Advertisement
E-Paper

আতঙ্ক কাটাতে মিছিল

পাহাড়ি মানুষের মধ্যে আস্থা আনতে এটা যদি প্রথম ধাপ হয়, তা হলে দ্বিতীয় ধাপ হল আজ, মঙ্গলবার কার্শিয়াঙে বিনয় তামাঙ্গপন্থী অনীত থাপার সভা। এ দিকে তাকিয়ে রয়েছেন আলোচনাপন্থী এবং কট্টরপন্থী, সব পক্ষই।

কিশোর সাহা ও কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:১৬
পায়ে-পায়ে: পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর দাবিতে তৃণমূলের মিছিল। সোমবার মিরিকে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

পায়ে-পায়ে: পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর দাবিতে তৃণমূলের মিছিল। সোমবার মিরিকে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

থরবু চা বাগান থেকে মিছিলে যোগ দিতে এসেছেন দুই মহিলা। বলছিলেন, ‘‘দোকানে হাজার পাঁচেক টাকা ধার। রোজগারপাতি, কেনাকাটা সবই বন্ধ। পরিবারসুদ্ধু স্কোয়াশ আর কচু খেয়ে আছি এখন। এই বন্‌ধে তাই আমাদের সায় নেই আর।’’

একই কথা বলছিলেন মিরিক বাজারের এক জুতোর দোকানদার। বলছিলেন মিরিক লেক এলাকার এক রেস্তোরাঁ মালিক। আর এঁদের সকলের অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে সোমবার হ্রদের শহরে মিছিল করল তৃণমূল। খোলা হল কিছু দোকানপাট। মিরিক পুরসভায় গিয়ে কাজে বসলেন তৃণমূলের চেয়ারম্যান এল বি রাই।

পাহাড়ি মানুষের মধ্যে আস্থা আনতে এটা যদি প্রথম ধাপ হয়, তা হলে দ্বিতীয় ধাপ হল আজ, মঙ্গলবার কার্শিয়াঙে বিনয় তামাঙ্গপন্থী অনীত থাপার সভা। এ দিকে তাকিয়ে রয়েছেন আলোচনাপন্থী এবং কট্টরপন্থী, সব পক্ষই। সভা যদি ব্যর্থ হয়, তা হলে ধাক্কা খাবে পাহাড়কে স্বাভাবিক করার চেষ্টা। আর যদি সফল হয়, তা হলে কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবেন বিনয় তামাঙ্গরা। তখন বিমল গুরুঙ্গের ছায়া কাটাতে আরও বড় পদক্ষেপ করতে পারেন বিনয়।

আরও পড়ুন: মিছিলে অস্ত্র নয়, বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

প্রশাসন এবং আলোচনাপন্থী, দু’পক্ষই বুঝতে পারছে, মুখে বন্‌ধ তোলার কথা বললেও পাহাড়বাসীদের মন থেকে এখনই আতঙ্ক পুরোপুরি কাটানো যথেষ্ট কঠিন। বিশেষ করে রোজই যেখানে কোনও না কোনও বিস্ফোরণ বা নাশকতার চেষ্টার খবর মিলছে। রবিবারও দার্জিলিঙের লেবংয়ে একটি বিস্ফোরক তৈরির কারখানার হদিস পেয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার ৩ জন মোর্চার সমর্থক বলে পুলিশের দাবি। গুরুঙ্গ-সহ কয়েক জন কট্টরপন্থী নেতা এখনও সিকিমে লুকিয়ে রয়েছেন। এবং তাঁরা যে ওখান থেকে কলকাঠি নেড়ে এখানে বড় কোনও গোলমাল বাধাবেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়, প্রশ্ন পাহাড়বাসীর।

কিন্তু গুরুঙ্গের খোঁজে তল্লাশিতে যাওয়া নিয়ে অন্য জটিলতা তৈরি হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে মনে করা হচ্ছে, গুরুঙ্গ এখন সিকিমেই লুকিয়ে রয়েছেন। সে রাজ্যে তল্লাশি চালাতে সাহায্য চেয়ে আবার চিঠি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কিন্তু সিকিম পুলিশের বক্তব্য, সে রাজ্যে ঢুকে কাউকে গ্রেফতার করতে হলে আন্তঃরাজ্য তল্লাশির নিয়ম যথাযথ ভাবে মানতে হবে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে। সিকিম পুলিশের এক কর্তার দাবি, সম্প্রতি নামচি-কাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ওই নিয়ম অনেকটাই মানেনি।

সিকিমের ওই পুলিশকর্তার অভিযোগ, নামচি থানায় চিঠি দিয়ে সিআইডি সহযোগিতা চেয়েছে, সেটা ঠিক। কিন্তু, থানা যখন চিঠি পেয়ে সহযোগিতার তোড়জোড় করছে, তখন অন্য রাস্তা দিয়ে পুলিশের দু’টি গাড়ি ঢুকে তল্লাশি চালাতে শুরু করে। ওই পুলিশকর্তার দাবি, এই নিয়ে বিশদে রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। যথাস্থানে সেটি জানাবে সিকিম সরকার।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পাল্টা দাবি, আন্তঃরাজ্য সম্পর্ক ভাল রাখতেই আগাম সব কিছু নামচি পুলিশকে জানিয়ে তল্লাশিতে যাওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের একজন শীর্ষ পুলিশ কর্তা জানান, সিকিমের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে নামচি-কাণ্ড নিয়ে কোনও আপত্তি নবান্নের কাছে পৌঁছয়নি। ফলে, এখনই সরকারি ভাবে প্রকাশ্যে সিকিমের সমালোচনা করবে না রাজ্য। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে বিষয়টি জানানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে।

এই জটিলতা কাটিয়ে কবে গুরুঙ্গের খোঁজে নতুন করে তল্লাশি করা যাবে, বা আদৌ যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তার থেকে বরং মিছিল-মিটিং করে, দোকানপাট খুলিয়ে সাধারণ মানুষের মন থেকে আতঙ্ক দূর করতে চাইছে প্রশাসন। সেই লক্ষ্যেই সোমবার পতাকাবিহীন তৃণমূলের মিছিল দেখল মিরিক।

এর পরে কী হবে, অপেক্ষায় সকলেই।

Darjeeling Unrest Protest Rally tmc Indefinite Strike Gorkhaland GJM Morcha Bimal Gurung Binay Tamang বিনয় তামাঙ্গ বিমল গুরুঙ্গ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy