নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করার পরে জেটিগুলিকে পাকাপোক্ত করে তোলার কাজ শুরু করল রাজ্য পরিবহণ দফতর। রাজ্য জুড়ে এক হাজারেরও বেশি ছোট-বড় জেটি রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম ধাপে রাজ্যের ২৫০ জেটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। যা পাকাপোক্ত করতে রাজ্যের খরচ ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। পরিবহণ দফতরের কর্তাদের দাবি, জেটিগুলিকে পাকাপোক্ত করে তুলতে ওই অর্থ খরচে ইতিমধ্যেই সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে অর্থ দফতর।
জেটিগুলির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, পাকাপোক্ত করা এবং জলপথের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কাজে ইতিমধ্যেই সড়ক পথের ধাঁচে ‘রিভার সেফটি’ তহবিল গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। ওই তহবিল থেকেই জেটিগুলি পাকাপোক্ত করার অর্থ জোগান দেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন রাজ্য পরিবহণ দফতরের কর্তারা।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, মোটামুটি চার ধরনের জেটি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে দু’টির গ্যাংওয়ে ২৫ মিটার লম্বা ও যথাক্রমে ২.৫ এবং ৩ মিটার চওড়া। অন্য দু’টির ক্ষেত্রে চওড়া ২.৫-৩ মিটার হলেও লম্বা হবে ৩০ মিটার। ২৫ মিটার লম্বা গ্যাংওয়ের জেটি তৈরিতে খরচ পড়বে ২.৯৬ কোটি এবং ৩.০১ কোটি। অন্য দিকে, ৩০ মিটার লম্বা গ্যাংওয়ের জেটি তৈরিতে খরচ হবে ৩.০৩ এবং ৩.০৭ কোটি। অর্থাৎ, পাকাপোক্ত করতে জেটি-প্রতি গড়ে খরচ পড়বে তিন কোটির মতো। ২৫০ জেটিকে এমন পোক্ত করে তোলার খরচ ৭৫০ কোটির কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে ৫০০ কোটির তহবিল গড়ে জেটি পাকাপোক্ত করার কাজ শুরু করা হবে। তার পরে প্রয়োজন মতো বাকি অর্থের জোগান দেওয়া হবে।’’ ওই কর্তা বলেন, ‘‘কোথাও কোনও বাঁশ, কঞ্চি বা কাচা জেটি থাকবে না— এটা নিশ্চিত। এ বার পাকা জেটি কোথায় কোন উপাদানের হবে, তা জলপথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি চূড়ান্ত করবে।
কিন্তু ওই বিশাল পরিমাণ অর্থ আসবে কোথা থেকে?
পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, জলপথ পরিবহণ উন্নয়নে বিশ্ব ব্যাঙ্কের থেকে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার কথা। তা থেকেই জেটি পাকাপোক্ত করার অর্থ জোগার হবে বলে দাবি পরিবহণ কর্তাদের।
ইতিমধ্যেই ২৭৯টি জেটি সংস্কারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া শুরু করেছে সরকার। এতে মোট খরচ হচ্ছে ২৮ কোটি টাকার মতো। ওই টাকায় প্রত্যেক জেটিতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত এসওপি তৈরি হচ্ছে। যাতে প্রতি জেটির মুখে ফেরির সময়সীমা এবং ভাড়ার বিস্তারিত তালিকা দেওয়া থাকবে। সব ফেরিতেই নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী তোলার দিকটি নিশ্চিত করা হবে। সন্ধ্যা থেকে জেটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। জেটিতে যাত্রী পারাপারের সময়ে নিয়ম-বিধি মানা হচ্ছে কি না, তা দেখতে এবং ভিড় সামলাতে নিয়মিত পুলিশ কিংবা গ্রিন পুলিশ মোতায়েন রাখতে হবে। যাত্রী-সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জেটির সামনে প্রতি দিন জোয়ার-ভাটার সময় আগে থেকে লিখে রাখতে হবে। এমনকী, রাতে সুরক্ষিত লঞ্চ পরিষেবার জন্য সব ফেরিতে পর্যাপ্ত হেডলাইটের ব্যবস্থা করতে হবে। রাখতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে ‘লাইফ সেভিং’ পোশাক ও জিনিসপত্রও। এর সঙ্গে জেটিগুলি পাকাপোক্ত হলে জলপথের দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে যাবে বলে আশাবাদী নবান্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy