Advertisement
E-Paper

মমতার কথাই সার, স্কুলে মার খেলেন শিক্ষক

বহিরাগতেরা স্কুলে ঢুকে চেঁচামেচি করায় পড়াতে অসুবিধা হচ্ছিল তাঁর। ক্লাস থেকে বেরিয়ে তা জানাতেই মার খেয়ে গেলেন অঙ্কের শিক্ষক। অভিযুক্ত, আসানসোলের এক তৃণমূল নেতা ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৫ ০৩:১৫
আসানসোলের স্কুলে শিক্ষককে মারধর। — নিজস্ব চিত্র

আসানসোলের স্কুলে শিক্ষককে মারধর। — নিজস্ব চিত্র

বহিরাগতেরা স্কুলে ঢুকে চেঁচামেচি করায় পড়াতে অসুবিধা হচ্ছিল তাঁর। ক্লাস থেকে বেরিয়ে তা জানাতেই মার খেয়ে গেলেন অঙ্কের শিক্ষক।

অভিযুক্ত, আসানসোলের এক তৃণমূল নেতা ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গেরা।

মাত্র এক দিন আগে, কলকাতায় ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, শিক্ষকদের সম্মান করতে হবে। তাঁর সেই নির্দেশ যে কেমন অক্ষরে-অক্ষরে পালন করা হচ্ছে, রাত পোহাতেই তা প্রমাণ হয়ে গেল।

বুধবার ওই হামলার পরেই নিগৃহীত শিক্ষক পুলিশে অভিযোগ করেন। তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর গোলাম সরওয়ারের নাম আছে তাতে। রাত পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি।

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনা জেনেই তিনি বর্ধমান জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এর সঙ্গে তৃণমূলের যোগ নেই। কে কোথায় কী করল, তার দায় তৃণমূল নেবে কেন?’’ দলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন অবশ্য জানান, উচ্চতর নেতৃত্বের নির্দেশে দলীয় স্তরে তদন্ত করা হচ্ছে।

যেখানে এই গোলমাল হয়েছে, আসানসোল রেলপাড় এলাকার সেই রহমানিয়া উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে সম্প্রতি পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে সরকার মনোনীত প্রার্থী বসানোর নির্দেশ এসেছে। একটি সূত্রের খবর, গোলাম সরওয়ারের ঘনিষ্ঠ গোলাম মইনুদ্দিন সোনা মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু সভাপতি হিসেবে তাঁকে মানতে শিক্ষক-অভিভাবকদের বড় অংশ রাজি নন। সরকারি নির্দেশ সত্ত্বেও নিয়োগের চিঠি তাঁকে দেওয়া হয়নি।

তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি, সেই চিঠি নিতেই গোলাম সরওয়ার ও মইনুদ্দিন দুপুরে স্কুলে যান। কিন্তু প্রধান শিক্ষক সুজাদ হুসেন আসেননি। কেন আসেননি সেই প্রশ্ন তুলে চেঁচামেচি শুরু হয়। উপস্থিত শিক্ষকেরা কোনও উচ্চবাচ্য না করায় বহিরাগতেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। স্কুল সূত্রের খবর, ওই সময়েই অঙ্কের শিক্ষক ওয়াজউদ্দিন জামাল ক্লাস থেকে বেরিয়ে জানান, এ ভাবে চেঁচামেচি করায় পড়াশোনায় অসুবিধে হচ্ছে। তাঁর সঙ্গে বচসা বেধে যায় বহিরাগতদের।

জামাল মোটরবাইক নিয়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। চড়চাপড় মেরে তাঁকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়। জামালের অভিযোগ, ‘‘এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর গোলাম সরওয়ারের নেতৃত্বে ওই বহিরাগতরা এসেছিল। স্কুল চত্বরেই আমার উপর হামলা চালায় ওরা।’’ তত ক্ষণে
আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ এসেছে। কিন্তু পুলিশের সামনেই মারধর চলতে থাকে। খুনের হুমকি দেওয়া হয় বলেও দাবি জামালের।

পুলিশ অবশ্য অভিযোগ মানতে চায়নি। গোলাম সরওয়ার আবার দাবি করেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক আসেননি, স্কুল পরিচালনার দায়িত্বও কাউকে দিয়ে যাননি। ঠিক ভাবে পড়াশোনা হচ্ছিল না। কিছু অভিভাবক এ নিয়ে কথা বলতে গেলে এক শিক্ষক তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। প্রতিবাদ করেন অভিভাবকেরা। কোনও হামলা হয়নি।’’

স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। খবর পেয়ে স্কুলে যান আসানসোলের সহকারী স্কুল পরিদর্শক উত্তমকুমার চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, প্রধান শিক্ষক মেয়ের চিকিৎসার জন্য বাইরে গিয়েছেন। স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব যাঁকে দিয়ে গিয়েছেন, তিনিও এ দিন আসেননি। তাই কিছু অভিভাবক প্রতিবাদ জানাতে এসেছিলেন। হামলা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘শিক্ষকের উপরে হামলার অভিযোগ পাইনি। পেলে দেখব।’’

প্রত্যাশিত ভাবেই, ঘটনাটি নিয়ে সরব বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সারা রাজ্যেই এমন ঘটনা ঘটছে। এর প্রতিবাদে আমরা রাস্তায় নামব।’’

abpnewsletters Asansol School Teacher Police Trinamool Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy