Advertisement
০৬ মে ২০২৪

স্কুল বাঁচাতে শিক্ষক-দক্ষতা বৃদ্ধির দাওয়াই

শিক্ষাবিদদের অভিমত, প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরেজি চর্চার উপরে বাড়তি গুরুত্ব দিলে এবং পঠনপাঠনে আরও বেশি করে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে বাংলা স্কুলের উপরে সকলের আস্থা অটুট থাকবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০৪:২৫
Share: Save:

পড়ুয়ার অভাবে খাস কলকাতায় একসঙ্গে ৭৫টি বাংলা মাধ্যমের স্কুল যে বন্ধ হওয়ার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে, সেই খবর প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল শুরু হয়েছে শিক্ষা শিবিরে। সরকার পোষিত বাংলা স্কুলের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার প্রবণতায় সকলেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। সমস্যার উৎস খুঁজে প্রতিকারের উপায় বাতলাচ্ছেন অনেকেই।

শিক্ষাবিদদের অভিমত, প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরেজি চর্চার উপরে বাড়তি গুরুত্ব দিলে এবং পঠনপাঠনে আরও বেশি করে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে বাংলা স্কুলের উপরে সকলের আস্থা অটুট থাকবে।

শিক্ষাজগতের অধিকাংশের বক্তব্য, উচ্চ প্রাথমিক থেকে সব স্তরে ইংরেজিকে আবশ্যিক বিষয় করতে হবে। পড়ুয়াদের ইংরেজি-ভীতি কাটিয়ে ওই বিষয়ের প্রতি তাদের আগ্রহী করে তুলতে হবে শিক্ষকদেরই। তার জন্য শিক্ষকদের শিক্ষণদক্ষতা আরও বাড়াতে হবে। প্রাথমিক স্তরে ইংরেজির জন্য পৃথক শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করা জরুরি। অথবা ইংরেজির বিশেষ পাঠ্যক্রমে যে-কোনও দু’জন শিক্ষককে ভর্তি করিয়ে ওই বিদেশি ভাষা শেখানোর ব্যাপারে দক্ষতা বাড়ানো দরকার।

পাঁচ পরামর্শ

প্রাথমিকে ইংরেজির শিক্ষক নিয়োগ বা শিক্ষকদের বিশেষ ইংরেজি প্রশিক্ষণ।

সরকারি কর্মী ও শিক্ষক-সন্তানদের বাংলা স্কুলে পড়ানো।

শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ।

পঠনপাঠনে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো।

নাগরিক সমাজ গড়ে স্কুলের পঠনপাঠনে নজরদারি।

এ ছাড়া পড়ুয়ারা যাতে জড়তা ছেড়ে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা, শিক্ষামূলক ভ্রমণ, বিতর্কসভা ইত্যাদিতে সক্রিয় ভাবে যোগ দেয়, তার বন্দোবস্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে স্কুলের ইতিবাচক দিকগুলিকে তুলে আনতে হবে প্রচারের আলোয়। ২০১৩ সালের নতুন পাঠ্যক্রম যে বিজ্ঞানসম্মত, সেই বিষয়ে প্রচার চালাতে হবে। ‘‘পঠনপাঠনের মান যাচাইয়ের জন্য স্কুলের উপরে প্রতিনিয়ত নজরদারির প্রয়োজন। এ ছাড়া ইংরেজিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের দক্ষতা বাড়ানো খুবই দরকার। তেমন হলে নাগরিক সমাজ গঠন করে স্কুলে পড়াশোনার উপরে নজর রাখা যেতে পারে,’’ বলছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।

স্কুল বন্ধের আশঙ্কাকে ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক টানাপড়েন। শিক্ষা শিবিরের অধিকাংশই মনে করেন, বাংলা মাধ্যমের স্কুল থেকে অভিভাবকদের মুখ ফেরানোর পালা শুরু হয়েছিল বাম আমলেই। তাঁদের অনুযোগ, আশির দশকে প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি পড়ানো বন্ধ করার মাসুল গুনে যেতে হচ্ছে এখনও।

তবে শিক্ষা শিবিরের একাংশের মত, অভিভাবকদের অনেকে স্রেফ সামাজিক ঠাট বজায় রাখার তাগিদে ইংরেজি মাধ্যমের দিকে ঝুঁকছেন। এই ঝোঁক থেকে অভিভাবকদের বার করে আনার জন্য সব শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সরকারি কর্মীদের উচিত, নিজেদের সন্তানকে বাংলা মাধ্যমের স্কুলে ভর্তি করানো। তার জন্য অবশ্য সবার আগে যোগ্য হয়ে উঠতে হবে বাংলা স্কুলগুলিকেই। এবং সেই যোগ্যতার আবশ্যিক মাপকাঠি হল ইংরেজি পঠনপাঠনে শিক্ষকদের সাবলীলতা। শিক্ষকেরা ইংরেজি বলা এবং লেখায় পড়ুয়াদের আকর্ষণ করতে না-পারলে দোষ পড়বে স্কুলের ঘাড়ে। তীব্র হবে স্কুল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য সোমবার বিধানসভায় দাবি করেন, স্কুল বন্ধ হচ্ছে না। স্কুলের পরিকাঠামো উন্নত করা হচ্ছে। সরকার পোষিত যে-সব স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠন চালু করা সম্ভব, সেখানে সেটাও করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Teacher Student School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE