গত বছর পুজোর ছুটিতে সপরিবার মলদ্বীপ বেড়াতে গিয়েছিলেন সল্টলেকের দেবকুমার গুহ। কয়েক লক্ষ টাকা খরচও করেছিলেন। তবে বেড়ানোর চেয়ে যে হেনস্থা হতে হবে বেশি, তা ভাবতেও পারেননি তিনি!
কোনও ভুঁইফোঁড় সংস্থা নয়, নামী এক পর্যটন সংস্থার চাহিদা মতো যাওয়ার এক মাস আগেই প্রায় পৌনে পাঁচ লক্ষ টাকা অগ্রিম দিয়েছিলেন দেবকুমারবাবু। কিন্তু মলদ্বীপের মালে বিমানবন্দরে পৌঁছনো ইস্তক শুরু বিপত্তি! কথা ছিল, বিমানবন্দরেই তাঁদের সঙ্গী হবেন সংস্থার প্রতিনিধি। কিন্তু কেউই ছিলেন না। ফলে সেখান থেকে প্রথম বিমানটি ধরাই যায়নি। তার উপর যে বিলাসবহুল হোটেল আগে থেকেই বুক করা রয়েছে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সংস্থা, সেখানে থাকা হয়নি। শেষ তিন রাত অন্য একটি নির্মীয়মাণ হোটেলে থাকতে হয়। যার পরিষেবা অত্যন্ত খারাপ।
‘টমাস কুক ইন্ডিয়া লিমিটেড’ সংস্থাটির বিরুদ্ধে ভোগান্তির এ-হেন অভিযোগ নিয়ে তিনি কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন দেবকুমারবাবু। পর্যটকের লোকসান, ক্ষতি ও মানসিক যন্ত্রণার কথা বিবেচনা করে আদালত সম্প্রতি ওই সংস্থাকে প্রায় সওয়া তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয়। দেবকুমারবাবু টাকা পেয়েও যান।
অভিযুক্ত সংস্থার বক্তব্য, ‘‘আমরা সব সময় পর্যটকদের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে যত্নবান। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের নির্দেশ মেনে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক মিটিয়েও দিয়েছি।’’ তবে দেবকুমারবাবুর বক্তব্য, ‘‘ক্ষতিপূরণ পাওয়া সন্তুষ্টির বিষয়। কিন্তু স্ত্রী-ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বিদেশে গিয়ে যা খারাপ অভিজ্ঞতা হল, সেই ক্ষতি কি পূরণ হবে? নামী সংস্থার মাধ্যমে ভ্রমণে যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে কাকে ভরসা করব!’’
পেশায় একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্তা দেবকুমার গুহ গত বছর ১৮ থেকে ২৩ অক্টোবর মলদ্বীপ ভ্রমণে গিয়েছিলেন। তার এক মাস আগে, ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যটন সংস্থাটিকে তিনি প্যাকেজের পুরো ৪ লক্ষ ৬৫ হাজার ২২৫ টাকা দিয়েও দেন। ছ’দিনের ভ্রমণে প্রথম তিন রাত একটি রিসর্টে ও শেষ তিন রাত অন্য একটি রিসর্টে কাটানোর কথা ছিল। দু’টিই বিলাসবহুল, শেষেরটি বেশি।
দেবকুমারবাবু জানান, ১৮ অক্টোবর মালে বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পর সংস্থার কোনও প্রতিনিধিকে প্রথমে খুঁজে পাওয়া
যায়নি। তাঁর সঙ্গেই ভিলা যাওয়ার কথা ছিল। মালে বিমানবন্দরে ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষার পর যখন প্রতিনিধি এলেন, তখন মালে থেকে ভিলা যাওয়ার একটি বিমান ছে়ড়ে গিয়েছে। দেবকুমারবাবুর কথায়, ‘‘পরের বিমান ধরে ভিলা পৌঁছনো গেল বটে, তবে তত ক্ষণে গোটা দিনটা নষ্ট।’’
তিন দিনের মাথায় আরও হতভম্ব অবস্থা। দেবকুমারবাবু বললেন, ‘‘২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় পর্যটন সংস্থার তরফে ফোন আসে। জানানো হয়, ২১ তারিখ যে রিসর্টে আমাদের বুকিং ছিল, সেটা পুরোপুরি ভর্তি। তাই অন্য জায়গায় থাকতে হবে।’’ প্রতিবাদ করেও লাভ হয়নি। তাঁদের অন্য জায়গাতেই যেতে হয়। আর সেখানে পৌঁছে দেখেন নির্মাণ কাজ চলছে। ‘‘যেখানে দিনরাত কাজ হচ্ছে, সেই হোটেলে থাকাটাই অস্বস্তিকর। তার উপর খাবারের মানও ভাল ছিল না।’’— বললেন দেবকুমারবাবু।
পর্যটন সংস্থাটির তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ‘‘ওই পর্যটক তাঁর অসুবিধের কথা মলদ্বীপ থেকে আমাদের জানাননি। কলকাতা ফিরে আসার পর জানিয়েছিলেন।’’ তাঁদের যুক্তি, অন্য একটি সংস্থার মাধ্যমে তাঁরা রিসর্ট ‘বুক’ করেছিলেন। দেবকুমারবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘মলদ্বীপ থেকেই ওঁদের ই-মেল পাঠাই। জবাব পাইনি। তা ছাড়া, আমরা যে সংস্থাকে টাকা দিয়েছি, তাঁদেরই চিনব। তাঁরা অন্য কোন সংস্থাকে দায়িত্ব দিলেন বা দিলেন না, তাতে আমার কী!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy