Advertisement
১১ মে ২০২৪

এই রাজমিস্ত্রি এখন ইউরি গ্যাগারিন, মুর্শিদাবাদের গ্রামে

মাস তিনেক আগে তাই এর্নাকুলাম-কলকাতা সস্তার উড়ানে কেটেছিলেন টিকিট। নিজের সব থেকে প্রিয়, গোলাপি রঙের জামা, দু’দিন ধরে ইস্ত্রি করা নীল প্যান্টটা গলিয়ে ভেসে পড়েছিলেন আকাশে।

মাচায় মধ্যমণি মিজানুর রহমান। নিজস্ব চিত্র

মাচায় মধ্যমণি মিজানুর রহমান। নিজস্ব চিত্র

সুজাউদ্দিন
ডোমকল শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৮ ০২:৫১
Share: Save:

খাটো বাঁশের মাচায় আসনপিঁড়ি হয়ে বসে আছেন তিনি। বাকিরা নীচে, উন্মুখ হয়ে ঊর্ধ্বমুখ— ঝিঁঝিঁ ডাকা সাঁঝ, হ্যাজাকের আলোয় মিজানুরের ‘পিলেন’-কাহিনি শুনে তারা যেন জৈষ্ঠের সন্ধ্যায় ভেসে পড়েছে বেহেস্তের আকাশে!

সীমান্তে, কাঁটাতারের সঙ্গে ঘেঁষাঘেঁষি করে ছোট্ট বসত কুপিলা। সে গাঁয়ের আটপৌরে উঠোনে ছায়া ফেলে ‘পিলেনে’র ভেসে যাওয়া দেখে ছানাপোনারা এখনও নির্মল প্রশ্ন করে— ‘ও চাচা, ওইডা কি পাখি বটে, উড়ার সময় অমন শব্দ করে!’ তাদের এমন নাছোড় কৌতূহলের জবাব এখন রমজানের সন্ধ্যায় তারিয়ে তারিয়ে দিচ্ছেন মিজানুর রহমান।

বার পাঁচেক ফোটানো চায়ে সুড়ুৎ করে একটা চুমুক মেরে তিনি বলে চলেছেন তাঁর গ‌জ়ব উড়ান যাত্রা— ‘‘সে বড় মজার ব্যাপার বটে, হেই এক ভাঁড় চায়ের দাম পাক্কা আশি টাকা। তবে, ‘ফিরি’তে (ফ্রি) জলের বোতল পাওয়া যায়। আর, হ পিলেনে (প্লেন) কিন্তু ‘টয়লিট’ (টয়লেট) আছে, ছোট-বড় কাজ নির্ভয়ে করা যায় সেইখানে!’’ যে প্লেন-কাহিনি শুনতে ভেঙে পড়ছে আশপাশের গাঁ-গঞ্জও।

কেরলের এর্নাকুলামের রেল স্টেশনে টাইলস বসানোর রাজমিস্ত্রি মিজানুর বছর পাঁচেক ধরে প্রবাসী। ইদ-মহরমের মরসুমে হপ্তাখানেকের ছুটিতে জলঙ্গি পাড়ের গ্রামে এক বেলার জন্য ফিরে আসা তাঁর। মিজানুর বলছেন, ‘‘এত কাল সাড়ে তিন দিনের ট্রেনযাত্রাই ছিল গ্রামে ফেরার একমাত্র উপায়। যাতায়াতেই সাত দিন কেটে যেত। কোনওরকমে একটা রাত গাঁয়ের ঘরে কাটানো।’’ মিজানুর তাই গত দু’বছর ধরে শুরু করেছিলেন সঞ্চয়। জমানো টাকায় উড়ানে যাতায়াত করে ক’টা বাড়তি দিন গ্রামে কাটাবেন, এমনই ছিল সাধ।

মাস তিনেক আগে তাই এর্নাকুলাম-কলকাতা সস্তার উড়ানে কেটেছিলেন টিকিট। নিজের সব থেকে প্রিয়, গোলাপি রঙের জামা, দু’দিন ধরে ইস্ত্রি করা নীল প্যান্টটা গলিয়ে ভেসে পড়েছিলেন আকাশে।

রাজমিস্ত্রির বা রাস্তা মেরামতির কাজে মুর্শিদাবাদ-নদিয়ার বহু মানুষ পাড়ি দেন কেরল। সামান্য বাড়তি আয়ের স্বপ্নে, পরিবার-ছেড়ে যাওয়া আর পথ চেয়ে বসে থাকা় সেই সব মানুষের কাছে মিজানুর যেন ছুড়ে দিলেন এক নভশ্চরের স্বপ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE