Advertisement
E-Paper

লেখাই হল না ‘ধর্ষণের চেষ্টা’

চার মাসে দু’বার তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে একই ব্যক্তি, এই অভিযোগ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মালদহের ইংরেজবাজারের বিধবা মহিলা। বৃহস্পতিবার পুলিশ অভিযুক্ত রিন্টু শেখকে আদালতে পেশ করার পর ওই মহিলা জানতে পারলেন, তাঁর অভিযোগের বয়ান থেকে ধর্ষণের প্রসঙ্গটি সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দিয়েছে পুলিশ! কেবল তাঁর বাবাকে মারধরের অভিযোগে রিন্টুর বিরুদ্ধে (৪৪৮ ও ৩২৬ ধারা) জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৯

চার মাসে দু’বার তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে একই ব্যক্তি, এই অভিযোগ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মালদহের ইংরেজবাজারের বিধবা মহিলা। বৃহস্পতিবার পুলিশ অভিযুক্ত রিন্টু শেখকে আদালতে পেশ করার পর ওই মহিলা জানতে পারলেন, তাঁর অভিযোগের বয়ান থেকে ধর্ষণের প্রসঙ্গটি সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দিয়েছে পুলিশ! কেবল তাঁর বাবাকে মারধরের অভিযোগে রিন্টুর বিরুদ্ধে (৪৪৮ ও ৩২৬ ধারা) জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

কী করে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ বাদ পড়ল? ওই মহিলা জানান, তাঁর অক্ষর পরিচয় নেই। তাঁর বক্তব্য শুনে পুলিশেরই এক কর্মী তাঁর অভিযোগ লিখে নেন। তাতে যে ধর্ষণের প্রসঙ্গ নেই, তা তিনি জানতেনই না। এ দিন তা জানতে পেরে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রিন্টুর রডের আঘাতে গুরুতর জখম বাবার পাশে বসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি।

ইংরেজবাজারের মহিলার দায়ের করা এফআইআর-এ লেখা আছে, ‘বেশ কিছুদিন যাবৎ উক্ত বিবাদী পূর্ব আক্রোশবশত আমার উপর অত্যাচার করছে।’ ওই মহিলাকে ‘মারার জন্য’ রিন্টু শেখ প্রথমে তাঁর কাজের জায়গায়, পরে তাঁর বাড়িতে ঢুকে হামলা করে বলে লেখা হয়েছে এফআইআরে। ‘ধর্ষণ’ বা ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ কথাগুলির উল্লেখ নেই। সেই বয়ানের নীচে মহিলার টিপসই রয়েছে। প্রসঙ্গত, বুধবার রিন্টুর স্ত্রী মিনা বিবির থেকে একটি বয়ান লিখিয়ে তাঁর টিপছাপ নেয় পুলিশ। তাতে ইংরেজবাজারের ওই বিধবা মহিলার বিরুদ্ধে টাকা, সোনা দাবি করার অভিযোগ ছিল। যদিও মিনা জানান, তিনি পুলিশের কাছে এ সব অভিযোগ করেননি।

এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অসঙ্গত কাজের অভিযোগ আগেই উঠেছিল। বুধবারই ওই বিধবা মহিলা জানিয়েছিলেন, গত ৯ জুলাই রিন্টুর বিরুদ্ধে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ না নিয়ে থানাতেই সালিশি করে ক্ষতিপূরণ আদায় করে পুলিশ। এ দিন ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলে আরও কতগুলি প্রশ্ন উঠে এল। এক, মহিলার কাছে পুলিশ তাঁর অভিযোগের কোনও কপি দেয়নি কেন? দুই, কোনও নিরক্ষর ব্যক্তির হয়ে কেউ অভিযোগ লিখলে, তাতে লেখকের নাম, ঠিকানার উল্লেখ থাকা আবশ্যক। সঙ্গে এ-ও লেখা থাকতে হবে যে, অভিযোগপত্রের বয়ান অভিযোগকারীকে পড়ে শোনানো হয়েছে। এগুলি না থাকলে এফআইআর-টি আইনের চোখে ত্রুটিপূর্ণ হয়ে যাবে, জানাচ্ছেন আইনজীবীরা। অথচ ওই মহিলার দায়ের করা অভিযোগ (কেস নম্বর ৯৫৩/১৪) যিনি লিপিবদ্ধ করেছেন, তাঁর নাম, ঠিকানার উল্লেখ নেই।

কেন এত ত্রুটি থেকে যাচ্ছে পুলিশের কাজে? বারবার ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ করছেন ওই বিধবা মহিলা, তবু কেন তা নথিভুক্ত করছে না পুলিশ? এসপি থেকে ডিআইজি, সকলেই এ প্রসঙ্গে কুলুপ এঁটেছেন মুখে। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “আমি অন্য যে কোনও ব্যাপারে বলতে পারি। এটা নিয়ে কিছু বলতে পারব না।” মালদহের ডিআইজি সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “এফআইআর দেখিনি। তাই কিছু বলতে পারব না।”

মুখে কুলুপ এঁটেছে অভিযুক্ত রিন্টু শেখও। এ দিন আদালতে তোলার সময় তাকে প্রশ্ন করা হয়, “নির্যাতিতা মহিলাকে কি আপনি চেনেন? আপনার সঙ্গে ওই মহিলার কোনও সম্পর্ক রয়েছে? মন্ত্রী কেন আপনার পাশে দাঁড়ালেন?” কোনও জবাব না দিয়ে কোর্ট লক আপে ঢুকে পড়ে রিন্টু। ধৃতকে আট দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার আর্জি মঞ্জুর করেছেন বিচারক।

ইংরেজবাজারের ওই বিধবা মহিলার অভিযোগ, তৃণমূলের নেতাদের একাংশ ও পুলিশ তাঁকে মিথ্যেবাদী সাজাতে ষড়যন্ত্র করেছে। তাঁর সন্দেহ, তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী তদন্ত শুরুর সময়ে ‘ধর্ষণ হয়নি’ বলাতেই পুলিশ তাঁর বয়ান বদলে দিয়েছে। ওই মহিলা বলেন, “সে দিন ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ জানানোর পরে থানার এক অফিসার মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু, কোথা থেকে একটা ফোন পাওয়ার পরে ওই অফিসার ‘মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর দরকার নেই’ বলে জানিয়ে দেন।”

তৃণমূলের শাসনকালে ধর্ষণের অভিযোগকে সরাসরি অস্বীকার করা নতুন নয়। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ কাণ্ডকে ‘সাজানো ঘটনা’ বলেছিলেন। কাটোয়ায় এক বিধবা মহিলার ধর্ষণকেও ‘সিপিএম-এর চক্রান্ত” বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী ধূপগুড়িতে এক কিশোরীর বিবস্ত্র দেহ মেলার পরেই দাবি করেন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। আক্রান্ত মহিলার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলাও নতুন নয়। তৃণমূলের সাংসদ, বিধায়কদের মুখে নানা সময়ে তা শোনা গিয়েছে। মাঝে লাভপুর গণধর্ষণ কাণ্ডে অভিযোগ আসা মাত্র অতিসক্রিয় হয়েছিল পুলিশ-প্রশাসন। ফলে অনেকে আশা করেছিলেন, ধর্ষণ নিয়ে দলের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক অবস্থান বদলাচ্ছে। কিন্তু ইংরেজবাজারে দেখা গেল, তৃণমূল আছে তৃণমূলেই। আক্রান্ত মহিলা অবশ্য হাল ছাড়েননি। তিনি এ দিন বলেন, “আমি সব জায়গায় যাব। দেখি কেউ পাশে দাঁড়ান কি না? না হলে আদালতের দরজায় বসে থাকব। কী ভাবে আমাকে সুবিচার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, সেটাও আদালতে জানাব।”

malda rape case state news online state news malda rape police complain attempt to rape written complain
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy