Advertisement
০৬ মে ২০২৪

রামের উদয়, বামের অস্তে উদ্বিগ্ন তৃণমূল

দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস শুধু জিতেছে তা নয়, ভোটও বাড়িয়েছে ২ শতাংশের কিছু বেশি। গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় উপ-নির্বাচনে জয়ের ব্যবধান বেড়েছে প্রায় ৮ হাজার।

শঙ্খদীপ দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৩৫
Share: Save:

দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস শুধু জিতেছে তা নয়, ভোটও বাড়িয়েছে ২ শতাংশের কিছু বেশি। গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় উপ-নির্বাচনে জয়ের ব্যবধান বেড়েছে প্রায় ৮ হাজার।

অথচ এই ‘দুর্দান্ত সাফল্যের’ মধ্যেও বৃহস্পতিবার শাসক দলেই প্রশ্ন উঠেছে, এই ফলাফল সত্যিই কি খুশি হওয়ার মতো? না কি বিজেপি যে ভাবে দ্রুত শক্তি বাড়াচ্ছে, তাতে প্রতি মুহূর্তে এখন মেপে পা ফেলতে হবে তৃণমূলকে। ইঞ্চি ইঞ্চি জমি আগলে রাখতে হবে!

যদিও বিজেপির উত্থান নিয়ে তাঁর যে কোনও উদ্বেগ নেই, তা বোঝাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘কে সেকেন্ড হবে, কে থার্ড হবে, তা দেখার দায়িত্ব আমার নয়।’’ সঙ্গে এও বলেন, ‘‘আমি তো আগেও বলেছি, বিজেপির কোলে সিপিএম দোলে।’’ পাশাপাশি দলের নেতাদের টেক্সট বার্তায় মমতা জানিয়ে দেন, বাংলায় এ বার নতুন স্লোগান তুলতে হবে, ‘‘দিল্লি থেকে এলো রাম, সঙ্গে জুড়ে গেল বাম!’’

প্রশ্ন হল, সত্যিই কি উদ্বেগ নেই মমতার? এও কৌতূহলের বিষয়, রাম-বামকে একই অঙ্গে দুই রূপ হিসেবে তুলে ধরার বার্তা দিতে কেন এতো তাগিদ তৃণমূলের?

আরও পড়ুন:বাজিমাত শুভেন্দুর

দলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, উদ্বেগ থাকলেও তা প্রকাশ্যে না আনাই রাজনীতির দস্তুর। মমতা সেটাই করেছেন। তবে বাস্তব হল, তৃণমূলের এখন মূল চিন্তা, দলকে বর্তমান চেহারায় ধরে রাখা। দলের নিচুতলার এক শ্রেণির নেতা-কর্মীর মধ্যে যে ‘অপ্রাপ্তির’ অসন্তোষ রয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে প্রথম দিন থেকে তৃণমূল করেও যাঁরা সংগঠন বা সরকারে গুরুত্ব পাননি, তাঁরা ক্ষুব্ধ। বিজেপি এঁদের অনেককেই প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করলেও এত দিন তাঁদের মধ্যে দোদুল্যমানতা ছিল। কিন্তু দক্ষিণ কাঁথির ফলাফলের পর এঁরা নতুন করে বিজেপির প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখতে পারেন। দলের ওই নেতার কথায়, ‘‘এ ব্যাপারে মমতারও চিন্তা রয়েছে বলেই এ দিন নেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, ‘কর্মীদের আরও নরম হয়ে চলতে হবে’।’’ ভুললে চলবে না, ২০১১-র নির্বাচনে অনেক বামপন্থীও সিপিএমের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে মমতাকে ভোট দিয়েছিলেন।

বলা বাহুল্য বামেদের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থাও চিন্তায় রেখেছে তৃণমূলকে। শাসক দলের নেতাদের মতে, বামেরা কিছু ভোট ধরে রাখলে বিরোধী ভোটের ভাগাভাগিতে তৃণমূলের সুবিধা হওয়ারই কথা। কিন্তু ক্রমশ তারা যদি অবলুপ্তির পথে চলে যায়, তা হলে বিজেপির শক্তি বাড়বে। বড় কথা হল, বাম বিরোধিতা থেকেই তৃণমূলের জন্ম। দলের মতাদর্শ বলতে সেটাই। কিন্তু প্রতিপক্ষ হিসেবে সিপিএম যদি সামনে না থাকে, তা হলে নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে সেই জেদ আর থাকবে কি? তাঁরাও মেরুকরণের শিকার হয়ে যাবেন না তো! তাই পইপই করে এই বার্তা দিতে হবে, সিপিএম মরে নাই, বিজেপির শরীরেই ওঁদের আত্মা বেঁচে রয়েছে!

এ সব ছাড়া, সারদা-নারদ কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের গতি বাড়া এবং মেরুকরণ ‘অস্ত্রে’ বিজেপি যে আরও শান দেবে, সেটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে তৃণমূলকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC By-election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE