Advertisement
E-Paper

বিদ্যুৎ চুরিতে ক্ষতি বাড়ছে, নজর ঘোরাতে ফের কমিটি

এলাকার নাম বাসন্তী। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই পঞ্চায়েত এলাকায় ১০০ টাকার বিদ্যুৎ বিক্রি করে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ঘরে তোলে ১২ টাকা। অথবা পশ্চিম মেদিনীপুরের বিনপুর। সেখানে ১০০ টাকার বিদ্যুৎ বেচে আয় হয় ১৩ টাকা। বাসন্তী, বিনপুর প্রতীকী মাত্র। মগরাহাট, ক্যানিং, কীর্ণাহার, ইলামবাজার, মুরারই, নবগ্রাম— রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এমন একশোরও বেশি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে বিদ্যুৎ দিয়ে ক্ষতির বহর বাড়িয়েই চলেছে বণ্টন সংস্থা।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৫ ০৩:২০

এলাকার নাম বাসন্তী। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই পঞ্চায়েত এলাকায় ১০০ টাকার বিদ্যুৎ বিক্রি করে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ঘরে তোলে ১২ টাকা। অথবা পশ্চিম মেদিনীপুরের বিনপুর। সেখানে ১০০ টাকার বিদ্যুৎ বেচে আয় হয় ১৩ টাকা।

বাসন্তী, বিনপুর প্রতীকী মাত্র। মগরাহাট, ক্যানিং, কীর্ণাহার, ইলামবাজার, মুরারই, নবগ্রাম— রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এমন একশোরও বেশি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে বিদ্যুৎ দিয়ে ক্ষতির বহর বাড়িয়েই চলেছে বণ্টন সংস্থা। বছর বছর এই ক্ষতির কারণ যে দেদার বিদ্যুৎ চুরি— তা যেমন সরকার জানে, জানেন সংস্থার কর্তারাও। তবু এখন নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে নতুন একটি কমিটি করা হয়েছে। বণ্টন সংস্থার পদস্থ কর্তাদের মাথায় রেখেই তৈরি এই কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে— যে সব অঞ্চলে ক্ষতি বেশি হচ্ছে, সেখানে কড়া নজরদারি চালিয়ে আয় বাড়াতে হবে। কিন্তু আরও একটি কমিটি করে কাজের কাজ কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংস্থার অন্দরেই।

বণ্টন সংস্থার এক কর্তার সাফ কথা— এই ধরনের কমিটি করে বিশেষ লাভ হয় না। শুধু বছর শেষে জমা-খরচের খাতায় কিছু এ দিক-ও দিক করে আয় বাড়িয়ে দেখানো হয়। তিনি বলেন, যে সব অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যৎসামান্য টাকা হাতে আসে, সেখানে বিদ্যুৎচোরদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ না করে শুধু কমিটি করে কী লাভ!

লাভ যে বিশেষ হয় না, তা আগের তৈরি একাধিক কমিটির কাজকর্ম দেখলেই মালুম হয়। বণ্টন সংস্থা সূত্রে খবর, এর আগে সারদা কাণ্ডে অভিযুক্ত প্রাক্তন পুলিশকর্তা রজত মজুমদারকে মাথায় রেখে একটি ‘রেভিনিউ কমিটি’ গড়া হয়েছিল। শাসক দলের ঘনিষ্ঠ রজতবাবু ওই সময় বণ্টন সংস্থার পরিচালন পর্ষদের সদস্যও ছিলেন। কমিটি তৈরির সময় বলা হয়েছিল, যে কোনও উপায়ে আয় বাড়ানোই এর লক্ষ্য। বিদ্যুৎ কর্তাদের অভিজ্ঞতা বলছে, ‘নখদন্তহীন’ রেভিনিউ কমিটির সাফল্যের কোনও নজির সংস্থার আয়-ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায়নি। ফলে কিছু দিন পরে সেই কমিটি তুলে দেওয়া হয়।


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

তারও আগে তৈরি করা হয়েছিল ‘এনার্জি কমিটি’। কী কাজ ছিল তাদের? কোন অঞ্চলে মাসে কত ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে এবং তার বিনিময়ে কত টাকা আয় হচ্ছে— তার পরিসংখ্যান তৈরি করা। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তার পর সময়ের সঙ্গে খাতায়-কলমে এই এনার্জি কমিটি থেকে গেলেও তাদের এখন আর কোনও কাজ নেই। সংস্থার এক সূত্র জানাচ্ছে, ২০০৩ সালের বিদ্যুৎ আইনে বিদ্যুৎ চুরি রুখতে প্রতিটি রাজ্যকে বিশেষ পুলিশ বাহিনী তৈরি করতে বলা হয়েছিল। বিদ্যুৎ চুরি রুখতে বাহিনীর হাতে প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দিতে বলা হয়েছিল। এ রাজ্যে সেই বাহিনী আজও তৈরি হয়নি। উল্টে ২০১১ সালের শেষে অভিযানের সময়ে মগরাহাটে পুলিশের গুলিতে দু’জনের মৃত্যুর পর হুকিং-বিরোধী অভিযানই বাতিল করে দিয়েছে বণ্টন সংস্থা।

এই পরিস্থিতিতে নতুন একটি কমিটি গড়ার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। সংস্থার কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, ক্ষতি নিয়ে ঋণদানকারী ব্যাঙ্ক বা বিভিন্ন সরকারি নোডাল এজেন্সি প্রশ্ন তুলতে পারে। তাকে আড়াল করতেই কমিটি গড়া হয়। পুরোটাই লোক দেখানো। অন্য অংশের মতে— বিদ্যুৎ চুরি, বিল না মেটানো-সহ যে কোনও চুরি বন্ধে যে সব নিয়ম চালু আছে, তার ঠিকমতো সদ্ব্যবহার করলেই আয় কয়েক গুণ বাড়তে পারে। এ জন্য আলাদা করে কোনও কমিটি গড়ার দরকার নেই।

সংস্থার এক কর্তা জানান, বিদ্যুৎ চুরি করে ধরা পড়লে জেল পর্যন্ত হওয়ার আইন আছে। তবু কোটি-কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরি হয়ে যাচ্ছে! কারণ, চোরেরা জানে ধরা পড়লে কিছু জরিমানা হলেও জেল হবে না। অনেক সময় কমিটিগুলি পরিদর্শনে গিয়ে কিছু মানুষের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া বা খারাপ মিটার পরিবর্তন করে নতুন মিটার বসিয়ে দেওয়ার মতো নির্দেশ দেয়। কিন্তু কোনও আইনি পদক্ষেপ করার সুপারিশ করতে পারে না।

নয়া কমিটি গঠনের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান নারায়ণস্বরূপ নিগম অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু দাবি করেছেন, ‘‘বিভিন্ন পদক্ষেপ করে গত এক বছরে রাজ্যে গ়ড় ক্ষতির হার দেড় শতাংশ কমানো গিয়েছে। আগামী দিনে তা আরও কমানো যাবে।’’

electricity kolkata pinaki bandopadhyay police money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy