত্ব নিতে চলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ডিন আশুতোষ ঘোষ। তার আগেই তড়িঘড়ি যে-ভাবে নতুন সিন্ডিকেট গড়ে তার বৈঠক ডাকা হয়েছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। নতুন সিন্ডিকেটের প্রথম বৈঠকের মূল আলোচ্য আর্থিক দুর্নীতি এবং তার তদন্ত রিপোর্ট। সেখানে যে-ভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাতে শিক্ষকেরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ।

সিন্ডিকেট নিয়ে টানাপড়েন কেন?

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, পুরনো সিন্ডিকেটের মেয়াদ শেষ হয় গত ২৮ এপ্রিল। তার আগে থেকেই নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিন্ডিকেটে শিক্ষক-সদস্য রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দু’মাস শুধু যে সিন্ডিকেট ছিল না, তা-ই নয়। স্নাতকোত্তর স্তরে কোনও ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলও নেই। সেটি গঠন করার দাবিও জোরালো হয়ে উঠছিল। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই ‘স্ট্যাটিউট বা বিধি না-থাকা’র যুক্তিকে হাতিয়ার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। এক কর্তা স্পষ্ট জানান, সংশোধিত বিধি এখনও প্রণয়ন করা হয়ে ওঠেনি। তাই স্নাতকোত্তরে ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল এবং স্নাতক স্তরের বোর্ড অব স্টাডিজ গঠন করা যায়নি। সিন্ডিকেট গঠনে নির্বাচন প্রক্রিয়া মেনে চলা যায়নি একই কারণে। প্রশ্ন উঠছে, বিধি না-থাকায় যদি ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল বা বোর্ড অব স্টাডিজ গড়া না-যায়, নতুন বিধি তৈরি না-করে নির্বাচিত প্রতিনিধি না-নিয়ে তড়িঘড়ি সিন্ডিকেটই বা গড়া হল কেন? জবাব মিলছে না বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সব কিছুর জন্যই বিধির অভাবের কথা বলা হচ্ছে। সে-ক্ষেত্রে প্রশ্ন, শতাব্দী-প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিধি তৈরিতেই বা টালবাহানা কেন?

সরাসরি জবাব দেওয়ার কেউ নেই। খোদ আচার্য-রাজ্যপাল বিধি তৈরির নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় তা করে উঠতে পারেনি। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার ২০১১ সালের ডিসেম্বরে বিধানসভায় বিশ্ববিদ্যালয় আইনে কিছু সংশোধনী এনে বিল পাশ করিয়েছিল। ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর হয়। তার পরেই সেই আইন বলবৎ করতে হলে স্ট্যাটিউট বা বিধিতে যে-সংশোধনী প্রয়োজন, তার জন্য গড়া হয় নতুন কমিটি। কিন্তু চার বছরেও সেই বিধি তৈরি করে উঠতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। ফলে ব্যাহত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন এবং গণতন্ত্র।

নিয়ম অনুযায়ী বিধানসভায় বিল পাশের পরে বিধিতে কিছু পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয়। তার পরে তা সিন্ডিকেট ও সেনেটে পাশ করিয়ে পাঠানো হয় উচ্চশিক্ষা দফতরে। সেখানে তা চূড়ান্ত হওয়ার পরে সেটি যায় আচার্য-রাজ্যপালের কাছে। তিনি সম্মতি দিলে সরকারের মাধ্যমে তা ফেরত আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে বিধির প্রয়োজনীয় পরিবর্তনই করা হয়ে ওঠেনি। কমিটি গঠন করে বিধি তৈরির কাজ শুরু হলেও তা পুরোপুরি থমকে রয়েছে। সেই জন্যই সিন্ডিকেট গঠনের জন্য যে-নির্বাচন করার কথা, সেটাও করা যায়নি।

শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, সংশোধিত বিধির অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম চলছে জোড়াতালি দিয়ে। বিধির অভাবে পঠনপাঠনেও ব্যাঘাত ঘটছে বিস্তর। কারণ, স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল বা স্নাতক স্তরের বোর্ড অব স্টাডিজ নেই। পাঠ্যক্রম নির্ধারণ এবং পঠনপাঠনের উন্নতির জন্য যে-কাউন্সিল বা বোর্ড থাকার কথা, নেই সেগুলোও। তাই সিন্ডিকেটের বৈঠকেই ‘চয়েস বেস্‌ড ক্রেডিট সিস্টেম’ চালু করার সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। এবং বাস্তবে তা প্রয়োগ করতে গিয়ে হোঁচট খেতে হচ্ছে। কারণ, শিক্ষকদের যে-সব প্রতিনিধির এই গুরুদায়িত্ব সামলানোর কথা, সিন্ডিকেটে তাঁরাই যে নেই!

সিন্ডিকেটে নির্বাচিত শিক্ষক-প্রতিনিধিরা বাদ পড়ায় পঠনপাঠন আরও মার খাবে বলে মনে করেন যৌথ মঞ্চের দিব্যেন্দু পাল। ‘‘শুধু মনোনীত সদস্যদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, গণতন্ত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারেরই অবমাননা হল,’’ বলছেন দিব্যেন্দুবাবু। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন কুটা-ও রীতিমতো হতাশ। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রামপ্রহ্লাদ চৌধুরী বলেন, ‘‘আচার্য আশ্বাস দিয়েছিলেন নির্বাচিত শিক্ষ-প্রতিনিধি ছাড়া কোনও মতেই সিন্ডিকেট গড়া হবে না। তিনিও কথা রাখলেন না। আমরা হতাশ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ক্ষতি হবে।’’

syndicate raj education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy