Advertisement
E-Paper

মানসিক হাসপাতালে কোণঠাসা কিশোর

ভিতরে তার অবসাদের অত্যাচার। বাইরে অন্যদের উৎপীড়ন। বছর সতেরোর ছেলেটা দু’দণ্ড তিষ্ঠোতে পারছে না কোথাও। একাচোরা দৃষ্টিহীন কিশোরটি স্কুলে বিশেষ বন্ধু পায়নি।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৭ ১০:১০

ভিতরে তার অবসাদের অত্যাচার। বাইরে অন্যদের উৎপীড়ন।

বছর সতেরোর ছেলেটা দু’দণ্ড তিষ্ঠোতে পারছে না কোথাও। একাচোরা দৃষ্টিহীন কিশোরটি স্কুলে বিশেষ বন্ধু পায়নি। কেননা তার প্রকৃতি অন্যদের সঙ্গে সহজে মিশে যাওয়ার মতো নয়। সেখান থেকে ঠাঁই হল মানসিক হাসপাতালে, সেখানেও সে কোণঠাসা। হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওই কিশোরকে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করছেন অন্য রোগীদের একাংশ। ছেলেটার খাওয়াদাওয়া কমে গিয়েছে। হাতড়ে হাতড়ে একটা কোণ খুঁজে নিয়ে সেখানেই চুপচাপ বসে থাকে সে। এই কিশোরের ভবিষ্যৎ নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ দফতরে।

বিকাশ জানা নামে ওই কিশোর প্রায় ১৪ বছর ধরে কোচবিহারে দৃষ্টিহীনদের একটি সরকারি আবাসিক স্কুলের বাসিন্দা। স্কুল সূত্রের খবর, বরাবরই চুপচাপ, শান্ত প্রকৃতির ছেলেটি কারও সঙ্গেই বেশি মিশতে পারে না। কয়েক মাস ধরে অবসাদে ভুগছে সে। সম্প্রতি তাকে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই পরিবেশে ছেলেটি আরও বেশি অবসাদে ডুবে যাচ্ছে।

মানসিক রোগীদের নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের বক্তব্য, মানসিক স্বাস্থ্য আইন অনুযায়ী কোনও ভাবেই কোনও নাবালক বা নাবালিকাকে মানসিক হাসপাতালে রাখা যায় না। সেই আইন উপেক্ষা করে কী ভাবে দিনের পর দিন এমনটা চলছে, সেই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।

কোচবিহারের স্কুলটির অধ্যক্ষ ফণিভূষণ সেনের বক্তব্য, বিকাশের নিরাপত্তার স্বার্থে এ ছাড়া তাঁদের কাছে অন্য কোনও পথ ছিল না। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেটি অস্থির হয়ে পড়ত। আচরণ দেখে মনে হয়েছিল, ও আত্মহত্যা করতে পারে। স্কুলের পক্ষে ২৪ ঘণ্টা ওর উপরে আলাদা ভাবে নজর রাখা তো সম্ভব নয়। তাই ওর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তা ছাড়া তুফানগঞ্জ হাসপাতালও ওকে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে (‘রেফার’) বলেছিল।’’

প্রশ্ন উঠেছে, জেলায় তো মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি রয়েছে। সেই কর্মসূচির অধীনে চিকিৎসার ব্যবস্থা না-করে তাকে ভর্তি করাতে হল কেন? ভর্তি রেখে চিকিৎসা করার মতো মানসিক অসুস্থতা কি বিকাশের ছিল?

তুফানগঞ্জ হাসপাতালের এক কর্তা জানাচ্ছেন, হাসপাতালে রেফার করার জন্য ওই স্কুলের পক্ষ থেকে তাঁদের উপরে নানা ভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছিল।
রেফার না-করলে তারা ছেলেটিকে রাস্তায় বার করে দেবে বলেও হুমকি দিচ্ছিল। সেই কারণেই ‘ঝামেলা এড়াতে’ তাঁরা বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে রেফার করেন। স্কুল-কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।

গোটা ঘটনায় বিরক্ত স্বাস্থ্য ভবন। মানসিক হাসপাতালে শয্যার প্রচণ্ড অভাব। তার মধ্যে নিয়মবহির্ভূত ভাবে ওই কিশোরকে ভর্তি রেখে যাঁদের সত্যিই ভর্তি করার প্রয়োজন আছে, তাঁদের বঞ্চিত করা হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশে রোগীকে ভর্তি করতে হয় বলে আমাদেরও হাত-পা বাঁধা থাকে। কিন্তু বিষয়টা যে নিয়মবিরুদ্ধ, আমরাও এ বার সেই বিষয়ে প্রচারে নামব, ঠিক করেছি।’’

যারা রাজ্যের বিভিন্ন মানসিক হাসপাতালের রোগীদের নিয়ে কাজ করে, সেই সংগঠনের তরফে রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে বিকাশকে মানসিক হাসপাতালে আনা হয়েছে। এ ভাবে বাছবিছার না-করে মানসিক হাসপাতালে রোগী ভর্তি নিলে গোটা পরিকাঠামোটাই ভেঙে পড়বে। সেই সঙ্গে অনেক শিশু-কিশোরের জীবনকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হবে।’’

Mental exhaustion Teenager Psychiatric hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy