অতিমারির জেরে জীবন হয়তো থমকে গিয়েছে কিছুটা। তবে স্বপ্নেরা হার মানেনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ‘দ্য টেলিগ্রাফ স্কুল উৎকর্ষ পুরস্কার’-এর ভার্চুয়াল আসর সেটাই বুঝিয়ে দিল।
বরং দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া দশাতেই খেই মেলে নতুন পথের। বাধা-বিপত্তির বছর ২০২০তেই সিকি শতক পারও করে ফেলল স্কুলস্তরের রংবেরঙের পড়ুয়া, অভিভাবক, শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারীদের স্বীকৃতির এই ছক-ভাঙা পুরস্কার আসর। ভার্চুয়াল পরিসরের প্রথম উদযাপনেও তা ছাপ রেখে গেল। সাধারণত দু’টি সংস্করণে বছরবছর দেখা যায় এই অনুষ্ঠান। প্রাথমিক পর্বেই ভিড় থাকে বেশি। আর চূড়ান্ত পর্বে সব থেকে চিত্তাকর্ষক কাহিনির শৃঙ্গজয়ীদের কুর্নিশ জানাতে ভরে ওঠে সায়েন্স সিটি-র প্রেক্ষাগৃহ।
এ বার পুরস্কার আসরের গোড়ার পর্বে বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের হাততালি-উচ্ছ্বাস ছিল না। সশরীরে ছিলেন না বিশিষ্ট অতিথিরা। আবেগ-ভরা আবহসঙ্গীতও নেই। তবে স্বীকৃতি ছিনিয়ে নেওয়া বাধা-বিপত্তি জয়ের গল্পগুলো একই রকম রেখাপাত করে গেল। জীবনে বিপর্যয় বা সঙ্কট তো আগাম দিনক্ষণ ঘোষণা করে আসে না। কিন্তু কেউ কেউ পারেন, হঠাৎ মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লেও ঘাড় সোজা রাখতে। হেরিটেজ স্কুলের প্রণয় মিত্তল যেমন এ বার আইএসসি-র অর্থনীতির পেপার লিখতে বসে ধানবাদে পিতৃবিয়োগের খবর পেয়েও মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন। পরীক্ষা দিয়ে ৪০০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরে মায়ের পাশে থেকেছেন। আবার গাড়ি চালিয়েই কলকাতায় এসে পরের পরীক্ষা দিয়ে ফিরে গিয়েছেন। ৯৫ শতাংশ নম্বরও তাঁর হস্তগত। পরীক্ষার মুখে বাবার অসুস্থতার খবর পাওয়া কোমল পিল্লাইয়ের পরিস্থিতিও প্রায় এক রকম। হঠাৎ পক্ষাঘাতে চলৎশক্তি হারানো প্রিয়ঙ্কা ভঞ্জ চৌধুরী বা ফুসফুসের জটিলতায় রক্তবমি করার ফাঁকেও বোর্ডের পরীক্ষায় অবিচল শুভঙ্কর দাসের গল্পও এ দিন শোনা গিয়েছে। একলা মায়ের সন্তান, ভানুপ্রতাপ সিংহ বা অকালে পিতৃহারা প্রসেন্দু চৌধুরীও পেয়েছেন সাহসিকতার বৃত্তি পুরস্কার।