Advertisement
E-Paper

শ্যামলকে জনরোষ থেকে বাঁচিয়েছিলেন তৃণমূল নেতাই

বামনগাছি কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত শ্যামল কর্মকারের মাথায় শাসক দলের ছাতা থাকার অভিযোগ উঠেছিল গোড়াতেই। সেই অভিযোগ আরও জোরালো করল নিহত সৌরভ চৌধুরীর পরিবার। সোমবার দত্তপুকুর থানার আইসি-র কাছে সৌরভের দাদা সন্দীপের প্রশ্ন, এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য তুষার মজুমদার ওরফে বিশুকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? অভিযোগ, তুষারের প্রশ্রয়েই শ্যামল ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০২:৫৬
তুষার মজুমদার ওরফে বিশু ও শ্যামল কর্মকার

তুষার মজুমদার ওরফে বিশু ও শ্যামল কর্মকার

বামনগাছি কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত শ্যামল কর্মকারের মাথায় শাসক দলের ছাতা থাকার অভিযোগ উঠেছিল গোড়াতেই। সেই অভিযোগ আরও জোরালো করল নিহত সৌরভ চৌধুরীর পরিবার। সোমবার দত্তপুকুর থানার আইসি-র কাছে সৌরভের দাদা সন্দীপের প্রশ্ন, এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য তুষার মজুমদার ওরফে বিশুকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? অভিযোগ, তুষারের প্রশ্রয়েই শ্যামল ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।

তৃণমূল নেতারা অবশ্য ঘটনার পর থেকেই শ্যামলকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ খুনের পিছনে ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্ক দেখেছিলেন। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আবার বলেন, “শ্যামলকে লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির মিছিলে দেখা গিয়েছে।”

কিন্তু শ্যামল যে তুষারবাবুরই ঘনিষ্ঠ, তা এ দিনও জানিয়েছেন বামনগাছির বাসিন্দারা। এই প্রসঙ্গে উঠে এসেছে দিন পনেরো আগের একটি ঘটনার কথা। শ্যামল ও তার দলবলের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে বামনগাছি-কুলবেড়িয়ার বাসিন্দারা শ্যামলকে পাকড়াও করে মারধর করেছিলেন। অভিযোগ, সে সময় তুষারবাবুই ক্ষুব্ধ লোকজনের হাত থেকে তাকে বাঁচাতে এসেছিলেন। তিনি কথা দিয়েছিলেন, শ্যামল আর এলাকায় গোলমাল পাকাবে না। এলাকার মানুষের প্রশ্ন, শ্যামল যদি তাঁর ঘনিষ্ঠ না-ই হবে, তা হলে তুষারবাবু তাঁকে বাঁচাতে এসেছিলেন কেন? কেনই বা তার হয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন? এক বাসিন্দার কথায়, “শ্যামল যে তুষারের কথা শোনে, ওই আশ্বাসেই তার প্রমাণ মিলছে।”

এ ব্যাপারে তুষারবাবুর কী বক্তব্য?

তুষারবাবু এর আগেও দাবি করেছিলেন, তিনি শ্যামলকে মদত দিতেন না। তবে শ্যামল যে দুষ্কৃতী, তা তিনি জানেন। এ দিন স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের ব্যাপারে প্রশ্ন করতে তিনি বলেন, “ফোনে কিছু বলব না। আমার বাড়িতে আসুন।” সেখানে পৌঁছলে তিনি অন্য একটি বাড়িতে যেতে বলেন। সেই বাড়িতে যাওয়ার পরে ফের ফোন করেন তুষারবাবু। বলেন, তিনি ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “এখন কিছু বলব না। পরে সুযোগ পেলে বলব।”

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তুষার এক সময় এলাকার বাম-ঘনিষ্ঠ নেতা বাবুলাল দত্তের ছত্রচ্ছায়ায় ছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি নির্দল প্রার্থী হয়ে পঞ্চায়েত ভোটে জেতেন। পরে যোগ দেন তৃণমূলে। শ্যামলও এক সময় বাবুলালের শিবিরেই ছিল। তুষারের পরে সে-ও সরে আসে। যদিও বাবুলালের পরিবারের দাবি, তিনি কখনওই শ্যামলকে প্রশ্রয় দিতেন না।

এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, বাম আমলে শ্যামলের তেমন রমরমা ছিল না। কালু নামে এক দুষ্কৃতীই দাপট দেখাত। কালু খুন হওয়ার পরে সমরেশ ব্রহ্ম ক্ষমতা দখল করে। শ্যামল ধীরে ধীরে সমরেশের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তার পর ২০১২ সালে সমরেশকেই সে খুন করে। তখন থেকেই শ্যামলের মাথার উপরে তুষারের ছাতা আরও জাঁকিয়ে বসে বলে অভিযোগ।

সৌরভের মৃত্যুর পরে তাঁকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করে বিরাটি কলেজে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। কিন্তু পরে তাঁর বাড়ির লোকেরা জানিয়ে দেন, সৌরভ কোনও ভাবেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত নন। বরং পরিবারগত ভাবে তাঁরা বিজেপি-সমর্থক। এর পরেই তৃণমূল আর এই খুনের প্রতিবাদের ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি। তা ছাড়া, সৌরভ হত্যায় তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ শ্যামলের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় গোটা বিষয়টি কার্যত তাদের বিরুদ্ধে চলে যায়। ফলে গোড়ায় সৌরভকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করলেও সোমবার পর্যন্ত তাঁর বাড়িতে যাননি তৃণমূলের কোনও নেতাই।

বিরোধী দলের নেতারা সৌরভের বাড়িতে গেলেও, তৃণমূলের কেউ গেলেন না কেন? এই প্রশ্নে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের জবাব, “যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। তা নিয়ে রাজনীতি হবে কেন!” সৌরভের পরিবারের পক্ষ থেকে অবশ্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা তৃণমূলের নেতাদের বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না। এই অবস্থায় ১১ জুলাই বামনগাছিতে প্রতিবাদ সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল।

সৌরভের খুনের প্রতিবাদে মাঠে নামার কথা বললেও উত্তর ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূল সভাপতি ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক থেকে শুরু করে দলের ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা এবং অশোকনগরের বিধায়ক ধীমান রায় কিন্তু সোমবার সকাল থেকেই বলতে শুরু করেছিলেন যে, তাঁরা কয়েক জন বাসিন্দার কাছে থেকে জেনেছেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ নয়, এই খুনের পিছনে রয়েছে ত্রিকোণ প্রেম।

কিন্তু বিকেলে সমস্ত ঘটনা সামনে চলে আসার পর তাঁদের বক্তব্য বদলে যায়। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার পরে জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “ত্রিকোণ প্রেমের খবরটা ঠিক নয়। পুলিশ সূত্রে আমি জেনেছি, সৌরভ আসামাজিক কাজের প্রতিবাদ করেছিল। তারই বদলা নিতে ওকে খুন করা হয়েছে।”

পাশাপাশি প্রধান অভিযুক্ত শ্যামলের সঙ্গে যে তাঁদের দলের কোনও যোগ নেই তা বোঝাতে তিনি দাবি করেন, “শ্যামল আমাদের দলের নয়। ও নানা অসামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত। এর প্রতিবাদ করায় এক সময়ে আমাদের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং বিধায়ক চিরঞ্জিতকেও আক্রমণ করেছিল শ্যামল।”

এ দিন দিল্লি থেকে কাকলিদেবী অবশ্য জানান, ২০১০ সালে বামনগাছিতে চোলাই মদ ও সাট্টার ঠেক ভাঙার দাবিতে মিছিলের সময়ে এক দল দুষ্কৃতী তাঁদের আক্রমণ করেছিল। তবে সেই দলে শ্যামল ছিল কি না, তা তিনি জানেন না। তবে শ্যামল সিপিএমের এক স্থানীয় নেতার মদতে এলাকায় অসামাজিক কাজ করত বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন। আর চিরঞ্জিত ওই আক্রমণের ঘটনার কথা এ দিন মনে করতে পারেননি।

bishu tushar shyamal bamangachi murder saurabh chowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy