Advertisement
E-Paper

ট্রাঙ্কের সঙ্গেই গায়েব সারদার টাকার হিসেব

সল্টলেকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সারদা-কর্ণধারের ভল্ট নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছিল। এ বার রহস্যের কেন্দ্রে সারদার তিনটি ট্রাঙ্ক। নথি-ভর্তি তিনটি ট্রাঙ্কই উধাও। হন্যে হয়ে সেগুলিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে সিবিআই। কেন? সারদার বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায় গেল, কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি টাকা পেয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টেরও মূল জিজ্ঞাসা সেটাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৪

সল্টলেকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সারদা-কর্ণধারের ভল্ট নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছিল। এ বার রহস্যের কেন্দ্রে সারদার তিনটি ট্রাঙ্ক। নথি-ভর্তি তিনটি ট্রাঙ্কই উধাও। হন্যে হয়ে সেগুলিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে সিবিআই।

কেন?

সারদার বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায় গেল, কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি টাকা পেয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টেরও মূল জিজ্ঞাসা সেটাই। আর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কবে, কখন, কত টাকা নিয়েছেন, ওই তিনটি ট্রাঙ্কে তার হিসেব ছিল বলে সিবিআই-কে জানিয়েছেন সারদার এক মহিলা হিসেবরক্ষক। ট্রাঙ্ক তিনটি রাখা ছিল মিডল্যান্ড পার্কে সারদা গোষ্ঠীর অফিসেই। এবং ওই মহিলা সেখানেই কাজ করতেন। সারদা-সাম্রাজ্যের কর্ণধার সুদীপ্ত সেনও বসতেন ওই অফিসে। সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ ওই মহিলা হিসেবরক্ষক সিবিআই-কে জানিয়েছেন, ওই তিনটি ট্রাঙ্কে সারদার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র রাখা ছিল। তার মধ্যেই ছিল প্রভাবশালী ব্যক্তিদের টাকা দেওয়ার হিসেব।

ওই মহিলা হিসেবরক্ষকের কাছ থেকে সিবিআই জানতে পেরেছে, পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সারদা কনস্ট্রাকশনের বিপুল সম্পত্তির খতিয়ানও ছিল ওই তিনটি ট্রাঙ্কে। সিবিআই সূত্রের খবর, দিল্লি থেকে গুয়াহাটি, বহরমপুর থেকে হুগলি পর্যন্ত যে-বিশাল সম্পত্তি সারদা কনস্ট্রাকশনের নামে কেনা হয়েছিল, তার কোনও নথি না-পেয়েই সোমবার সারদার ওই নির্মাণ সংস্থার নামে পৃথক এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। অন্যান্য মামলায় জামিন পেলেও সুদীপ্ত এবং তাঁর ঘনিষ্ঠেরা যাতে ছাড়া না-পান, তাঁদের কাছ থেকে যাতে সম্পত্তির হদিস পাওয়া যায়, সেই উদ্দেশ্যেই আলাদা ভাবে এফআইআর করেছে সিবিআই।

ওই তিনটি ট্রাঙ্কের খোঁজ তো চলছেই। সেই সঙ্গে সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে আরও নথিপত্রের সন্ধানে ওই সংস্থার বিভিন্ন অফিসে যেমন তল্লাশি চলছে, তেমনই চলবে। সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অর্থ লগ্নি সংস্থার কাজকর্ম নিয়েও এ বার তদন্ত শুরু করবে সিবিআই। কারণ, রাজ্যে অন্য যে-সব লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে নয়ছয়ের অভিযোগ আছে, তাদের ক্ষেত্রেও তদন্তের জন্য সিবিআই-কে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কর্পোরেট বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এ দিন রাজ্যসভায় জানান, পশ্চিমবঙ্গে ৬৩টি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে সিবিআই অফিসারেরা এখন প্রায় প্রতিদিনই ওই লগ্নি সংস্থার বিভিন্ন অফিসে হানা দিচ্ছেন। মঙ্গলবারেও সল্টলেকে সারদার একটি অফিসে হানা দেয় সিবিআই। যত দ্রুত সম্ভব জাল গুটিয়ে আনতে চাইছে ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সিবিআইয়ের খবর, তদন্তের অগ্রগতির কথা জানাতে এ দিন এক পদস্থ অফিসার কলকাতা থেকে দিল্লিতে পৌঁছেছেন।

এ দিন সকালে সিবিআইয়ের ১২ জনের একটি দল সল্টলেকের ডি-এন ব্লকে সারদার অফিসে যায়। ওই অফিসের দায়িত্বে ছিলেন সারদার অন্যতম উচ্চপদস্থ কর্তা মনোজ নেগেল। তিনি এখন জেলে। জেলা থেকে আমানতকারীদের টাকা বস্তা ভরে ওই অফিসে পৌঁছে দেওয়া হতো। যাবতীয় ‘পেমেন্ট’ বা টাকা দেওয়ার কাজ চলত ওখানেই। কখনও কখনও কিছু টাকা চলে যেত পাশের মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে। সেখান থেকেও টাকা দেওয়ার কাজ চলত। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যে-সব টাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তা দেওয়া হতো মিডল্যান্ড পার্কের অফিস থেকেই।

৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই রাজ্য পুলিশের কাছ থেকে সারদার যাবতীয় নথিপত্র হাতে পেতে চেয়েছিল সিবিআই। ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অধিকর্তা রঞ্জিত সিনহা এ দিন জানান, রাজ্য পুলিশের কাছে যে-সব তথ্য ও নথি চাওয়া হয়েছিল, তার অধিকাংশই পাওয়া গিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে আরও কিছু কাগজপত্র পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তিনি। কারণ, রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল জিএমপি রেড্ডি দিল্লিতে গিয়ে সিবিআই অধিকর্তাকে তেমনই আশ্বাস দিয়েছেন। সিবিআই অফিসারেরা এখন রাজ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া নথিপত্র খতিয়ে দেখছেন। সেই সঙ্গে সারদার বিভিন্ন কর্মীকে নিয়ে একের পর এক অফিসে হানা দিয়ে জেনে নেওয়া হচ্ছে, কোন অফিসে ঠিক কী কী নথি ছিল। রাজ্য পুলিশের দেওয়া নথির সঙ্গে কর্মীদের বয়ান মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।

সোমবারেই সারদা তদন্তে চতুর্থ এফআইআর করেছে সিবিআই। তদন্তকারীরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে সারদার বিরুদ্ধে যত মামলা ছিল, তার সব ক’টিই চারটি মামলায় যুক্ত করে নেওয়া হয়েছে। এ বার সারদা ছাড়া রাজ্যের অন্যান্য লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করছে সিবিআই।

গত ৯ মে শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, ওই দিন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে সারদা ছাড়াও অন্য যে-সব লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, সেগুলির বিরুদ্ধেও সিবিআই তদন্ত করবে। কোনও মামলায় ইতিমধ্যে চার্জশিট পেশ হয়ে গিয়ে থাকলেও তার তদন্ত শুরু করতে পারে সিবিআই। কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী সারদা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের ৬০টিরও বেশি লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে অর্থ সংগ্রহ করার অভিযোগ এসেছে। কোনও কোনও লগ্নি সংস্থা সেবি-র আইন ভেঙেছে, আবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আইনও লঙ্ঘন করেছে অনেক সংস্থা। কিছু কিছু সংস্থা লগ্নিকারীদের টাকা নেওয়ার পরে ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছে। উধাও হয়ে গিয়েছে তাদের মালিক-কর্মকর্তারা। কোন কোন লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে কোথায় ঠিক কী ধরনের অভিযোগ জমা পড়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

হাসনাবাদে মৃত্যু এজেন্টের

অস্বাভাবিক মৃত্যু হল সারদার এক এজেন্টের। তাপস দাস (৪৫) নামে ওই ব্যক্তির বাড়ি হাসনাবাদের বরাজপুর গ্রামে। জমা টাকা ফেরত দিতে না পারায় গ্রাহকদের কাছে তাঁকে নিয়মিত গঞ্জনা শুনতে হচ্ছিল বলে অভিযোগ পরিবারটির। খুনের হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল কিছু দিন ধরে। বৃহস্পতিবার কীটনাশক খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তাপসবাবু। মঙ্গলবার মারা যান আরজিকর হাসপাতালে। অর্থলগ্নি সংস্থায় রাখা টাকা ফিরত দিতে না পারায় এই নিয়ে গত কয়েক মাসের মধ্যে বসিরহাটে এক দম্পত্তি-সহ পাঁচ জনের মৃত্যু হল।

cbi saradha scam sudipto sen debjani kunal ghosh tapas das
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy