Advertisement
১৯ মে ২০২৪

কম জল ছেড়ে নজির তেনুঘাটের

বাড়তি জল ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাদের জলাধার থেকে ছাড়া জলে সমস্যা বাড়েনি। কেননা, জল ছাড়া হয়েছে কমই।

নজর: ঘাটালের প্রতাপপুরে ভাঙা নদীবাঁধের সংস্কার কাজ ঘুরে দেখলেন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

নজর: ঘাটালের প্রতাপপুরে ভাঙা নদীবাঁধের সংস্কার কাজ ঘুরে দেখলেন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৭ ০৩:০৮
Share: Save:

আগে কোনও দিন হয়নি। কিন্তু এ বার অতিবৃষ্টি চলাকালীন ঝাড়খণ্ডের তেনুঘাট জলাধার অন্তত এক লক্ষ কিউসেক বেশি জল ধরে রেখেছিল। তাতে দক্ষিণবঙ্গে বিপদের মাত্রা বেশ কিছুটা কমেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। বাড়তি জল ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাদের জলাধার থেকে ছাড়া জলে সমস্যা বাড়েনি। কেননা, জল ছাড়া হয়েছে কমই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, তেনুঘাট জলাধারে সাধারণত ৮৫৪ ফুটের বেশি জল ধরে রাখা হয় না।

উচ্চতা সেই মাত্রা ছাড়ালেই জল ছেড়ে দেওয়া হয়। এ বার সেখানে ১১ ফুট বেশি (৮৬৫ ফুট) জল ধরে রাখা হয়। ডিভিসি-কর্তাদের দাবি, ওই জল ঢুকলে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর ব্যারাজ হয়ে তা নিম্ন দামোদর উপত্যকাকে আরও বেশি ভাসিয়ে দিত। তাতে বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ত।

প্রশ্ন উঠেছে, ধারণক্ষমতা বেশি থাকা সত্ত্বেও ঝাড়খণ্ড সরকার এত দিন কম জল ধরে রাখত কেন?

আরও পড়ুন: স্টান্ট দেখাতে গিয়ে মৃত্যু দুই মদ্যপ বন্ধুর

সংশ্লিষ্ট সূত্রের ব্যাখ্যা, তেনুঘাট জলাধারটি ঝাড়খণ্ড সরকারের সেচ দফতরের অধীন। ওই জলাধারের জল ছাড়া বা ধরে রাখা পুরোটাই নির্ভর করে সেই দফতরের সিদ্ধান্তের উপরে। এর সঙ্গে ডিভিসি-র কোনও সম্পর্ক নেই। বিভিন্ন জলাধার থেকে জল ছাড়ার ব্যাপারে দেশ জুড়ে কেন্দ্রীয় জল কমিশনের যে-নির্দেশিকা রয়েছে, তা তারা মানতে বাধ্য নয়। তেনুঘাট রাজ্যের প্রকল্প। তারা নিজেদের ইচ্ছামতো জল ছাড়ে।

এ বার ছবিটা বদলাল কী ভাবে?

পড়শি রাজ্য-প্রশাসনের ব্যাখ্যা, এ বার অল্প সময় অতিবৃষ্টি হয়েছে। তাতে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ঝাড়খণ্ডও বিপদের মুখে পড়ে। নিজেদের পরিস্থিতি বিবেচনা করেই তারা রেকর্ড পরিমাণ জল ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। যার সুফল পায় দুই রাজ্যই। ঝাড়খণ্ডের সেচমন্ত্রী চন্দ্রপ্রকাশ চৌধুরী বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ দুই রাজ্যের মানুষের কথা ভেবেই এ বার তেনুঘাটে সাধ্যের বাইরে গিয়ে জল ধরে রাখা হয়েছে।’’

কয়েক বছর ধরে তেনুঘাটের জল ছাড়া নিয়ে অভিযোগ করে আসছেন মমতা। তাঁর অভিযোগ যে একেবারে ভুল নয়, ডিভিসি-কর্তাদের একাংশ তা মেনে নিয়েছেন। তাঁদের দাবি, তেনুঘাট কী ভাবে পরিচালনা করা উচিত, বছর দেড়েক আগে তার একটি নির্দেশিকা তৈরি করে দিয়েছে ডিভিসি। সেই অনুযায়ী ভবিষ্যতে জল ধরে রাখবে বা ছাড়বে তেনুঘাটও। ঝাড়খণ্ড সরকার এ ব্যাপারে তাদের সম্মতির কথা জানিয়েছে বলে দাবি ডিভিসি-র।

তেনুঘাটের পাশাপাশি অতিরিক্ত জল ধরে রেখে ডিভিসি-র পাঞ্চেত জলাধারও খানিকটা রক্ষা করেছে রাজ্যের মানুষকে। ডিভিসি-র মাইথন জলাধার থেকেও কোনও জল ছাড়া হয়নি। পাঞ্চেত থেকে দু’লক্ষ কিউসেকের কিছু বেশি জল ছাড়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ডিভিসি-র বক্তব্য, পাঞ্চেতে এ বার ৪২৫ ফুটের জায়গায় ৪৩১ ফুট পর্যন্ত জল ধরে রাখা হয়েছিল। এই অতিরিক্ত জল ধরে রাখায় ক্ষতি কিছুটা কম হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE